বিশ্ব

গাজ্জা গণহত্যা নীরবতা লজ্জাজনক, ফিলিস্তিনের পাশে থাকার আহ্বান

Advertisement

ফিলিস্তিনের গাজ্জা উপত্যকায় ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের পরিচালিত অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের চলমান হত্যাযজ্ঞ ও গণহত্যা নিয়ে নীরব থাকা লজ্জাজনক বলে সতর্ক করেছেন ওমানের গ্র্যান্ড মুফতী শেখ আহমদ আল-খলিলি। তিনি বিশ্বের স্বাধীন ও ন্যায়পরায়ণ জনগণকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান এবং তৎপরতার সঙ্গে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার গুরুত্বে জোর দেন।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি বার্তায় তিনি বলেন, “গাজ্জা উপত্যকার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আগ্রাসন চলছেই, বিশেষ করে রাফাহ অঞ্চলে মানুষের ওপর অবরুদ্ধ অবস্থায় হামলা অব্যাহত রয়েছে। সাম্প্রতিক চুক্তিও কোনো ইতিবাচক ফল আনতে সক্ষম হয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নীরব থাকা লজ্জাজনক। এখন প্রশ্ন, এই সমস্যা আর কতদিন চলতে থাকবে?”

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা উদ্বেগজনক

শেখ আহমদ আল-খলিলি আরও উল্লেখ করেন যে, আলোচনায় যুক্ত দেশগুলোর নীরবতা বিস্ময়কর। তিনি গাজ্জায় হামলা বন্ধে জরুরি আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে আলোচনায় যুক্ত দেশগুলোর তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, এমনকি ইসলামি দেশগুলোর নীরবতা আমাকে বিস্মিত করেছে।”

বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার সংস্থা ও বিশ্লেষকরা এই নীরবতা কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন। আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গাজ্জায় ইসরায়েলের চলমান হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।

গাজ্জায় ইসরায়েলের আগ্রাসন: বাস্তব চিত্র

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে আমেরিকা ও কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের সমর্থনে ইসরায়েল গাজ্জা উপত্যকায় বিপুল গণহত্যা চালাচ্ছে। এতে হত্যার সংখ্যা, আহত ও নিখোঁজের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসযজ্ঞ

  • ফিলিস্তিনি নিহত: প্রায় ২ লাখ ৪১ হাজার, যাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
  • নিখোঁজ: ১১ হাজারের বেশি।
  • বাস্তুহারা: লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়েছে।
  • ধ্বংস: শহর ও জনপদ প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস।
  • দুর্ভিক্ষ ও মানবিক সংকট: বহু শিশু সহ সাধারণ মানুষের প্রাণহানি।

ইসরায়েল নির্বিচারে গ্রেপ্তার অভিযান, অবরোধ, খাদ্য ও ওষুধের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে ফিলিস্তিনিদের ওপর মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করছে।

গাজ্জার নগর চিত্র

গাজ্জার বহু শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। হাসপাতাল, স্কুল, বাড়ি, রাস্তাঘাট — সবই ক্ষতিগ্রস্ত। বহু পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে আশ্রয়হীন। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যদি দ্রুত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে গাজ্জায় মানবিক সংকট আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।

শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, মানবাধিকার কর্মী এবং স্থানীয় সংগঠনগুলো সতর্ক করেছেন, গাজ্জার শিশুদের জন্য খাদ্য ও নিরাপদ আশ্রয়ের প্রয়োজন অত্যন্ত জরুরি।

ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়াতে বিশ্বকে আহ্বান

শেখ আহমদ আল-খলিলি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করে বলেন, “ফিলিস্তিনিদের ওপর অব্যাহত গণহত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধ করতে বিশ্বের স্বাধীন জনগণকে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। নীরব থাকা মানে সহিংসতার স্বীকৃতি দেওয়া।”

তিনি আরও বলেন, “ফিলিস্তিনের মানবিক বিপর্যয় রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নিন। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আইনি ও মানবিক প্রয়াস চালাতে হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভিক্ষ ও বিপর্যয় অব্যাহত থাকবে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

গাজ্জার মানবিক বিপর্যয় নিয়ে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

  • জাতিসংঘ: গাজ্জায় মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর জন্য তৎপর।
  • ইউনিয়ন অব ইসলামিক স্টেটস: ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান।
  • মানবাধিকার সংস্থা (HRW, Amnesty): ইসরায়েলের চলমান হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি দ্রুত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়, তবে গাজ্জায় মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর হবে এবং এটি আন্তর্জাতিক সংঘাতের সূত্রপাত করতে পারে।

ফিলিস্তিনের মানবিক দিক

ফিলিস্তিনিদের জীবনমান এখন অত্যন্ত বিপর্যস্ত।

  • হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র: ধ্বংসপ্রায়, ওষুধ সরবরাহ কম।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বন্ধ বা ক্ষতিগ্রস্ত।
  • খাদ্য ও পানি: মারাত্মক সংকট।
  • শিশু ও নারী: সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, যদি অবিলম্বে মানবিক সহায়তা না পৌঁছে, তবে আগামী কয়েক মাসে মৃত্যুহার বাড়তে পারে।

বিশ্ব সম্প্রদায়ের নীরবতা: উদ্বেগ ও সমালোচনা

গাজ্জার মানবিক বিপর্যয়কে বিশ্ব সম্প্রদায়ের অলসতা ও নীরবতা হিসেবে সমালোচনা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের হামলা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে মানবতার প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের দায়িত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

ওমানের গ্র্যান্ড মুফতী শেখ আহমদ আল-খলিলি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন: গাজ্জায় গণহত্যা ও মানবিক বিপর্যয় চলছেই, এবং এ সময় নীরব থাকা লজ্জাজনক। তিনি বিশ্বকে সতর্ক করেছেন, ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবী। দ্রুত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ না নিলে, মানবিক বিপর্যয় আরও বাড়বে এবং অনেক শিশুর জীবন বিপন্ন হবে।

ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ানো, আন্তর্জাতিক আইন রক্ষা এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া এখন নৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় দিক থেকে জরুরি। বিশ্ব সম্প্রদায়ের তৎপরতা গাজ্জার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।

MAH – 14143 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button