সালমান রুশদির সন্দেহভাজন হামলাকারীর বিচার শুরু

ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক সালমান রুশদির ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক হাদি মাতারের বিচার শুরু হয়েছে। হাদি নিউজার্সির বাসিন্দা এবং ২৭ বছর বয়সী।
হামলার বিবরণ
২০২২ সালের ১২ আগস্ট নিউইয়র্কের শিটোকোয়া ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সালমান রুশদির ওপর হামলা চালানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারী মঞ্চে উঠে রুশদি ও তাঁর সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী ব্যক্তির ওপর হামলা চালান। রুশদির মুখমণ্ডলে ও ঘাড়ে বেশ কয়েকবার ছুরিকাঘাত করা হয়, যার ফলে তাঁর মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল।
হামলার পর রুশদি এক চোখের দৃষ্টি হারান এবং তাঁর একটি হাতের কর্মক্ষমতা চলে যায়।
গ্রেপ্তার ও বিচার
হামলার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে হাদি মাতারকে গ্রেপ্তার করে। তবে হাদি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা নিউইয়র্কের আদালতে হাদির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরেন এবং হামলার সময় ঘটে যাওয়া বিশৃঙ্খলার বিস্তারিত বর্ণনা দেন।
হাদির আইনজীবী জুরিদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “হাদিকে দোষী সাব্যস্ত করতে হলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের অবশ্যই যুক্তিসংগতভাবে তাঁদের অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে।”
অভিযোগ ও শাস্তির সম্ভাবনা
হাদির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তাঁর ৩০ বছরের বেশি কারাদণ্ড হতে পারে। প্রসিকিউটররা অভিযোগ করেন, হাদি কোনো ‘দ্বিধা ছাড়াই’ একটি ছুরি বের করে সালমান রুশদিকে ছুরিকাঘাত করেন, ফলে লেখকটি প্রায় মৃত্যুর মুখে চলে গিয়েছিলেন।
হামলার পেছনের কারণ
প্রসিকিউটররা আরও জানান, হামলা এতটা অতর্কিতে করা হয়েছিল যে রুশদি বুঝতেই পারেননি কী ঘটছিল। সালমান রুশদি ১৯৮১ সালে তাঁর লেখা বই ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন। কিন্তু ১৯৮৮ সালে তাঁর চতুর্থ বই ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর জন্য তাঁকে ৯ বছর আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল।
‘স্যাটানিক ভার্সেস’ উপন্যাসে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করেন মুসলিমরা। বইটি প্রকাশের এক বছর পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সালমান রুশদির মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন এবং তাঁর মাথার দাম হিসেবে ৩ মিলিয়ন (৩০ লাখ) ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
সালমান রুশদির ওপর হামলার ঘটনায় হাদি মাতারের বিচার শুরু হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি শুধু রুশদির জন্য নয়, বরং লেখক ও সাংবাদিকদের জন্যও একটি সতর্কবার্তা। লেখকদের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে।