বিশ্ব

দনবাস দখলে নিয়েই ছাড়বে রাশিয়া, ‘বলপ্রয়োগের’ হুমকি পুতিনের

Advertisement

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে মার্কিন আলোচকদের সঙ্গে বৈঠককে ‘খুবই ফলপ্রসূ’ বললেও, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজের অবস্থানে অটল থাকার পরিষ্কার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বলপ্রয়োগ’ করে ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চল দখলে নেওয়ার পরিকল্পনা থেকে তিনি এখনও সরে আসেননি। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ভারত সফরের আগে দেশটির টিভি চ্যানেল ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন এই মন্তব্য করেন। পুতিনের এই কঠোর অবস্থান ইঙ্গিত দেয় যে, মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফজ্যারেড কুশনারের সঙ্গে আগের দিনের আলোচনায় কোনো স্থায়ী সমঝোতা হয়নি এবং রাশিয়া ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড দখল বজায় রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

দনবাস দখলে পুতিনের কৌশল: বলপ্রয়োগের ঘোষণা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সর্বশেষ মন্তব্য ইউক্রেন যুদ্ধ সমাপ্তির বিষয়ে তাঁর কৌশলগত অবস্থানকে পুনর্বার নিশ্চিত করেছে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলকে সম্পূর্ণভাবে রুশ নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।

ইন্ডিয়া টুডে-কে দেওয়া পুতিনের সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা তাস-এ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে পুতিন বলেছেন:

“আসল কথা হচ্ছে, আমরা হয় বলপ্রয়োগে এসব অঞ্চল মুক্ত করব অথবা ইউক্রেনীয় সেনারা এসব এলাকা ছেড়ে লড়াই বন্ধ করবে।”

পুতিনের এই ঘোষণা নির্দেশ করে যে, রাশিয়া সামরিক শক্তি ব্যবহার করে দনবাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রস্তুত। এই অঞ্চলটি ২০১৪ সাল থেকে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে দীর্ঘ আট বছর ধরে সংঘর্ষের কেন্দ্র ছিল এবং ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুতিন এখানে ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করেন।

মার্কিন আলোচকদের সঙ্গে বৈঠক: সমঝোতার অভাব

পুতিন তাঁর সাক্ষাৎকারে মার্কিন আলোচকদের সঙ্গে বৈঠককে ‘খুবই ফলপ্রসূ’ বললেও, তাঁর পরবর্তী কঠোর মন্তব্য প্রমাণ করে যে, এই আলোচনায় কোনো স্থায়ী সমঝোতা হয়নি। মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে তাঁর আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা এবং শান্তিচুক্তির কাঠামো নিয়ে আলোচনা করা।

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন যে, রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার পর উইটকফ ও কুশনারের মনে হয়েছে, পুতিন যুদ্ধ শেষ করতে চান। তবে পুতিনের দনবাসে বলপ্রয়োগের এই নতুন হুমকি ট্রাম্পের সেই বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটি আন্তর্জাতিক মহলে শান্তি আলোচনা এবং রাশিয়ার আসল উদ্দেশ্য নিয়ে নতুন করে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।

শান্তিচুক্তির কাঠামো: রাশিয়ার প্রধান দাবি

সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির কাঠামো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় রাশিয়া বারবার তাদের প্রধান দাবির কথা জানিয়েছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা পুরো দনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ চায়। এই দাবির বিপরীতে রাশিয়া চায় ওয়াশিংটন অনানুষ্ঠানিকভাবে তা মেনে নিক। দনবাসের বিস্তৃত শিল্পাঞ্চল পুরোপুরি দখলে নেওয়ার জন্য রাশিয়া পোকরোভস্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতেও সামরিক চাপ বাড়াচ্ছে।

পুতিনের বক্তব্য অনুযায়ী, রাশিয়া তাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখবে যতক্ষণ না ইউক্রেনীয় সেনারা এসব এলাকা ছেড়ে লড়াই বন্ধ করে। রাশিয়ার এই অবস্থান প্রমাণ করে, ভূখণ্ডগত ছাড় দেওয়ার বিষয়ে মস্কো কোনো প্রকার আপস করতে রাজি নয়।

ইউক্রেনের অবস্থান: ভূখণ্ড হস্তান্তর নিষিদ্ধ

রাশিয়ার এই কঠোর অবস্থানের মুখে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও তাঁর অবস্থানে অটল। ইউক্রেন বারবার বলেছে, তাঁদের হাতে ইউক্রেনের ভূমি ছেড়ে দেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই এবং রাশিয়াকে আগ্রাসনের বিনিময়ে পুরস্কৃত করা উচিত নয়। ইউক্রেনের সংবিধানেও কোনো ভূখণ্ড হস্তান্তর নিষিদ্ধ

রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ এবং অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে চাপে থাকা জেলেনস্কি সরকার আন্তর্জাতিক সমর্থন বজায় রাখতে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ইউক্রেনীয় সেনাপ্রধানরা জানিয়েছেন, তাঁদের বাহিনী শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলছে এবং রাশিয়ার নতুন হামলার চেষ্টা ব্যর্থ করে দিচ্ছে।

মার্কিন কূটনীতির পরবর্তী ধাপ

রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার পর এখন মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধি দলটি বৃহস্পতিবার ফ্লোরিডায় ইউক্রেনের প্রধান আলোচক রুস্তেম উমেরভের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

এই বৈঠকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানে রুশ আলোচনার বিষয়বস্তু এবং দনবাসে রাশিয়ার বলপ্রয়োগের হুমকির পর ইউক্রেনের অবস্থান নিয়ে আলোচনা হবে। যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী এই সংঘাতের শান্তি-সমাধান খুঁজতে মধ্যস্থতার চেষ্টা করছে। দুই পক্ষই ময়দানে নিজেদের শক্ত অবস্থান দেখাতে চাইছে, যা শান্তি আলোচনাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

শান্তি আলোচনার পথে বড় বাধা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দনবাস দখলে বলপ্রয়োগের হুমকি এবং শান্তি আলোচনায় নিজেদের অটল অবস্থানের ঘোষণা এই সংঘাত নিরসনের পথে একটি বড় বাধা। ইউক্রেন ভূখণ্ড হস্তান্তর নিষিদ্ধ করায় এবং রাশিয়া সামরিক শক্তি প্রয়োগে অনড় থাকায়, কূটনৈতিক সমাধান প্রক্রিয়াটি আপাতত স্থবির হয়ে পড়েছে। মস্কোর এই কঠোরতা মার্কিন নেতৃত্বাধীন শান্তি প্রচেষ্টার জন্য একটি বড় পরীক্ষা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ থামাতে কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া।

এম আর এম – ২৪৯৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button