বিশ্ব

ইউক্রেনের উল্লেখযোগ্য অংশ রাশিয়ার অংশ হতে চায়: ক্রেমলিন

ইউক্রেনের উল্লেখযোগ্য অংশ রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হতে চায় বলে মন্তব্য করেছে ক্রেমলিন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক এক মন্তব্যের পর ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এই বক্তব্য আসে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতি বহুলাংশে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিফলন। ট্রাম্প তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে ইউক্রেন “রাশিয়ার অংশ হয়ে যেতে পারে।”

স্থানীয় সময় সোমবার ফক্স নিউজে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি, একদিন ইউক্রেন রাশিয়ার অংশ হয়ে যেতে পারে। তবে এটি নির্ভর করছে পরিস্থিতির ওপর।” তাঁর এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

এমন এক সময়ে ট্রাম্প এই মন্তব্য করলেন, যখন তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্স আগামী সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ইতিহাস ও ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল দখল করে নেয় এবং এ অঞ্চলগুলোকে নিজেদের সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা দেয়। এই প্রসঙ্গ টেনে ক্রেমলিনের মুখপাত্র পেসকভ বলেন, “বাস্তবতা হলো, ইউক্রেনের একটি বড় অংশ রাশিয়ায় যুক্ত হতে চায় এবং ইতিমধ্যেই এটি হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নয়, তবে পরিস্থিতি যেকোনো দিকেই যেতে পারে।”

রাশিয়ার এই বক্তব্য ইউক্রেন ও পশ্চিমা মিত্রদের কাছে উদ্বেগজনক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। ইউক্রেনীয় সরকার বরাবরই বলে আসছে যে, তারা রাশিয়ার কোনো ভূখণ্ডগত দাবি মেনে নেবে না।

ট্রাম্প-পুতিন সম্ভাব্য আলোচনা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, তিনি যুদ্ধ বন্ধে সম্ভাব্য চুক্তির বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় প্রস্তুত। নিউইয়র্ক পোস্ট-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প ইতিমধ্যে ব্যক্তিগতভাবে পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। তবে এই ফোনালাপের বিষয়ে ক্রেমলিন কোনো মন্তব্য করেনি।

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন যে, তিনি ক্ষমতায় ফিরলে দ্রুত ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারবেন। তিনি বলেন, “ইউক্রেন একটি চুক্তি করতে পারে বা নাও করতে পারে। একদিন তারা রাশিয়ার হয়ে যেতে পারে, আবার তা নাও হতে পারে।”

যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত অবস্থান ও অর্থনৈতিক দিক

ট্রাম্প তাঁর সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার বিনিময়ে মুনাফা অর্জনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “আমরা যদি ইউক্রেনকে সাহায্য করি, তাহলে আমাদের কিছু ফিরে পাওয়া উচিত। বিরল খনিজসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের বাণিজ্য আমাদের নজরে রাখা দরকার।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছি, অথচ তাতে আমাদের কোনো লাভ নেই। ইউক্রেনের উচিত এই বিষয়ে আমাদের কিছু সুবিধা দেওয়া।”

ট্রাম্পের এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। ডেমোক্র্যাট নেতারা একে ইউক্রেনের প্রতি ট্রাম্পের অনাগ্রহের পরিচায়ক হিসেবে দেখছেন।

যুদ্ধের ভবিষ্যৎ ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা

তিন বছর ধরে চলা ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার হয়েছে। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং ন্যাটো-ভুক্ত দেশগুলো ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

এদিকে, ট্রাম্প তাঁর ইউক্রেনবিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে কেইথ কেলগকে নিয়োগ করেছেন। তিনি কেলগকে যুদ্ধ বন্ধে একটি রূপরেখা তৈরির দায়িত্ব দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গীকার কতটুকু অটল থাকবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

রাশিয়া ইতিমধ্যে দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। ইউক্রেনীয় বাহিনী এখনও এই অঞ্চলগুলোর পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আন্দ্রেই কোলেসনিকভ বলেন, “ট্রাম্প ক্ষমতায় ফিরলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন হতে পারে। এতে ইউক্রেনের বর্তমান কৌশল বাধাগ্রস্ত হতে পারে।”

অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ট্রাম্পের মন্তব্যকে অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা স্বাধীন জাতি। আমাদের জনগণ তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে, অন্য কেউ নয়।”

উপসংহার

উইক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা অব্যাহত রয়েছে। ক্রেমলিনের সাম্প্রতিক মন্তব্য যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল এই সংকটের সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের সম্ভাব্য দ্বিতীয় মেয়াদে ইউক্রেন-রাশিয়া সম্পর্কের গতিপথ নতুন দিকে মোড় নিতে পারে। তবে ইউক্রেনের জনগণ তাদের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button