
হাইকোর্টের রুলের পর সরকার জানিয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেও এই উপাধি চান না। সরকার তার প্রতি সম্মান রেখেই এমন কোনো পরিকল্পনা হাতে নেয়নি বলে স্পষ্ট করেছে প্রেস উইং।
ঘটনার বিস্তারিত
সোমবার (১৪ জুলাই) হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রুল জারি করে জানতে চায়—ড. ইউনূসকে ‘জাতীয় সংস্কারক’ উপাধি দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না। এই রুল জারির পর মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, অধ্যাপক ইউনূস নিজেও চান না যে তাকে এ ধরনের কোনো রাষ্ট্রীয় উপাধি প্রদান করা হোক। সরকার তার ব্যক্তিগত অবস্থানকে সম্মান করে এবং এমন কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।
সরকার আরও জানায়, হাইকোর্টের আদেশের কপি হাতে পাওয়ার পর আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যথাসময়ে রুলের জবাব দেওয়া হবে।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত। তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক মুক্তির প্রতীক হিসেবে। দেশের মধ্যে নানা মতবিরোধ থাকলেও আন্তর্জাতিক মহলে তিনি এক সুপরিচিত মানবিক অর্থনৈতিক চিন্তাবিদ।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় তাঁর ভূমিকা অনেকের নজর কেড়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে এক ব্যক্তি রিট দায়ের করে তাকে ‘জাতীয় সংস্কারক’ হিসেবে ঘোষণা করার আবেদন করেন।
সরকার ও ইউনূসের অবস্থান
সরকার বলছে, তারা এই রিটের পিছনে আবেদনের যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছে না। এমনকি, রিট আবেদনকারী নিজে থেকেই এই উদ্যোগ নিয়েছেন বলেই মনে করছে সরকার। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে বিষয়টি পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, ড. ইউনূস নিজেও স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন—তিনি চান না এমন কোনো সরকারি উপাধি, যা রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিতে পারে বা কোনো পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি করে।
সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ মনে করছেন, ইউনূসের কাজের মূল্যায়ন হিসাবে একটি উপাধি সম্মানজনক হতে পারত। আবার অনেকেই বলছেন, রাষ্ট্রীয় উপাধি দেওয়ার সিদ্ধান্ত আদালতের নয়, রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের।
বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, এমন একটি পদক্ষেপ নিলে দেশে নতুন করে মতবিরোধ ও বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারত, যেটি এখনকার সময়ে কাম্য নয়।
বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া একটি কৌশলী সিদ্ধান্ত। এটি একদিকে যেমন রাজনৈতিক চাপ হ্রাস করে, অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেও সহায়তা করে।
বহু আন্তর্জাতিক সম্মাননা অর্জনকারী ইউনূসের মতো ব্যক্তিত্বকে একটি উপাধির মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। তার কাজের পরিধি উপাধির চেয়ে অনেক বেশি গভীর এবং বহুমাত্রিক।
“অধ্যাপক ইউনূস নিজেই এই উপাধিতে আগ্রহী নন, সরকারও তাকে নিয়ে এমন পরিকল্পনা করছে না”—সরকারি বিবৃতি
ঘটনার মূল সারাংশ
নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘জাতীয় সংস্কারক’ ঘোষণার বিষয়ে হাইকোর্টের রুল জারির একদিন পর সরকার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ইউনূস নিজেই এই ধরনের উপাধিতে আগ্রহী নন এবং সরকারও তার প্রতি সম্মান রেখেই এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি।
অধ্যাপক ইউনূসকে ‘জাতীয় সংস্কারক’ ঘোষণার বিষয়ে হাইকোর্টের রুল এখনো প্রক্রিয়াধীন। তবে সরকারের স্পষ্ট অবস্থান ও ইউনূসের নিজস্ব মতামত—দুটিই মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, এই উপাধি আপাতত কেবল একটি প্রস্তাবনা হিসেবেই থেকে যাচ্ছে। পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া ও আদালতের পর্যবেক্ষণের দিকেই এখন নজর সবার।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—রাষ্ট্রীয় সম্মাননা কি সবসময়ই প্রয়োজন, নাকি কর্ম নিজেই যথেষ্ট সম্মানের বাহক?
এম আর এম – ০৩৬১, Signalbd.com