বিশ্ব

বেনিনে রাষ্ট্রীয় টিভি দখল করে সরকার উৎখাতের ঘোষণা

Advertisement

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিনে একদল সেনা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে সরকার বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়েছে। তারা নিজেদের পরিচয় দিয়েছে ‘মিলিটারি কমিটি ফর রিফাউন্ডেশন’ নামে। এই সামরিক গোষ্ঠী দাবি করেছে, তারা দেশটির প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস ট্যালনকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে এবং রাষ্ট্রের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে দিয়েছে। তবে, একই সময়ে বেনিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওলুশেগুন আদজাদি বাকারি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এটি একটি অভ্যুত্থান চেষ্টা হলেও পরিস্থিতি এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাজধানী কটনউ এবং অন্যান্য এলাকা সম্পূর্ণ নিরাপদ আছে বলে প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে।

অভ্যুত্থান ঘোষণার বিস্তারিত: মিলিটারি কমিটি

সেনাবাহিনীর এই বিদ্রোহী দলটি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দেয়। সামরিক কমিটি ফর রিফাউন্ডেশন নামের এই গোষ্ঠী তাদের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা তুলে ধরে।

ক্ষমতাচ্যুতি: সেনা দলটি জানায়, বৈঠকের মাধ্যমে তারা সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস ট্যালন এখন আর দেশের রাষ্ট্রপ্রধান নন।

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বিলুপ্তি: তারা রাষ্ট্রের সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়ার দাবি করেছে।

নতুন প্রধান: এই সামরিক কমিটির প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে লেফটেন্যান্ট কর্নেল প্যাসকেল টিগ্রিকে

অভ্যুত্থান ঘোষণাকারী সেনারা আরও দাবি করেছে যে, তারা দেশের সব সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে এবং সব রাজনৈতিক দল স্থগিত করা হয়েছে। এই ঘোষণা পশ্চিম আফ্রিকার রাজনীতিতে নতুন করে সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা বাড়িয়েছে।

সরকারের প্রতিক্রিয়া: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে

বেনিন সরকার দ্রুত এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকে অস্বীকার করেছে এবং দাবি করেছে যে, দেশের পরিস্থিতি তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য: বেনিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওলুশেগুন আদজাদি বাকারি রয়টার্সকে জানান, এটি একটি অভ্যুত্থান চেষ্টা হলেও পরিস্থিতি এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি বলেন, “সেনাবাহিনী ও ন্যাশনাল গার্ডের একটি বড় অংশ এখনও প্রেসিডেন্টের প্রতি অনুগত এবং তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।”

প্রেসিডেন্টের দপ্তর: প্রেসিডেন্ট দপ্তরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস ট্যালন নিরাপদে আছেন এবং নিয়মিত সেনাবাহিনী ধীরে ধীরে পরিস্থিতির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাচ্ছে। প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটি একটি ছোট গোষ্ঠীর কাজ, যারা কেবলমাত্র রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। রাজধানী ও পুরো দেশ সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে।

তবে অভ্যুত্থান চেষ্টাকারী সেনারা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারায়, সরকারের নিয়ন্ত্রণের দাবি নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

আঞ্চলিক প্রভাব ও ফ্রান্সের সতর্কতা

পশ্চিম আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে (যেমন নাইজার, মালি ও বুরকিনা ফাসো) সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। বেনিনের এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

এই ঘটনার মধ্যেই ফ্রান্সের দূতাবাস এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি সতর্কতা জারি করে। তারা জানায়, প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনের কাছের ক্যাম্প গেজো এলাকায় কিছু বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া গেছে। ফ্রান্সের এই সতর্কতা রাজধানী কটনউতে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। ফ্রান্স, যা পশ্চিম আফ্রিকার অনেক সাবেক কলোনির ওপর প্রভাব বিস্তার করে, তারা দ্রুত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস ট্যালনের পূর্বপটভূমি

প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস ট্যালন ২০১৬ সাল থেকে বেনিনের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিতে আসা ট্যালনের বিরুদ্ধে অনেক সময় কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগ উঠেছে। তাঁর শাসনামলে বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা সীমিত করার অভিযোগ ছিল।

সামরিক কমিটির পক্ষ থেকে সরকার উৎখাতের মূল কারণ স্পষ্ট করা না হলেও, দেশের অর্থনৈতিক সংকট, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা এই ধরনের সামরিক অভ্যুত্থানের পটভূমি তৈরি করে।

সামরিক হস্তক্ষেপের শঙ্কা

বেনিনে রাষ্ট্রীয় টিভি দখল করে সরকার উৎখাতের ঘোষণা একটি স্পষ্ট সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার দাবি করা হচ্ছে, তবে সেনাবাহিনীর একটি অংশের বিদ্রোহ এবং রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া প্রমাণ করে যে, বেনিনের গণতন্ত্র গুরুতর ঝুঁকিতে রয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকার এই দেশটি আঞ্চলিক সামরিক হস্তক্ষেপের প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে তুলল। এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত বেনিনের সাংবিধানিক শাসন ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে দ্রুত কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা।

এম আর এম – ২৫২৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button