ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে তৃতীয়বারের মতো ভারত সফর বাতিল করেছেন। বিষয়টি মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি প্রকাশ করেছে। নতুন এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহলে যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে, কারণ নেতানিয়াহুর ভারত সফর ইসরায়েল ও ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল।
নিরাপত্তা শঙ্কার পেছনের কারণ
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দুই সপ্তাহ আগে নয়াদিল্লিতে যে সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হয়েছে, তা গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হামলার মধ্যে একটি। ওই হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা মূল্যায়ন নতুন করে সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তার ভারত সফর আগামী বছরে স্থগিত হতে পারে।
নয়াদিল্লিতে এই হামলা কেবল স্থানীয় নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষকে নয়, আন্তর্জাতিক নেতাদেরও সতর্ক করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের রাজধানীতে এই ধরনের হামলা, যেখানে বৈশ্বিক কূটনীতিকরা ঘন ঘন অবস্থান করে, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে।
নেতানিয়াহুর পূর্ববর্তী ভারত সফরের পরিকল্পনা
মূলত, এ বছর শেষের আগে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিল। তবে এবার এটি তৃতীয়বারের মতো বাতিল হলো। এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর এক দিনের সফরে আসার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়। সে সময় নেতানিয়াহু বলেছিলেন, ইসরায়েলের ১৭ সেপ্টেম্বরের পুনর্নির্বাচনের প্রস্তুতি তার প্রধান ব্যস্ততার কারণ।
এর আগে এপ্রিলে নির্বাচন শুরুর আগে এবং জুলাই মাসে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রচারণার অংশ হিসেবে তার ভারত সফর বাতিল করা হয়েছিল।
নেতানিয়াহুর আন্তর্জাতিক কূটনীতিক প্রচারণা
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নেতানিয়াহুর ভারত সফর কেবল কূটনৈতিক নয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর প্রচেষ্টার অংশ। জুলাই মাসে লিকুদ পার্টি একটি প্রচারণা চালিয়েছিল, যেখানে নেতানিয়াহুর ছবি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রদর্শিত হয়েছিল।
এই প্রচারণার উদ্দেশ্য ছিল তাকে আন্তর্জাতিক নেতাদের কাতারে তুলে ধরা এবং তার রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা শক্তিশালী করা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নেতানিয়াহুর ভারত সফর বাতিল হওয়ায় এই প্রচেষ্টা কিছুটা ব্যাহত হতে পারে।
ইসরায়েল-ভারত সম্পর্ক: একটি প্রেক্ষাপট
ইসরায়েল ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক গত কয়েক দশকে দৃঢ় হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, প্রযুক্তি ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা রয়েছে। বিশেষ করে সাইবার নিরাপত্তা ও সামরিক প্রযুক্তি খাতে এই সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য।
নেতানিয়াহুর ভারত সফর শুধু দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও গভীর করার লক্ষ্যেই ছিল না, এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলের অবস্থান শক্ত করারও একটি কৌশল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মত
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নেতানিয়াহুর সফর স্থগিত হওয়া যৌক্তিক। নয়াদিল্লিতে সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক নেতাদের উপস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। নিরাপত্তা ব্যর্থতা কেবল একটি দেশের কূটনৈতিক ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং আন্তর্জাতিক স্তরে নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সম্পর্ককেও প্রভাবিত করে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, ভবিষ্যতে নেতানিয়াহুর ভারত সফর সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় নজিরবিহীন প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
নির্বাচন ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একাধিকবার নির্বাচনের কারণে তার আন্তর্জাতিক সফর স্থগিত করেছেন। এ বছর পুনর্নির্বাচন এবং রাজনৈতিক চাপ তাকে বিদেশ সফর থেকে বিরত রেখেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে নেতানিয়াহুর বিদেশ সফর স্থগিত করা তার আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। কারণ বিদেশ সফরের সময় রাজ্যব্যাপী রাজনৈতিক কর্মসূচি ও নির্বাচনী প্রচারণা সীমিত হতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
নেতানিয়াহুর ভারত সফর বাতিল হওয়ায় আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে বেশ আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে একটি সতর্ক কূটনৈতিক অবস্থানে রাখছে।
ভারতও এই অবস্থাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়া পর্যন্ত সফর স্থগিত রাখা হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে এটি একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বর্তমানে নেতানিয়াহু ও ভারতের মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। দুই দেশের বিদেশ মন্ত্রণালয় ভবিষ্যতে নতুন সফরের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছে। বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন, পরবর্তী বছর বা নির্বাচনের পর নেতানিয়াহু ভারত সফর সম্পন্ন করতে পারবেন।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর তৃতীয়বারের মতো ভারত সফর বাতিল হওয়া নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন। যদিও এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও সম্পর্কের জন্য সাময়িক প্রভাব ফেলতে পারে, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্থিতিশীল থাকবে।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করান, আন্তর্জাতিক নেতাদের সফরের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সর্বাগ্রে গুরুত্বপূর্ণ। নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক কূটনীতিক জগতে নিরাপত্তা ও দায়িত্বশীলতার উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
MAH – 14000 I Signalbd.com



