বিশ্ব

যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করলেন এরদোয়ান

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গাজা পরিকল্পনাকে ‘অপরিকল্পিত ও অন্যায্য’ আখ্যা দিয়ে তা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিগত অবস্থান ভুল হিসাব এবং তা এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

এরদোয়ান বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত যুক্তরাষ্ট্র আমাদের অঞ্চল সম্পর্কে ভুল হিসাব করছে। ইতিহাস, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যকে উপেক্ষা করে এমন কোনো দৃষ্টিভঙ্গি কারও থাকা উচিত নয়। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি জাতিকে জোরপূর্বক স্থানচ্যুত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।’

ট্রাম্পের প্রস্তাব ও বিতর্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি একটি পরিকল্পনা উত্থাপন করেছেন, যেখানে গাজার ফিলিস্তিনিদের মিশর ও জর্ডানে পুনর্বাসনের কথা বলা হয়েছে। তবে মিশর ও জর্ডান উভয় দেশই এই প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে। ট্রাম্পের পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো গাজা অঞ্চলকে মার্কিন তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসা, যেখানে ফিলিস্তিনিদের নিজ দেশে ফেরার কোনো অধিকার থাকবে না।

এরদোয়ান ট্রাম্পের এই পরিকল্পনাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূখণ্ডে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই জোরপূর্বক স্থানচ্যুতি অনুমোদন করা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। এটি হবে একটি সম্পূর্ণ নৃশংসতা এবং আমরা এটি মেনে নেব না।’

আরব বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে মিশর তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি জানিয়েছেন, ‘ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূখণ্ডেই থাকতে দিতে হবে এবং গাজার পুনর্গঠনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।’

জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহও গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের মার্কিন প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে তিনি জানান, ‘ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ না করেই গাজার পুনর্গঠন হবে এবং এ বিষয়ে আরব বিশ্ব দৃঢ়ভাবে একমত।’

তুরস্কের অবস্থান

তুরস্ক দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে কথা বলে আসছে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান আগেও ফিলিস্তিন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এবারও তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, ‘আমরা কখনোই ফিলিস্তিনিদের প্রতি অবিচার মেনে নেব না। মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে এরদোয়ানের কঠোর অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন আরও তীব্র হতে পারে।

এদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই পরিস্থিতির ওপর গভীর নজর রাখছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই সংকট নিরসনে নতুন করে আলোচনার আহ্বান জানাতে পারে।

ফিলিস্তিনি জনগণের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা কতটা কার্যকর হবে, তা এখন সময়ই বলে দেবে। তবে এরদোয়ানের হুঁশিয়ারির পর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন মোড় আসতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button