ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ৩৩ বছর পর পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙায় একই নামে মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নামকরণ নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘হিন্দুরা মন্দির বানাবেন, মুসলিমরা মসজিদ বানাবেন; তাতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু নামকরণে আপত্তি আছে। বাবরি মসজিদ নাম কেন।’ শুভেন্দু অধিকারীর এই বক্তব্য অযোধ্যার ঐতিহাসিক বিরোধের স্মৃতি উসকে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
শুভেন্দু অধিকারীর আপত্তির মূল কারণ
বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বাবরির নামকরণ নিয়ে তাঁর আপত্তির কারণ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। তিনি সরাসরি মোগল-পাঠানদের ভারত দখলের ইতিহাসের সঙ্গে এই নামকরণের সংযোগ টানেন।
শুভেন্দু অধিকারী বলেন:
“মোগল-পাঠানরা ভারত দখল করতে এসেছিল। অত্যাচার করেছে, জোর করে ধর্ম পরিবর্তন করেছে, মন্দির ভেঙেছে, মা-বোনেদের ইজ্জত লুটেছে। অতএব বাবরি নামকরণে প্রত্যেক ভারতীয়র আপত্তি থাকা উচিত। এই নামকরণকে কেউ সমর্থন করে না।”
তাঁর এই মন্তব্য বাবরকে একজন আগ্রাসী শাসক হিসেবে উপস্থাপন করে এবং সেই শাসকের নামাঙ্কিত কোনো কাঠামোকে ভারতীয় ঐতিহ্যের প্রতি আক্রমণ হিসেবে দেখায়। শুভেন্দু অধিকারীর এই বক্তব্য বিজেপির মূল হিন্দুত্ববাদী ও জাতীয়তাবাদী আদর্শকে প্রতিফলিত করে।
মুর্শিদাবাদের ঘটনা ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় ১৫২৮ সালে মীর বাকি কর্তৃক নির্মিত বাবরি মসজিদটি ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভেঙে ফেলা হয়েছিল। সেই ঘটনার ৩৩ বছর পর পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙায় নতুন করে একই নামে একটি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
মসজিদের নামকরণ ‘বাবরি মসজিদ’ হওয়ায় হিন্দুত্ববাদী সংগঠন এবং স্থানীয় বিজেপি নেতারা এর তীব্র বিরোধিতা করছেন। বেলডাঙায় মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়ভাবে যেন কোনো প্রকার সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা না ছড়ায়, সে জন্য রাজ্য প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের নামকরণ রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল হওয়ায় এর প্রতিক্রিয়া ছিল প্রত্যাশিত।
কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ ও রাজ্য প্রশাসনের তৎপরতা
মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুর্শিদাবাদে যেন কোনোভাবেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা না ছড়ায়, সে জন্য কলকাতা হাইকোর্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন। আদালত রাজ্য প্রশাসনকে ‘যা যা করা দরকার তা করতে’ এবং যেকোনো অশান্তি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
এই প্রেক্ষাপটে রাজ্য প্রশাসন নিরাপত্তার ব্যাপারে সম্পূর্ণভাবে সতর্ক রয়েছে। রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত আদালতকে জানিয়েছেন, যেকোনো অশান্তি রোধে পর্যাপ্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। প্রশাসনের এই তৎপরতা সাম্প্রদায়িক সংঘাত এড়াতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের উসকানিমূলক মন্তব্য সত্ত্বেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা চলছে।
এম আর এম – ২৫০৮, Signalbd.com



