বিশ্ব

শীতের পোশাকের স্টাইলে মামদানিকে ‘নকল’ করছেন ট্রাম্প

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে মতপার্থক্য, বিতর্ক, পাল্টাপাল্টি মন্তব্য—এসব যেন দৈনন্দিন দৃশ্য। তবে রাজনীতির মাঠ ছাড়িয়ে এবার আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে ফ্যাশন। বিশেষ করে শীতের পোশাক নিয়ে তৈরি হয়েছে এক অন্যরকম আলোড়ন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শীতকালীন সাজকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যম এখন সরগরম। কারণ, অনেকের মতে ট্রাম্প নাকি নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির ফ্যাশন স্টাইল নকল করেছেন।

ঘটনার সূত্রপাত মাত্র একদিনের। গত রোববার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সামনে ব্রিফিং দিতে এসে ট্রাম্প যে পোশাক পরেছিলেন, ঠিক সেই সাজই স্মরণ করিয়ে দেয় জোহরান মামদানির একটি জনপ্রিয় ছবি। এই মিলই এখন সামাজিক মাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

ট্রাম্প–মামদানি বৈঠক থেকে শুরু বিতর্ক

কয়েকদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং নিউইয়র্ক সিটির নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির মুখোমুখি হন এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে। আগে যাঁরা একে অপরের সমালোচনা করতে কার্পণ্য করতেন না, তাঁরাই এবার শান্ত পরিবেশে শহরের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন, জাতীয় তহবিল বরাদ্দ এবং নিউইয়র্কবাসীর জীবনমান উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন।

বৈঠকের খবর যেমন মিডিয়ায় এসেছে, তার চেয়েও বেশি আলোচিত হয়েছে দুই নেতার শরীরী ভাষা, এক ফ্রেমে অবস্থান এবং তাদের অপ্রত্যাশিত বন্ধুত্বপূর্ণ আচার। এই বৈঠকের কিছু কিছু মুহূর্ত ছড়িয়ে গেছে সামাজিকমাধ্যমে। তবে জনমনে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে এক ভিন্ন বিষয়—ট্রাম্পের পরদিনের পোশাক।

ট্রাম্পের পোশাকে ‘মামদানি–ছোঁয়া’

ব্রিফিংয়ের সময় ট্রাম্প পরেছিলেন গাঢ় মেরুন রঙের হাই–নেক সোয়েটার এবং তার ওপর কালো ওভারকোট। শীতের দিনের জন্য এই লুক যে সুন্দর, তা বলাই যায়। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহারকারীরা সঙ্গে সঙ্গেই খুঁজে নেন জোহরান মামদানির একটি পুরোনো ছবি—সেখানে তাকে দেখা গেছে ঠিক একই ধরনের মেরুন হাই–নেক সোয়েটার পরে, যদিও তিনি ব্যবহার করেছিলেন কালো ব্লেজার।

দু’জনের ছবি পাশাপাশি রাখতেই সামাজিক মাধ্যম মন্তব্যে ফেটে পড়ে। অনেকে রসিকতা করে লিখছেন, ট্রাম্প নাকি “দ্য মামদানি লুক” কপি করেছেন। কেউ কেউ আবার পরিস্থিতিকে আরও রঙিন করে তুলেছেন নানা কৌতুক ও তুলনায়।

একজন লিখেছেন,
“এটা ঠিক ‘দ্য মামদানি’। নিজের প্রতিদ্বন্দ্বীকেও ইমপ্রেস করতে ট্রাম্প এভাবে সাজলেন। মনে হচ্ছে বেশ উত্তেজিত ছিলেন।”

আরেকজন মন্তব্য করেছেন,
“বিশ্বাসই হয় না! ট্রাম্প সত্যিই লুকটা কপি করেছেন। দু’জনের কাছেই ভালো লাগছে পোশাক।”

নিকো উইনথার নামে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন,
“দু’জনের লুকই দারুণ। সত্যি কথা বলতে কি, আমিও এই লুক চুরি করার কথা ভাবছি।”

এমনকি বিখ্যাত সিটকম ‘দ্য অফিস’ থেকে ছবি দিয়ে মিম তৈরি হয়েছে, যেখানে ক্যারেক্টারদের একই ধরনের পোশাক পরতে দেখা যায়। অন্য এক ব্যবহারকারী মনে করিয়ে দেন, “এই লড়াইয়ে ট্রাম্প বা মামদানি কেউই জিততে পারবেন না, কারণ স্টাইলের দিক থেকে বারাক ওবামাই ছিলেন সেরা।”

মামদানি কে? কেন তাঁর ফ্যাশন নিয়ে এমন তুলনা?

