বাংলাদেশ

মারা গেছেন সাবেক সেনাপ্রধান হারুন অর রশিদ

Advertisement

চট্টগ্রাম ক্লাবের একটি কক্ষে সোমবার দুপুরে সাবেক সেনাপ্রধান হারুন অর রশিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে দেশের সামরিক এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

ঘটনা ও মৃত্যুর বিস্তারিত

সোমবার (৪ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম ক্লাবের একটি আবাসিক কক্ষে হারুন অর রশিদের মরদেহ পাওয়া যায়। তিনি একটি মামলার কাজে গত রবিবার চট্টগ্রাম যান এবং রাতে ক্লাবের গেস্টরুমে অবস্থান নেন। সকাল থেকে তিনি কক্ষের বাইরে না আসায় সন্দেহ হয় ক্লাব কর্তৃপক্ষের। পরে পুলিশ ও সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসক দল এসে তাঁর মরদেহ শনাক্ত করে।

কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল করিম জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে সিআইডি এবং পুলিশের একটি দল উপস্থিত ছিল এবং প্রাথমিকভাবে মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে মনে করা হচ্ছে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

হারুন অর রশিদের জীবনী ও পেশাগত অবদান

হারুন অর রশিদ ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন অভিজ্ঞ এবং দক্ষ কর্মকর্তা। দেশপ্রেম ও পেশাগত নিষ্ঠার জন্য তিনি ব্যাপকভাবে সমাদৃত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি “বীর প্রতীক” খেতাবে ভূষিত হন।

সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। অবসরের পর তিনি বাংলাদেশের একজন রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় ও সামরিক অঙ্গনে শোক

সাবেক সেনাপ্রধানের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সেনাবাহিনী প্রধান, বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপতির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “হারুন অর রশিদ দেশের একজন গর্বিত সন্তান ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশ এক অভিজ্ঞ ও নিবেদিতপ্রাণ সেনা কর্মকর্তাকে হারাল।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর শোকবার্তায় বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সামরিক প্রশাসনে তাঁর অবদান জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।”

হারুন অর রশিদের মুক্তিযুদ্ধ ও সম্মাননা

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন হারুন অর রশিদ। তিনি যুদ্ধকালীন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্টে নেতৃত্ব দেন এবং অসংখ্য সফল অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাকে “বীর প্রতীক” খেতাব প্রদান করা হয়, যা বাংলাদেশের অন্যতম সম্মানজনক সামরিক উপাধি।

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা-পরবর্তী রাষ্ট্র গঠনে তাঁর অবদানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে বই, প্রবন্ধ ও তথ্যচিত্র তৈরি হয়েছে।

ময়নাতদন্ত ও পরবর্তী ব্যবস্থা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে তাঁর মরদেহ পাঠানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ময়নাতদন্ত শেষে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। যদিও চিকিৎসকদের প্রাথমিক ধারণা, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ ঢাকায় নিয়ে আসা হবে এবং মিলিটারি গার্ড অব অনারসহ যথাযোগ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের আয়োজন করা হবে।

“হারুন অর রশিদ একজন সৎ, সাহসী এবং দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তা ছিলেন”—সেনাবাহিনীর বর্তমান প্রধান।

শেষ কথা 

চট্টগ্রাম ক্লাবের একটি কক্ষ থেকে সোমবার দুপুরে সাবেক সেনাপ্রধান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি একাই ছিলেন গেস্ট রুমটিতে। দীর্ঘক্ষণ বের না হওয়ায় ক্লাব কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দেয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে কক্ষ খুলে তাঁর নিথর দেহ পাওয়া যায়। চিকিৎসকদের প্রাথমিক ধারণা, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

হারুন অর রশিদের হঠাৎ মৃত্যু জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, অভিজ্ঞ সেনাপ্রধান এবং কূটনীতিক হিসেবে তাঁর অবদান চিরকাল স্মরণীয় থাকবে। এ মৃত্যু শুধু একটি পরিবার বা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং পুরো জাতির জন্য শোকের। তবে ময়নাতদন্তের পর হয়তো জানা যাবে মৃত্যুর আসল কারণ—দেশবাসী এখন সেই ফলাফলের অপেক্ষায়।

এম আর এম – ০৬৮৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button