বিশ্ব

ভিয়েতনামে বন্যা-ভূমিধসে নিহতের সংখ্যা ৯০: নিখোঁজ ১২

Advertisement

ভিয়েতনামে টানা কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট ব্যাপক বন্যা ও ভয়াবহ ভূমিধসে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে আরও ১২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। দেশজুড়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ শতকোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হওয়া ভিয়েতনামের জন্য এটি একটি বিশাল ধাক্কা।

ভিয়েতনামের সরকার জানিয়েছে, এই দুর্যোগে ১ লাখ ৮৬ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৩০ লাখের বেশি গবাদিপশু বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা বিবেচনা করে দুর্যোগকবলিত এলাকাগুলোতে সামরিক ও পুলিশ বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে।

ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত ও সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা

প্রবল বৃষ্টি ও ভূমিধসের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হতাহত ও ধ্বংসের চিত্র বিশেষ করে পাহাড়ি প্রদেশগুলোতে ভয়াবহ।

মৃত্যু ও নিখোঁজ: ভিয়েতনামের সরকার নিশ্চিত করেছে, এই দুর্যোগে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ জনে। একইসঙ্গে এখনও পর্যন্ত ১২ জন নিখোঁজ রয়েছেন, যাঁদের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান চলছে।

ডাক লাক প্রদেশে ভয়াবহতা: বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে পাহাড় অধ্যুষিত প্রদেশ ডাক লাক। গত ১৬ নভেম্বরের পর থেকে শুধুমাত্র এই প্রদেশটিতেই ৬০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি: সরকারি তথ্যানুসারে, ১ লাখ ৮৬ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে অনেক বাড়ি কাদার নিচে চাপা পড়েছে বা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। একজন কৃষক মাচ ভ্যান সি বলেছেন, “আমাদের পাড়াটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। কিছুই অবশিষ্ট নেই। সবই কাদার নিচে ঢাকা পড়েছে।”

গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে প্রভাব

বন্যা ও ভূমিধসের কারণে ভিয়েতনামের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জনজীবন চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে।

বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন: রবিবার সকালেও প্রায় ২ লাখ ৫৮ হাজার মানুষ বিদ্যুৎহীন ছিলেন, যা দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে।

যান চলাচল বন্ধ: প্রধান প্রধান অনেক মহাসড়ক ও রেললাইনে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভূমিধস এবং বন্যার পানি জমে থাকায় রাস্তাগুলো যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ তৎপরতাও ব্যাহত হচ্ছে।

ক্ষতিগ্রস্ত প্রদেশসমূহ: দক্ষিণ ও মধ্যদক্ষিণের পাঁচটি প্রদেশ—কায়াং এংগাই, গিয়া লাই, ডাক লাক, খান হোয়া ও লাম দং—এই দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ব ইতিহাস

এই বন্যার কিছুদিন আগেই ভিয়েতনামকে দুটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলা করতে হয়েছিল, যা দেশটিকে আরও দুর্বল করে দিয়েছে।

একের পর এক দুর্যোগ: ভিয়েতনাম সাম্প্রতিক মাসগুলোতে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে কালমায়েগি ও বুয়ালোইয়ের মতো দুটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় দেশটিতে আঘাত হেনেছিল।

পূর্বপ্রস্তুতির অভাব: এই ঘূর্ণিঝড়গুলোর আঘাতের পর অবকাঠামোগত ক্ষতি মেরামত এবং মাটির দুর্বলতা কাটানোর আগেই নতুন করে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে গেছে।

জলস্তরের রেকর্ড: শুক্রবার পর্যন্ত অনেক এলাকায় বৃষ্টিপাত দেড় মিটার (৫ ফুট) ছাড়িয়ে গিয়েছিল। পানি কোথাও কোথাও ৫ দশমিক ২ মিটার অতিক্রম করেছিল, যা ১৯৯৩ সালের পর আর দেখা যায়নি।

সরকারের জরুরি পদক্ষেপ ও প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা

পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভিয়েতনাম সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে এবং উচ্চ পর্যায়ের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা: দুর্যোগে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে সামরিক ও পুলিশ বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে ত্রাণ বিতরণ এবং উদ্ধার কাজ পরিচালনার জন্য।

প্রধানমন্ত্রীর জরুরি সভা: পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিনের সভাপতিত্বে রবিবার সকালে অনলাইনে একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী জি২০ সম্মেলন উপলক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থান করলেও সেখান থেকেই বৈঠকে যোগ দিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস: সামনের দিনগুলোতে বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসবে বলে আবহাওয়া পূর্বাভাসে ধারণা দেওয়া হয়েছে, যা উদ্ধার ও পুনর্গঠন কাজের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে।

দীর্ঘমেয়াদী পুনর্গঠনের পথে ভিয়েতনাম

ভিয়েতনামে বন্যা ও ভূমিধসের কারণে ৯০ জনের মৃত্যু এবং শতকোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি এক বিশাল মানবিক বিপর্যয়। উপর্যুপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগের এই ঘটনা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর নাজুকতাকে তুলে ধরে। যদিও বৃষ্টির পরিমাণ কমার পূর্বাভাস এসেছে, তবে ব্যাপক পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের প্রয়োজন হবে। বাড়িঘর মেরামত, যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার এবং ভেসে যাওয়া গবাদিপশুজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ভিয়েতনামকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা এবং সরকারের সমন্বিত উদ্যোগই পারে এই কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশটির জনগণের পাশে দাঁড়াতে এবং দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে।

এম আর এম – ২৩৪৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button