মিউনিখে গাড়িচাপায় আহত ২৮, আফগান আশ্রয়প্রত্যাশী আটক

জার্মানির মিউনিখ শহরে আজ বৃহস্পতিবার সকালে এক ভয়াবহ গাড়িচাপার ঘটনায় অন্তত ২৮ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িটি ইচ্ছাকৃতভাবে একটি শ্রমিক সংগঠনের মিছিলে তুলে দেওয়া হয়। হামলার সন্দেহভাজন চালক আফগানিস্তান থেকে আসা এক আশ্রয়প্রত্যাশী।
ঘটনার বিবরণ
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিউনিখ শহরের কেন্দ্রস্থল ম্যাক্সভোরস্টাডট এলাকায় ‘ভেরডি’ শ্রমিক সংগঠনের একটি মিছিল চলছিল। প্রায় আড়াই হাজার মানুষের মিছিলের পেছনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের একটি গাড়ি ছিল। কিন্তু আচমকা একটি গাড়ি পুলিশের গাড়িকে পাশ কাটিয়ে মিছিলের পেছনের অংশে ঢুকে পড়ে এবং শ্রমিকদের ওপর উঠিয়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডের স্পিগেলের তথ্য অনুযায়ী, সন্দেহভাজন চালকের নাম ফরহাদ। ২৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি আফগানিস্তানের কাবুলে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০১৬ সালের শেষের দিকে জার্মানিতে আসেন। তাঁর শরণার্থী আবেদন নাকচ করা হলেও তাঁকে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়নি।
গ্রেপ্তার ও প্রাথমিক তদন্ত
ঘটনার পরপরই পুলিশ গুলি চালিয়ে গাড়িটিকে থামায় এবং ফরহাদকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করে। মিউনিখ পুলিশের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ফরহাদ হামলার আগে তথাকথিত ইসলামপন্থী কিছু পোস্ট করেছিলেন। তবে হামলার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য এখনো স্পষ্ট নয়।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও নিরাপত্তা সতর্কতা
আগামীকাল মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন শুরু হচ্ছে। এতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদরা, যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, অংশ নেবেন। এ ছাড়া আগামী সপ্তাহে জার্মানিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ পরিস্থিতিতে আজকের হামলাকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
বাভারিয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মার্কাস সোডার এই ঘটনাকে একটি উদ্দেশ্যমূলক হামলা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘এটি শুধু ভয়াবহ নয়, অত্যন্ত বেদনাদায়ক।’
অতীতের অনুরূপ ঘটনা
এমন ঘটনা জার্মানিতে নতুন নয়। গত বছরের ২০ ডিসেম্বর ম্যাগডেবুর্গ শহরের ক্রিসমাস মার্কেটে এক গাড়িচাপার ঘটনায় এক শিশুসহ ছয়জন মারা যান। সেই ঘটনায় সৌদি নাগরিক তালেব আল-আবদুল মোহসেনকে আটক করা হয়। ২০০৬ সালে শরণার্থী হিসেবে জার্মানিতে আসা এই ব্যক্তি ২০১৬ সালে শরণার্থী মর্যাদা পান।
এই দুটি ঘটনাই শরণার্থী ও অভিবাসন নীতির প্রতি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ আজকের ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিকে দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
শরণার্থী নীতির সমালোচনা
জার্মানিতে সাম্প্রতিক সময়ে শরণার্থী এবং অভিবাসন নীতির প্রতি সমালোচনা বেড়েছে। ২০১৫ সালে উদ্বাস্তু সংকটের সময় দেশটি লাখ লাখ শরণার্থী গ্রহণ করলেও সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো শরণার্থীদের প্রতি জনমতের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে।
বাভারিয়া রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়াোখিম হেরমান বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা আমাদের নিরাপত্তা নীতিমালা আরো কঠোর করার প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা হামলাকারীর উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারব না।’
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
আজকের ঘটনায় সাধারণ মানুষ শোকাহত এবং ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও শরণার্থী নীতির কঠোর সমালোচনা করছেন।
মিউনিখের পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে এবং নিরাপত্তা সম্মেলনের আগে শহরজুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।