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জোহরান মামদানি রাজনীতিতে নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে জয় লাভ করে তিনি ইতিহাস গড়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান প্রগতিশীল, এবং তরুণ ভোটারদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়।

মামদানি সামাজিক মাধ্যমেও বেশ সক্রিয়। তাঁর বক্তব্য, জীবনযাপন, পোশাক—এসব কিছুতেই থাকে সরলতা ও ব্যক্তিত্বময়তা। গত বছর শীতকালে তিনি যে মেরুন হাই–নেক সোয়েটার পরে ফটোশুট করেছিলেন, তা তরুণদের মধ্যে বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছিল। অনেকে সেটাকে “মামদানি–উইন্টার–লুক” বলেও অভিহিত করেছিলেন।

ঠিক সেই স্টাইলের পোশাকেই এবার ট্রাম্পকে দেখা যাওয়ায় তুলনা হওয়াটা স্বাভাবিকই।

ফ্যাশন কপি কি নতুন ঘটনা?

রাজনীতিকদের পোশাক সবসময়ই নজরে থাকে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনমত গঠনে পোশাক ও ফ্যাশন দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রাখছে।
ইতিহাসে দেখা গেছে—

  • প্রিন্সেস ডায়ানার ব্লেজার স্টাইল বহু নেতা নকল করেছেন
  • কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার রঙিন মোজার জন্য বিখ্যাত হয়েছেন
  • বারাক ওবামার নীল–কাশ্মিরি স্যুট একসময় ভাইরাল হয়েছিল
  • ভ্লাদিমির পুতিনের লেদার–জ্যাকেট স্টাইলকেও অনেকে অনুসরণ করেছেন

সুতরাং, ট্রাম্প যদি মামদানির সাজ থেকে অনুপ্রাণিতও হন—তা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। তবে সামাজিক মাধ্যমের মানুষের কাছে এটিই এখন মজার বিষয়।

রাজনীতির আঁচ পেরিয়ে পোশাকে নতুন ‘মৈত্রী’?

বৈঠকে দুই নেতার কথোপকথন থেকেও কিছু বিষয় ছড়িয়ে পড়েছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি চান নিউইয়র্ক আবার তার আগের মহিমা ফিরে পাক। নিরাপত্তা, পরিবহন ব্যবস্থা, গৃহহীনতা এবং শহরের আর্থিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাঁর প্রশাসন সহযোগিতা করবে।

মামদানি বলেছেন,
“নিউইয়র্কের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে বিষয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করতে আমি সম্পূর্ণ প্রস্তুত।”

দুই নেতার রাজনৈতিক অবস্থান ভিন্ন হলেও শহরের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার ঘোষণা বহু নাগরিককে আশাবাদী করেছে।

বিশ্ব মিডিয়াতেও আলোড়ন

শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক মাধ্যমেই নয়, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও এই “ফ্যাশন ডিবেট” বেশ আলোচিত। কিছু পত্রিকা শিরোনাম করেছে—
“ট্রাম্পের নতুন শীতকালীন লুক: মামদানির স্টাইল কি অনুপ্রেরণা?”
কিছু মিডিয়া আবার রসিকতার ছলে লিখেছে—
“রাজনীতিতে মতভেদ থাকলেও পোশাকে মিল—নিউইয়র্ক–ওয়াশিংটন নতুন সংযোগ!”

ফ্যাশন বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

ফ্যাশন বিশ্লেষকদের মতে, মেরুন হাই–নেক ও কালো আউটারওয়্যার শীতকালের ক্লাসিক স্টাইল। এটি পরলে পরিধানকারীকে পরিণত, ভারসাম্যপূর্ণ ও নেতৃত্বগুণসম্পন্ন দেখায়।
বিশেষজ্ঞদের ভাষায়—
“এই পোশাক নেতা–সুলভ ছাপ তৈরি করে, তাই রাজনীতিকদের কাছে এটি জনপ্রিয়।”

তাঁরা আরও বলেন,
“দু’জনই একই রঙ ও কাটিং বেছে নেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তুলনা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ ধরনের পোশাক সর্বজনীন—যে কেউ পরতে পারেন।”

সামাজিক মাধ্যমের রসবোধই শেষ কথা

এই ঘটনা রাজনীতির গাম্ভীর্য ভেঙে এনেছে এক টুকরো হাসির হাওয়া।
কেউ বলছে ট্রাম্প মামদানির ‘ফ্যাশন ছাত্র’,
কেউ বলছে ‘মামদানি টাচ’,
আর কেউ লিখছে—
“ট্রাম্প এখন নিউইয়র্ক ট্রেন্ডসেটারের ছোঁয়া পাচ্ছেন।”

এভাবেই সামাজিক মাধ্যম রাজনীতিকদের একটু ভিন্ন আলোকে তুলে ধরে—গম্ভীরতা নয়, বরং হালকা হাস্যরসবোধে।

ট্রাম্প সত্যিই মামদানির স্টাইল কপি করেছেন কিনা—তা হয়তো কখনোই নিশ্চিতভাবে জানা যাবে না। কিন্তু যে বিষয়টা স্পষ্ট, তা হলো—একটি হাই–নেক সোয়েটার আর কালো আউটারওয়্যার আমেরিকার রাজনৈতিক অঙ্গনে এনে দিয়েছে অন্যরকম মজা ও আলোচনার ঝড়।

অন্তত এই শীত মৌসুমে ফ্যাশন বিষয়ে ট্রাম্প ও মামদানি এক হয়ে গেছেন—এমনটাই বলছে সামাজিক মাধ্যমের জনগণ।

MAH – 13952 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button