বিশ্ব

ইরানের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবারের মতো ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। তার প্রশাসন ইতিমধ্যে তেহরানের বিরুদ্ধে ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের নীতি গ্রহণ করেছে, যা ইরানের অর্থনীতি এবং সামরিক কার্যক্রমকে দুর্বল করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়। অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো ইরানের ‘তেল নেটওয়ার্ক’কে লক্ষ্যবস্তু করেছে।

নিষেধাজ্ঞার কারণ

মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এক বিবৃতিতে দাবি করেন, ইরান তার তেলের রাজস্ব থেকে বিভিন্ন সামরিক কার্যক্রমের জন্য অর্থায়ন করছে। বিশেষ করে, নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির উন্নয়ন, প্রাণঘাতী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও মনুষ্যবিহীন আকাশযান (ড্রোন) তৈরির প্রচেষ্টা এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠীগুলোর সহায়তা প্রদান।

তিনি বলেন, “আমরা ইরানের এই ধরনের কার্যক্রমে অর্থায়ন বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। মার্কিন প্রশাসন নিশ্চিত করতে চায় যে, ইরান তার তেলের রাজস্ব থেকে কোনো অবৈধ কার্যক্রম চালাতে না পারে।”

চীনের সঙ্গে সম্পর্ক এবং নিষেধাজ্ঞার প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ আরও জানিয়েছে, চীন, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে। যারা ইরানের তেল খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাদের ওপরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানের অর্থনীতি আরও চাপে পড়বে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে তাদের তেল রপ্তানি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে। বিশেষ করে, চীন এবং ভারতের মতো দেশগুলো, যারা ইরানের প্রধান তেল ক্রেতা, তারা এই নিষেধাজ্ঞার কারণে নতুন করে সংকটের মুখে পড়তে পারে।

ইরানের প্রতিক্রিয়া

ইরান দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে ‘অন্যায্য ও একতরফা’ বলে অভিহিত করে আসছে। দেশটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বরাবরই বলেছেন, তারা মার্কিন চাপের কাছে মাথা নত করবে না।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, “মার্কিন প্রশাসন আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার জন্য বারবার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে, আমরা কখনোই আমাদের সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দেব না। এই নিষেধাজ্ঞাগুলো আমাদের তেল রপ্তানি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর প্রভাব ফেললেও, আমরা বিকল্প উপায় খুঁজে বের করব।”

নিষেধাজ্ঞার দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরানের অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে। তারা বলছেন—

  1. তেল খাতে বিপর্যয়: ইরানের অর্থনীতি মূলত তেল রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশটির তেল বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে।
  2. আন্তর্জাতিক লেনদেন সংকট: মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান আন্তর্জাতিক লেনদেনে বাধার সম্মুখীন হতে পারে।
  3. অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অস্থিরতা: মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
  4. রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি: নিষেধাজ্ঞার ফলে ইরান এবং পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।

বাইডেন প্রশাসনের অবস্থান

ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেনের সময় মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরিধি কিছুটা শিথিল করা হয়েছিল। তবে, ট্রাম্প প্রশাসন নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বাইডেনের নেওয়া কিছু উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী দিনে এই নিষেধাজ্ঞাগুলো ইরান-মার্কিন সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

উপসংহার

ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো ইরানের অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র যেখানে ইরানকে চাপে রাখতে চাইছে, সেখানে ইরান বিকল্প কৌশল খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। তবে, নিষেধাজ্ঞার ফলে উভয় দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button