ভারতের রাজস্থান প্রদেশে অবস্থিত বিখ্যাত সুফি দরগাহ আজমির শরিফ-এ বোমা হামলার হুমকি সম্বলিত একটি ই-মেইল পাওয়ার পর সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আজমির জেলা প্রশাসন বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) এই ই-মেইলটি পায়। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, কালেক্টোরেটে আসা ই-মেইলটিতে আজমির শরিফ, কুদানকুলাম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং কালেক্টোরেট—এই তিন স্থানেই বোমা হামলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, হুমকিসূচক ই-মেইলটিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। আজমিরের পুলিশ কর্মকর্তা বন্দিতা রানা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভারত সফরের ঠিক আগে এই বোমা হামলার হুমকি দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে।
বিস্তারিত: তিন স্থান ও আরডিএক্স
আজমির জেলা প্রশাসন ই-মেইলটি পাওয়ার পরপরই সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে সতর্ক করেছে। আজমিরের কালেক্টোরেট চত্বর পুরোপুরি তল্লাশি করা হয়েছে এবং দরগাহ এলাকা খালি করে এখন সেখানে ব্যাপক তল্লাশি চলছে। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো সন্দেহজনক বস্তু উদ্ধার হয়নি।
পুলিশ সূত্র জানায়, হুমকিসূচক ই-মেইলটিতে দাবি করা হয় যে, দরগাহে আরডিএক্স ও আইইডি (Improvised Explosive Device) ব্যবহার করে বিস্ফোরণ ঘটানো হবে। ই-মেইলটিতে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে, আজমির শরিফ, কুদানকুলাম পারমাণবিক কেন্দ্র এবং কালেক্টরের অফিস—এই তিন স্থানে চারটি আরডিএক্স ও আইইডি পুঁতে রাখা হয়েছে। এই ধরনের সুনির্দিষ্ট হুমকির কারণে নিরাপত্তা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে।
পুতিনের নাম উল্লেখ ও বিস্ফোরণের সময়
বোমা হামলার হুমকি সম্বলিত ই-মেইলে সবচেয়ে গুরুতর বিষয় হলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নাম উল্লেখ করা। ই-মেইলটিতে বলা হয়:
“পুতিন আসার সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণ ঘটবে।”
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট পুতিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে পা রাখার কথা ছিল। তিনি ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে এই সফর করছেন। এদিন রাতে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এক নৈশভোজে অংশ নেবেন এবং পরের দিন রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে স্বাগত জানানো হবে। পুতিনের সফরের সঙ্গে এই হামলার হুমকির সংযোগ থাকায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এটিকে চরম গুরুত্ব দিচ্ছে।
পুতিনের ভারত সফরের সূচি
প্রেসিডেন্ট পুতিনের দুই দিনের ভারত সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর সফরের বিস্তারিত সূচি:
- ৪ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার): সন্ধ্যায় ভারতে আগমন এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে নৈশভোজে অংশগ্রহণ।
- ৫ ডিসেম্বর (শুক্রবার): রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো, রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানো, হায়দরাবাদ হাউসে ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দেওয়া এবং ভারত মণ্ডপমে এক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া। এদিন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর ভোজসভাতেও অতিথি থাকবেন তিনি।
পুতিনের সফরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত সরকার কমান্ডো, ড্রোন ও স্নাইপারসহ সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। এই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা প্রটোকল আরও কঠোর করা হয়েছে।
রাশিয়ার সামরিক চুক্তি ও কূটনৈতিক পটভূমি
প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভারত সফরের আগে দুই দেশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক চুক্তি রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ডুমা অনুমোদন করেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের সরকার দ্য রেসিপ্রোকাল এক্সচেঞ্জ অব লজিস্টিকস সাপোর্ট চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল।
ট্রাম্পসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার সমালোচনা করলেও, ভারত রাশিয়ার সঙ্গে তাদের কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রেখেছে। সামরিক চুক্তিতে বলা হয়েছে, রাশিয়া থেকে ভারতে এবং ভারত থেকে রাশিয়ায় কীভাবে সেনা, যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান যাবে তার পদ্ধতি বলা হয়েছে এবং একে অন্যকে সামরিক রসদ সরবরাহের বিষয়টিও চুক্তিতে রয়েছে। ডুমার স্পিকার ভি ভোলোডিন এই চুক্তিকে দুই দেশের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন। পুতিনের ভারত সফরের আলোচনায় সামরিক সহযোগিতা ও ভূ-রাজনীতির বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও তদন্তের গতি
আজমিরের পুলিশ কর্মকর্তা বন্দিতা রানা নিশ্চিত করেছেন, হুমকির পর নিরাপত্তা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে। দরগাহ এলাকা খালি করে দেওয়ার পাশাপাশি পুলিশ চত্বরজুড়ে ব্যাপক তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ই-মেইলটির উৎস এবং হামলাকারীদের চিহ্নিত করার জন্য কাজ করছে।
কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও হুমকির তালিকায় থাকায় সেখানকার নিরাপত্তা বহু গুণ বাড়ানো হয়েছে। এই ধরনের হুমকি সাধারণত দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা করার জন্য অথবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য দেওয়া হয়ে থাকে। তদন্তের মূল লক্ষ্য হলো এই হুমকির পেছনে কোনো আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী নাকি স্থানীয় কোনো চক্রের হাত রয়েছে, তা উদঘাটন করা।
জাতীয় নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ
আজমির শরিফসহ তিন স্থানে বোমা হামলার হুমকি এবং তাতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নাম উল্লেখ থাকা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পুতিনের গুরুত্বপূর্ণ সফরের আগে এই ধরনের হুমকি প্রমাণ করে যে, দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী বা অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে। এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং পুতিনের সফরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ভারত সরকারের জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এই নিরাপত্তা হুমকি সত্ত্বেও দুই দেশের বার্ষিক সম্মেলন নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী এগিয়ে যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
এম আর এম – ২৫০১, Signalbd.com



