পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ায় (কেপি) দুটি পৃথক গোয়েন্দা অভিযানে ভারত-সমর্থিত ‘ফিতনা আল-খাওয়ারিজ’ গোষ্ঠীর ৯ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে এই সফল অভিযানের তথ্য জানায়। জিও নিউজের খবরে এই তথ্য জানা যায়। নিহত এই সন্ত্রাসীরা নিরাপত্তা বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এবং নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে বহু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল বলে আইএসপিআর নিশ্চিত করেছে। এই সফল অভিযান পরিচালনার জন্য পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিরাপত্তা বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
গোয়েন্দা অভিযান ও নিহতের সংখ্যা
পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের দুটি জেলায় পৃথক অভিযান পরিচালনা করে: ট্যাংক এবং লাক্কি মারওয়াত।
- ট্যাংক জেলার অভিযান: নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসীদের অবস্থানকে কার্যকরভাবে লক্ষ্যবস্তু বানায় এবং তীব্র গোলাগুলির পর সাত সন্ত্রাসীকে হত্যা করে।
- লাক্কি মারওয়াত জেলার অভিযান: অপর এক অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনী আরও দুই সন্ত্রাসীকে হত্যা করে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
আইএসপিআর জানিয়েছে, নিহত ৯ জনই ছিল ভারত-সমর্থিত ‘খারিজ’ বা ‘ফিতনা আল-খাওয়ারিজ’ গোষ্ঠীর সদস্য। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। এই অভিযানটি পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীকে এই অঞ্চলে সন্ত্রাসী তৎপরতা দমনে একটি বড় সাফল্য এনে দিয়েছে।
ফিতনা আল-খাওয়ারিজ: ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ
আইএসপিআর নিহত এই সন্ত্রাসীদের ভারত-সমর্থিত হিসেবে উল্লেখ করেছে। ফিতনা আল-খাওয়ারিজ গোষ্ঠীটি পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে পরিচিত। পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে হামলা চালাচ্ছে এমন কিছু গোষ্ঠীকে ভারত মদদ দিচ্ছে।
তবে ইসলামাবাদের এই অভিযোগ আফগান তালেবান সরকার এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নাকচ করে দিয়েছে। এই ধরনের অভিযোগ আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি এবং ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের মধ্যে বিদ্যমান আস্থার অভাবকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। পাকিস্তান এই অভিযানকে ‘আজম–এ–ইস্তেহকাম’ নামে তাদের যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেখছে।
সন্ত্রাসীদের অপরাধ ও লক্ষ্যবস্তু
আইএসপিআর জানিয়েছে, নিহত ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসীরা নিরাপত্তা বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা এবং নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে বহু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এদের মধ্যে ছিল:
- হামলা: নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকিতে হামলা, অতর্কিত বন্দুক হামলা এবং বোমা বিস্ফোরণ।
- লক্ষ্য: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সদস্য এবং স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল।
এই সন্ত্রাসীরা দেশের অভ্যন্তরে ভীতি ও অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছিল। নিহত সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে নিরাপত্তা বাহিনী ট্যাঙ্কের অভিযানে সাতজন এবং লাক্কি মারওয়াতে দুজন সন্ত্রাসীকে হত্যা করে।
রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভিনন্দন ও অঙ্গীকার
ট্যাংক ও লাক্কি মারওয়াত জেলায় ফিতনা আল-খাওয়ারিজ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সফল দুটি গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক অভিযান পরিচালনার জন্য পাকিস্তানের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা নিরাপত্তা বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন:
- প্রেসিডেন্ট: আসিফ আলী জারদারি
- প্রধানমন্ত্রী: শাহবাজ শরিফ
- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: মোহসিন নাকভি
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতি নিরাপত্তা বাহিনীর পাশে আছে। দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি খাইবার পাখতুনখোয়ায় শান্তি ফিরিয়ে আনার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এই ধরনের রাজনৈতিক সমর্থন নিরাপত্তা বাহিনীর মনোবল বাড়াতে সহায়ক হবে।
২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনখাওয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে হামলার ঘটনা তীব্রভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই হামলার পেছনে টিটিপি (পাকিস্তানি তালেবান)-এর মতো গোষ্ঠীগুলো সক্রিয়।
আইএসপিআর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী গত ২৫ নভেম্বর জানিয়েছিলেন, চলতি বছর পাকিস্তানে মোট ৬৭ হাজার ২৩টি গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক অভিযান পরিচালিত হয়েছে—যার বেশিরভাগই কেপি ও বেলুচিস্তানে। নভেম্বর পর্যন্ত কেপিতে পরিচালিত ১২ হাজার ৮৫৭টি এবং বেলুচিস্তানে পরিচালিত ৫৩ হাজার ৩০৯টি গোয়েন্দা তথ্যভিত্তিক অভিযানে ১ হাজার ৮৭৩ সন্ত্রাসী হতাহত হয়েছে। এই পরিসংখ্যান দেশের নিরাপত্তা ঝুঁকিকে তুলে ধরে।
সন্ত্রাসবাদ দমনে ধারাবাহিকতা
খাইবার পাখতুনখোয়ায় ভারত-সমর্থিত ফিতনা আল-খাওয়ারিজ গোষ্ঠীর ৯ সন্ত্রাসীকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর সন্ত্রাস দমনের ক্ষেত্রে একটি বড় সাফল্য। আইএসপিআর জানিয়েছে, দেশে বিদেশি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সন্ত্রাসবাদ দূর করতে নিরাপত্তা বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী উদ্যোগ ‘আজম–এ–ইস্তেহকাম’ পূর্ণ উদ্যমে চলতে থাকবে। এই ধারাবাহিক অভিযান এবং রাজনৈতিক সমর্থন দেশের নিরাপত্তা স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।
এম আর এম – ২৫২১, Signalbd.com



