বাংলাদেশ

এনসিপিসহ তিন রাজনৈতিক দল যেসব প্রতীক পাচ্ছে

Advertisement

নির্বাচন কমিশন (ইসি) তিনটি নতুন রাজনৈতিক দলকে প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) এ সুযোগ পেয়েছে। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কমিশন গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে দলগুলোকে তাদের নির্দিষ্ট প্রতীক বরাদ্দ দেয়।

বরাদ্দকৃত প্রতীক ও প্রক্রিয়ার বিস্তারিত

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পেয়েছে ‘শাপলা কলি’, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি পেয়েছে ‘হ্যান্ডশেক’ এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) পেয়েছে ‘কাঁচি’ প্রতীক।

ইসি জানায়, এই তিন দলের নিবন্ধনের বিষয়ে যদি কারও আপত্তি থাকে, তবে তারা ১২ নভেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় দলিলসহ লিখিতভাবে তা কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিবের নিকট জমা দিতে পারবেন। কমিশন উত্থাপিত আপত্তি নিষ্পত্তি করে ১৪–১৫ নভেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত নিবন্ধন গেজেট প্রকাশ করবে।

রাজনৈতিক দলের প্রেক্ষাপট ও পরিচয়

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুনভাবে আত্মপ্রকাশ করে। দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এবং সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নাম সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। দলটি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়।

বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি পূর্বে ‘বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি’ নামে আত্মপ্রকাশ করেছিল। তবে কাছাকাছি নামের অন্য দলের আপত্তির কারণে নাম পরিবর্তন করা হয়। এই দল মূলত নতুন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জনমুখী কর্মকাণ্ডের জন্য পরিচিত।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) ২০১৩ সালে বাসদ থেকে কিছু কেন্দ্রীয় নেতার বেরিয়ে আসার পর গঠিত হয়। মুবিনুল হায়দার চৌধুরী আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দলটি সমাজতান্ত্রিক আদর্শের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।

নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও আইনি শর্ত

নিবন্ধন প্রক্রিয়ার জন্য প্রতিটি দলকে কেন্দ্রীয় কমিটি, এক-তৃতীয়সংখ্যক জেলা কমিটি এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা কমিটি গঠন করতে হবে। প্রতিটি কমিটিতে ন্যূনতম ২০০ জন ভোটারের সমর্থন প্রমাণ করতে হয়।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে ২২ দলকে মাঠ পর্যায়ের তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে এনসিপি ও বাংলাদেশ জাতীয় লীগের নিবন্ধন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরপর অধিকতর তদন্তে ১০টি দলকে পুনঃপর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়।

প্রভাব ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নতুন দলগুলোর নিবন্ধন রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৈচিত্র্য বৃদ্ধি করবে। নির্বাচনী মাঠে নতুন শক্তি হিসেবে এদের উপস্থিতি ভোটের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।

দলের নেতারা জানিয়েছেন, “আমাদের প্রতীক পাওয়ার পর আমরা সকল প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। জনগণের আশা ও আস্থা অর্জনই মূল লক্ষ্য।” বিশেষজ্ঞরা বলেন, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন নির্বাচনকে আরও প্রতিযোগিতামূলক এবং জনমুখী করবে।

পূর্বের উদাহরণ ও পরিসংখ্যান

বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২-এর ৯০(খ) অনুচ্ছেদের আওতায় পরিচালিত হয়। ২০১৫ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ৫০টিরও বেশি নতুন দল ইসির মাধ্যমে নিবন্ধিত হয়েছে।

নিবন্ধিত দলগুলো মূলত স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক মানচিত্রে নতুন ধারা সৃষ্টি করে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নতুন দলগুলো জনগণের কাছে স্বতন্ত্র রাজনৈতিক বিকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।

মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. রাশিদুল ইসলাম বলেন, “নতুন দলের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার ফলে ভোটাররা সহজেই দলগুলোকে চিনতে পারবে। প্রতীক নির্বাচনে দলের পরিচয় বহন করে এবং ভোটারদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।”

অন্য বিশ্লেষক রুবিনা খাতুন বলেন, “নিবন্ধন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও আইনি শর্ত পূরণ করা নির্বাচনকে আরও কার্যকর ও সুষ্ঠু করবে। নতুন দলগুলো যদি জনগণের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে, তবে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি পাবে।”

নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এনসিপি, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) এখন আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বীকৃত। বরাদ্দকৃত প্রতীকগুলো এই দলগুলোর পরিচয় বহন করবে এবং আগামী নির্বাচনে তাদের কার্যক্রমকে আরও দৃশ্যমান করবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নতুন দলগুলোর সক্রিয়তা এবং নির্বাচনী প্রচারণা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন দিকনির্দেশনা তৈরি করবে। আপত্তি নিষ্পত্তির পর চূড়ান্ত নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ভোটারদের কাছে এদের উপস্থিতি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

এম আর এম – ২০৮৯,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button