বিশ্ব

লন্ডনে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ: ৯০ জন গ্রেফতার

Advertisement

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে এবং গাজার জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এই বিক্ষোভ থেকে পুলিশ অন্তত ৯০ জনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা ব্রিটেনের সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি সংগঠনের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছিলেন।

শনিবার (২২ নভেম্বর) লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ এই গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিক্ষোভটি আয়োজন করেছিল ‘ডিফেন্ড আওয়ার জুরিস’ নামের একটি সংগঠন, যা সম্প্রতি নিষিদ্ধ ঘোষিত ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-কে সমর্থন করে। এই গ্রেফতারের ঘটনায় যুক্তরাজ্যে বাকস্বাধীনতা ও বিক্ষোভের অধিকার নিয়ে নতুন 

বিক্ষোভের কেন্দ্র ও স্লোগান

বিক্ষোভকারীরা লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে জড়ো হয়েছিলেন এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন।

  • স্থান: বিক্ষোভকারীরা লন্ডনের টাভিস্টক স্কয়ারে জড়ো হন। এই স্থানটি ‘শান্তি উদ্যান’ হিসেবে পরিচিত এবং এখানে যুদ্ধবিরোধী স্মৃতিস্তম্ভও রয়েছে।
  • স্লোগান ও ব্যানার: বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা এবং বিভিন্ন পোস্টার। ব্যানারে লেখা ছিল, ‘আমি গণহত্যার বিরোধী, আমি প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সমর্থন করি’। স্লোগানগুলোতে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি এবং ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ জানানো হয়।

গ্রেফতারের কারণ: নিষিদ্ধ সংগঠনের সমর্থন

পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভটি শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও, ব্রিটিশ আইনে নিষিদ্ধ একটি সংগঠনের প্রতি সমর্থন জানানোয় ৯০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। চলতি বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যের সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইন অনুযায়ী ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

পুলিশের পদক্ষেপ: মেট্রোপলিটন পুলিশ নিশ্চিত করেছে, ‘ডিফেন্ড আওয়ার জুরিস’ নামের সংগঠনের উদ্যোগে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, যা নিষিদ্ধ প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সমর্থন জানিয়ে আয়োজিত হয়েছিল।

আইনের প্রয়োগ: নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রতি সমর্থন জানানো বা তাদের পোস্টার বহন করা যুক্তরাজ্যে সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত। জুলাইয়ে নিষেধাজ্ঞার পর থেকে এই অভিযোগে শত শত বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আয়োজক সংগঠনের প্রতিক্রিয়া

গ্রেফতারের ঘটনায় বিক্ষোভের আয়োজক সংগঠন ‘ডিফেন্ড আওয়ার জুরিস’ তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ: সংগঠনটি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছে যে, শান্তিপূর্ণভাবে পোস্টার ধরে দাঁড়ানো মাত্রই পুলিশ বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করা শুরু করে।

উদ্বেগ: টাভিস্টক স্কয়ারের মতো একটি ‘শান্তি উদ্যান’ থেকে এই ধরনের গ্রেফতারের ঘটনাকে তারা উদ্বেগজনক বলে অভিহিত করেছে।

দাবি: ‘ডিফেন্ড আওয়ার জুরিস’ অবিলম্বে ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে।

ফিলিস্তিনের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া

লন্ডনের এই বিক্ষোভ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান সামরিক অভিযানের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঢেউ তুলে ধরে।

গাজার ক্ষয়ক্ষতি: অক্টোবর ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলায় প্রায় ৭০ হাজার মানুষ নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। পুরো অঞ্চল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

যুদ্ধবিরতির লঙ্ঘন: গত ১০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও প্রায় ৫০০ বার হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়, যা যুদ্ধবিরতির ভঙ্গুরতা প্রমাণ করে।

অন্যান্য দেশে বিক্ষোভ: লন্ডনের পাশাপাশি ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে নিয়মিতভাবে বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বৈশ্বিক জনমত গড়ে তুলেছে।

যুক্তরাজ্যের বিতর্কিত আইন ও বাকস্বাধীনতার প্রশ্ন

লন্ডনের সাম্প্রতিক গ্রেফতারগুলো যুক্তরাজ্যের সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইন এবং বাকস্বাধীনতার সীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

রাজনৈতিক অধিকার: মানবাধিকার সংস্থাগুলো প্রশ্ন তুলেছে যে, কোনো সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর তার প্রতি আদর্শিক সমর্থন জানানো বাকস্বাধীনতার অংশ হওয়া উচিত কি না।

পুলিশের কঠোরতা: অনেকে অভিযোগ করছেন, ফিলিস্তিনের পক্ষে আয়োজিত বিক্ষোভগুলোতে ব্রিটিশ পুলিশ অতিরিক্ত কঠোরতা দেখাচ্ছে, যা অন্য রাজনৈতিক বিক্ষোভের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। এর ফলে মুসলিম এবং ফিলিস্তিনপন্থী অভিবাসীরা নিজেদের মতামত প্রকাশে ভীতি বোধ করছেন।

সংহতি ও আইনি লড়াই

লন্ডনে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে আয়োজিত বিক্ষোভ থেকে ৯০ জনের গ্রেফতারের ঘটনা একদিকে যেমন গাজায় চলমান সংকটের প্রতি বিশ্বের মানুষের সংহতি তুলে ধরে, অন্যদিকে তেমনি গণতান্ত্রিক অধিকার ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী কঠোর আইনের মধ্যে থাকা দ্বন্দ্বকেও প্রকট করে তোলে। ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর মতো সংগঠনকে সমর্থন করার অভিযোগে এমন ব্যাপক ধরপাকড় যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। এই গ্রেফতারের ঘটনা নিঃসন্দেহে বিক্ষোভকারীদের আরও উস্কে দেবে এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে লন্ডনের রাজপথে সংহতি ও প্রতিবাদের ঝড় আরও বাড়িয়ে তুলবে। এই আইনি লড়াই এবং বিক্ষোভের চাপ যুক্তরাজ্যের সরকারকে তাদের বৈদেশিক নীতি এবং অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইন নিয়ে পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করতে পারে।

এম আর এম – ২৩৪১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button