তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান বলেছেন, গাজ্জায় ইসরাইলের উসকানির মুখে হামাস অত্যন্ত ধৈর্য প্রদর্শন করছে এবং যুদ্ধবিরতিকে মেনে চলছে। এরদোগান জোর দিয়ে বলেন, এই যুদ্ধবিরতিকে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য অত্যন্ত জরুরি।
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষে ফেরার পথে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর গুরুত্বারোপ
এরদোগান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও দৃঢ়, ধারাবাহিক এবং কার্যকর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “ইসরাইলের ওপর কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি এবং গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহ অব্যাহত রাখা এখন সময়ের দাবি।“
তিনি আরও বলেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি দৃঢ় এবং ধারাবাহিকভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়, তাহলে নাতানিয়াহুকে থামানো সম্ভব।“
আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং তুরস্কের প্রস্তুতি
এছাড়াও আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি উল্লেখ করে এরদোগান বলেন, “যখন আমাদের দেশের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন আসে, তখন সবাই জানে আমরা কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। ভবিষ্যতে যদি একই ধরনের ঝুঁকির মুখোমুখি হই, তবে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করব না।“
এটি ইঙ্গিত দেয় যে তুরস্ক তার নিরাপত্তা নীতি এবং প্রতিরক্ষা পদক্ষেপে সজাগ ও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
রাশিয়া–ইউক্রেন সংঘাতে মধ্যস্থতার ভূমিকায় তুরস্ক
এরদোগান আরও বলেন, “রাশিয়া–ইউক্রেন সংঘাতের ক্ষেত্রে তুরস্ক ইস্তাম্বুলে আগে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, আজও আমরা সেই গঠনমূলক অবস্থান ধরে রাখতে প্রস্তুত।“
তিনি বিশ্বাস করেন, সদিচ্ছা ও কূটনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব, এবং তুরস্ক সেই প্রক্রিয়ার সক্রিয় অংশীদার হতে চায়।
গাজ্জায় মানবিক সংকট
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজ্জায় চলমান যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের কারণে সাধারণ মানুষকে ব্যাপক মানবিক সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ এবং চিকিৎসা সেবা প্রায় স্বাভাবিকভাবে বন্ধ। এরদোগান ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক নেতারা বারবার এ অঞ্চলে মানবিক সাহায্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তুরস্ক ইতিমধ্যেই গাজ্জায় মেডিকেল এবং খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বয় করছে। এরদোগান উল্লেখ করেছেন, “মানবিক সাহায্য নীতি এবং যুদ্ধবিরতি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি শান্তি স্থাপন সম্ভব নয়।“
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
- বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং মানবাধিকার সংস্থা ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
- তুরস্ক রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধির মাধ্যমে গাজ্জায় সহায়তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
- দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে তুরস্ক গাজ্জার মানবিক পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরেছে।
গাজ্জায় যুদ্ধবিরতি দীর্ঘ সময় ধরে লঙ্ঘিত হলেও, হামাস এখনও ধৈর্য্য ধরে তা মেনে চলছে। এরদোগানের বক্তব্যে স্পষ্ট, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় প্রতিক্রিয়া, কূটনৈতিক চাপ এবং মানবিক সহায়তা ছাড়া এই সংকট সমাধান অসম্ভব।
তুরস্ক নিজেও আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সংঘাত সমাধানে গঠনমূলক ও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গাজ্জার মানুষের নিরাপত্তা ও সহায়তা নিশ্চিত করা এখন আন্তর্জাতিক শান্তি স্থাপনের জন্য অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ।
MAH – 13977 I Signalbd.com



