
আফগানিস্তান ও তাজিকিস্তানের মাঝে দীর্ঘদিনের উত্তেজনার মধ্যেও দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাম্প্রতিক আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন গতি পেয়েছে। ইসলামিক এমিরেট অব আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুততাকি তাঁর তাজিক সমকক্ষ সিরোজিদ্দিন মুহরিদ্দিনের সঙ্গে এক ফোনালাপে জানান, কাবুল ও দুশানবের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা পূর্বের তুলনায় আরও শক্তিশালী হচ্ছে। তবে তিনি সতর্ক করেন, কিছু শক্তি এই অগ্রগতি ব্যাহত করার চেষ্টা করছে।
চীনা নাগরিকদের ওপর হামলা ও যৌথ নিরাপত্তা উদ্যোগ
তাজিকিস্তানে চীনা নাগরিকদের ওপর সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী হামলা দুই দেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। এই ঘটনায় পাঁচজন চীনা নাগরিক নিহত ও কয়েকজন আহত হওয়ার পর তাজিকিস্তান দাবি করে যে হামলাকারীরা আফগান ভূখণ্ড থেকে এসেছে। মুততাকি এ ঘটনার নিন্দা জানান এবং বলেন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাবুল যৌথ তদন্ত ও সমন্বয় করতে প্রস্তুত।
ইসলামিক এমিরেটের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জিয়া আহমদ তাকাল জানান, মুততাকি এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সীমান্ত নিরাপত্তায় যৌথ সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর মতে, শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত অভিযান এখন আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি হয়ে উঠেছে।
তাজিকিস্তানের পদক্ষেপ ও উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় সীমান্ত ইস্যু
তাজিক প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রহমান সম্প্রতি নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে আফগান সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। তিনি নির্দেশ দেন যে তাজিক নিরাপত্তা বাহিনী সীমান্ত এলাকায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের হামলা ঠেকাবে। তাজিকিস্তানের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটি ইসলামিক এমিরেটকে দেশটিতে সাম্প্রতিক দুই হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে চীনও তাদের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তাজিকিস্তান সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায়। চীনের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক বিনিয়োগের কারণে এ নিরাপত্তা দৃষ্টিভঙ্গি দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ: আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও গোপন তৎপরতা
কিছু সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, চীনা নাগরিকদের ওপর হামলা কোনো সাধারণ অপরাধমূলক ঘটনা নয়। অনেকের দাবি, এ ঘটনার পেছনে আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির প্রভাব আছে, যারা আফগানিস্তান ও তাজিকিস্তানের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হোক—তা চাইছে না। সামরিক বিশ্লেষক সারওয়ার নিয়াজির মতে, হামলার সঙ্গে মাফিয়া কিংবা আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের যোগ থাকতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক আবদুল্লাহ আহমাদির মতে, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পক্ষগুলো নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে সীমান্ত পরিস্থিতিকে কাজে লাগাচ্ছে। তারা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করে উত্তেজনা বৃদ্ধি ও সীমান্ত অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে।
আফগানিস্তানের পদক্ষেপ: হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন ২ জন গ্রেপ্তার
ইতিমধ্যে আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশের পুলিশ জানিয়েছে যে তাজিকিস্তানে চীনা নাগরিকদের ওপর হামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, সীমান্ত এলাকায় নজরদারি আরও জোরদার করা হচ্ছে।
NA-100008 | Signalbd.com



