বিশ্ব

ভারতে মুসলিমরা আজও বৈষম্যের শিকার

Advertisement

জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা সাইয়েদ আরশাদ মাদানী সম্প্রতি ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্বাধীন বিজেপি প্রশাসন দেশের সার্বিক উন্নয়ন কাজের পরিবর্তে মুসলিম নাগরিকদের উপর বৈষম্য ও নির্যাতন চালানোতে বেশি মনোযোগী।

মাওলানা মাদানী আরও বলেন, ভারতের মুসলিমরা সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে সুযোগ থেকে বঞ্চিত। বিদেশে মুসলিম নেতারা উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করতে পারলেও, ভারতে যারা রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ পদে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন, তাদের জেলে পাঠানো হয়। তিনি এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি এবং লন্ডনের মেয়র সাদিক খান। এই দুই নেতা বিদেশে মুসলিমদের জন্য উদাহরণ ও প্রেরণার উৎস হলেও ভারতে এমন পরিস্থিতি বিরল।

ভারতের মুসলিমদের শিক্ষা ও প্রশাসনে বৈষম্য

মাওলানা মাদানী বলেন, ভারতে মুসলিমরা উচ্চ শিক্ষা ও প্রশাসনে এগোনোর সুযোগ পায় না। তিনি বলেন, ভারতে কোনো মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হতে পারেন না। যারা চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এর উদাহরণ হিসেবে তিনি আজম খানের ঘটনা উল্লেখ করেন।

আজম খান, ভারতের একটি প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার সময় সরকারি হস্তক্ষেপে জেলে পাঠানো হয়। মাওলানা মাদানী আরও উল্লেখ করেন, আল-ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত তদন্তও এই বৈষম্যের প্রমাণ। তিনি বলেন, এমন ব্যবস্থা গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হলো মুসলিমরা যাতে শিক্ষা, নেতৃত্ব এবং সামাজিক ক্ষেত্রে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে

রাজনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য

মাওলানা আরশাদ মাদানী বলেন, ভারতের মুসলিমদের উপর বৈষম্য শুধু শিক্ষা বা প্রশাসনে সীমাবদ্ধ নয়। এটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রেও প্রবলভাবে বিদ্যমান। তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন নীতি এবং আইনের মাধ্যমে মুসলিমরা দেশের মূলধারার উন্নয়নের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হলো সমাজের মুসলিম জনগোষ্ঠীকে দমন করা এবং তাদের সম্ভাব্য নেতৃত্ব বিকাশে বাধা দেওয়া। তিনি বলেন, এই নীতি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ, যাতে মুসলিমরা কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে না পৌঁছাতে পারে

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও তুলনা

মাওলানা মাদানী আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে মুসলিমরা রাজনীতি, ব্যবসা, শিক্ষা ও প্রশাসনে সমানভাবে এগোতে সক্ষম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন,

  • নিউইয়র্কের মেয়র জোহরান মামদানি,
  • লন্ডনের মেয়র সাদিক খান,

যারা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য গর্বের প্রতীক। তবে ভারতে, এমন সুযোগগুলো সীমিত ও নিয়ন্ত্রণাধীন

শিক্ষাক্ষেত্রে বাধা ও তার প্রভাব

মাওলানা মাদানী বিশেষভাবে শিক্ষাক্ষেত্রের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ভারতে মুসলিম শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশের পথে বাধা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচ্চপদে বৈষম্য, এবং সরকারি হস্তক্ষেপের ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে

তিনি বলেন, এই অবস্থা মুসলিম যুবসমাজকে উচ্চ শিক্ষার জন্য অনুপ্রাণিত করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তার ভাষ্য, শিক্ষাক্ষেত্রে মুসলিমরা এগোতে পারলে সমাজের উন্নয়নে তাদের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি তাদের সমাজে নেতৃত্ব গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করছে

অর্থনীতি ও ব্যবসায় ক্ষেত্রেও বৈষম্য

মাওলানা মাদানী বলেন, শুধুমাত্র শিক্ষা ও প্রশাসন নয়, ভারতে মুসলিমরা অর্থনীতি ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও বৈষম্যের মুখোমুখি। তিনি উল্লেখ করেন, সরকারী নীতি এবং বাণিজ্যিক বাধার কারণে মুসলিম ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বৃদ্ধি ও স্বাবলম্বী হওয়া কঠিন

তিনি বলেন, এই বৈষম্য সমাজের সামগ্রিক অগ্রগতিতেও প্রভাব ফেলছে, কারণ একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী সম্পূর্ণভাবে উন্নয়নে অংশগ্রহণ করতে পারছে না

মাওলানা মাদানীর পরামর্শ

মাওলানা আরশাদ মাদানী ভারত সরকারের কাছে আহ্বান জানান, মুসলিমদের সমান সুযোগ ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে। তিনি বলেন, সরকার যদি সত্যিই দেশের সার্বিক উন্নয়নে বিশ্বাসী হয়, তাহলে বৈষম্য ও নিপীড়ন বন্ধ করা জরুরি

তিনি আরও বলেন, সমাজে মুসলিমদের সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত না করা হলে, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভারতের মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রশ্ন উঠবে

আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবাধিকার সংস্থার পর্যবেক্ষণ

মাওলানা মাদানী উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং সংবিধান প্রণেতা সংস্থাগুলি বহুবার ভারতের মুসলিমদের বৈষম্যের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই সংস্থাগুলি বলেন, মুসলিমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং অর্থনীতিতে সমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত

তিনি যোগ করেন, ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক নীতি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নিন্দনীয় ও চিন্তার বিষয়

সামগ্রিক মূল্যায়ন

মাওলানা আরশাদ মাদানীর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর বৈষম্য শুধু একটি সাময়িক সমস্যা নয়, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী, নীতি-নির্ধারিত এবং পরিকল্পিত দমননীতি। তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য হলো মুসলিমরা যেন কখনো সমাজে উচ্চ পর্যায়ের নেতৃত্বে পৌঁছাতে না পারে

তিনি সতর্ক করে বলেন, এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। তিনি সমাজের সকল স্তরে মুসলিমদের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন।

MAH – 13965 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button