বিশ্ব

ভারতে নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: মৃত ২৩, আহত ৫০

Advertisement

ভারতের গোয়ার উত্তর অংশে একটি নাইটক্লাবে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। রোববার ভোরে স্থানীয় সময় এই আগুনে অন্তত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং দ্রুত উদ্ধারকাজ তদারকি করার নির্দেশ দিয়েছেন।

আগুনের কারণ: গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ শঙ্কা

পুলিশ ও উদ্ধারকর্মীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, আগুনের সূত্রপাত সম্ভবত ক্লাবের রান্নাঘরের একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে। স্থানীয় সময় শনিবার গভীর রাতে ঘটনার সময়, ক্লাবে প্রচুর মানুষ উপস্থিত ছিলেন। বিস্ফোরণের পর আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা শীঘ্রই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

ভারতের সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া (PTI) জানিয়েছে, “বার্চ বাই রোমিও লেন” নামের ক্লাবে এই বিস্ফোরণের কারণে আগুন লেগেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এএনআই সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, কয়েক ঘণ্টার তৎপর উদ্ধারকাজের পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

নিহত ও আহতের সংখ্যা

গোয়া পুলিশের মহাপরিচালক অলোক কুমার জানিয়েছেন, আগুনে মারা যাওয়া সকলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা এখনও গুরুতর। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা চলছে। আহতদের মধ্যে অনেকে দগ্ধ, এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ জীবন ঝুঁকিতে থাকতে পারে।

উদ্ধারকাজ ও প্রশাসনের তৎপরতা

প্রথম দিকের খবর অনুযায়ী, ক্লাবের ভেতরে আটক পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ এবং মেডিকেল টিম রাতভর কাজ করেছে। ঘটনাস্থলে রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত উদ্ধারকর্মীদের সাহসিকতা ও দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন।

“আমরা নিহতদের পরিবারকে সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদান করব এবং আহতদের দ্রুততম চিকিৎসার জন্য সব ব্যবস্থা নিয়েছি,” মুখ্যমন্ত্রী জানান। এছাড়া তিনি স্থানীয়দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, নিরাপত্তা নির্দেশিকা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।

গোয়ায় আগুনের ইতিহাস

গোয়া রাজ্যে কখনো কখনো নাইটক্লাবে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে, যদিও এটি বিরল। বিশেষ করে উৎসব এবং পার্টির সময়, নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব বা যান্ত্রিক ত্রুটি এ ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাইটক্লাবের ভিতরে যথাযথ অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা না থাকলে এমন দুর্ঘটনা খুব দ্রুত বড় আকার নেয়।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাতভর ক্লাবের ভিতরে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছিল। অনেক মানুষ জানালা ও দরজা দিয়ে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। “আমরা দেখেছি আগুন কত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, কেউ কিছু করতে পারছিল না,” এক স্থানীয় যুবক জানান।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কঠোর নিয়মনীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের খবর আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে সমবেদনা জানানো হচ্ছে। ভারতের দূতাবাসগুলো বিদেশে বসবাসরত নাগরিকদের সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছেন।

নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

গোয়া রাজ্যের প্রশাসন ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছে, রাজ্যের সমস্ত নাইটক্লাব ও পাব-এ অগ্নি নিরাপত্তা যাচাই করা হবে। বিশেষ করে রান্নাঘর এবং বৈদ্যুতিক সংযোগগুলোর নিয়মিত পরীক্ষা করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের দুর্ঘটনা কমাতে প্রতিটি নাইটক্লাবে সঠিক ফায়ার এক্সটিংগুইশার, অগ্নি নিকাশ পথ এবং জরুরি প্রস্থান পথ থাকা আবশ্যক। এছাড়া কর্মচারীদের নিয়মিত অগ্নি নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

মৃত ও আহতদের পরিচয়

প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে তরুণ-তরুণী প্রায় সবাই ২০–৩০ বছরের মধ্যে। তাদের অধিকাংশ স্থানীয় বা পর্যটক। আহতদের মধ্যে অনেকেই গুরুতর দগ্ধ, এবং তাদের মধ্যে কিছু হাসপাতালে ভর্তি। নিহতদের পরিবারকে দ্রুত সহায়তা এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা প্রশাসন জানিয়েছে।

সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব

গোয়ার পর্যটন শিল্প এই দুর্ঘটনায় প্রভাবিত হতে পারে। নাইটক্লাবগুলো পর্যটকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিনোদন কেন্দ্র। এই ধরনের দুর্ঘটনা নিরাপত্তার প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

পরবর্তী পদক্ষেপ

রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ কি ন্যূনতম নিরাপত্তা বিধি না মেনে তৈরি হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া ক্লাবের মালিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, যে বিনোদনের জায়গাগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে কোন ঝুঁকি নেয়া যায় না।

MAH – 14165 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button