বিশ্ব

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে ভারত ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার’

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে (National Security Strategy) ভারতকে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। হোয়াইট হাউস প্রকাশিত নথিতে অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা—এই তিনটি প্রধান খাতে নয়াদিল্লির সঙ্গে সহযোগিতা আরও গভীর করার স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে। নথিটিতে বলা হয়েছে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার এবং একটি ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল’ বজায় রাখার জন্য কোয়াডের মাধ্যমে ভারতের অব্যাহত সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। এই ঘোষণাটি আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে তুলে ধরেছে।

জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে ভারতের অবস্থান

হোয়াইট হাউস থেকে প্রকাশিত নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের নথিতে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ও নিরাপত্তা কাঠামোর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার: ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে শুধুমাত্র একটি অংশীদার নয়, বরং ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যা দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতা নির্দেশ করে।

সহযোগিতার ক্ষেত্র: নথিতে বিশেষভাবে অর্থনৈতিক সম্পর্ক, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও সহযোগিতা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা—এই তিনটি খাতে নয়াদিল্লির সঙ্গে সহযোগিতা আরও গভীর করার কথা বলা হয়েছে।

বাণিজ্যিক সম্পর্ক: দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর কূটনৈতিক গুরুত্ব দেয়ার কথা উল্লেখ করে নথিতে বলা হয়েছে, “আমাদের ভারতের সাথে বাণিজ্যিক (এবং অন্যান্য) সম্পর্ক উন্নত করতে হবে।”

এই কৌশলগত অবস্থান প্রমাণ করে যে, চীনকে মোকাবিলা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর ব্যাপক নির্ভর করছে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে কৌশলগত গুরুত্ব

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে ‘আগামী শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্র’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই অঞ্চলকে ‘বিশ্বের মোট জিডিপির প্রায় অর্ধেকের উৎস’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

কোয়াডের ভূমিকা: নথিতে অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে গঠিত কোয়াড (QUAD)-এর মাধ্যমে ভারতের অব্যাহত সহযোগিতা প্রত্যাশা করা হয়েছে। কোয়াড হলো ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা কাঠামো হিসেবে আবির্ভূত হওয়া চতুর্মুখী সহযোগিতা।

নৌচলাচলের স্বাধীনতা: ওয়াশিংটন এই গ্রুপটিকে ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল’ বজায় রাখা এবং গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র পথে নৌচলাচলের স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য অপরিহার্য হিসেবে দেখছে।

শোষণমূলক অর্থনৈতিক আচরণ: মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র ও অংশীদারদের সাথে কাজ করবে, যাদের সম্মিলিত অর্থনীতির আকার ৬৫ ট্রিলিয়ন ডলার। অঞ্চলজুড়ে ‘শোষণমূলক অর্থনৈতিক আচরণ’ মোকাবিলায় এ সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যও তুলে ধরা হয়েছে নথিতে।

প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি

যুক্তরাষ্ট্র এখন ভারতকে কেবল বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে দেখছে না, বরং গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত এবং সামরিক ক্ষেত্রেও একটি নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে দেখতে চায়।

প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা: চীন ও অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের সঙ্গে প্রযুক্তির দৌড়ে এগিয়ে থাকতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং শেয়ারিংয়ের বিষয়ে আগ্রহী।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতা: প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি, যৌথ সামরিক মহড়া এবং অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের মাধ্যমে দুই দেশের সামরিক বন্ধন আরও দৃঢ় হবে। এটি ভারতের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশলগত পুনর্মূল্যায়ন

ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে চিহ্নিত করার মাধ্যমে আঞ্চলিক কৌশলগত পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুনর্মূল্যায়ন করেছে। ট্রাম্প প্রশাসন শুরু থেকেই এশিয়ায় চীনের প্রভাব মোকাবিলায় আগ্রহী ছিল এবং এই কৌশলগত নথিতে সেই উদ্দেশ্যই স্পষ্ট হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই কৌশলগত অবস্থান শুধু ভারতকে নয়, বরং বাংলাদেশের মতো এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশকেও প্রভাবিত করবে। এই অঞ্চলে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর পরিকল্পনায় ভারতের গুরুত্ব এখন সর্বোচ্চ।

ইন্দো-প্যাসিফিকের কেন্দ্রবিন্দুতে নয়াদিল্লি

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে ভারতকে ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার’ হিসেবে চিহ্নিত করা এবং অর্থনীতি, প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা গভীর করার বার্তাটি বিশ্ব মঞ্চে নয়াদিল্লির ক্রমবর্ধমান প্রভাবের স্বীকৃতি। কোয়াড এবং বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের কেন্দ্রে ভারতকে স্থাপন করার মাধ্যমে ওয়াশিংটন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও চীনের প্রভাব মোকাবিলায় তাদের নির্ভরতার কথা স্পষ্ট করেছে। এই কৌশলগত অংশীদারিত্ব ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ককে আরও গতিশীল করে তুলবে।

এম আর এম – ২৫৩২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button