বানিজ্য

রমজানে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে টিসিবির অতিরিক্ত ৯ হাজার মেট্রিক টন পণ্য বিতরণ

Advertisement

পবিত্র রমজান উপলক্ষে ভোক্তাদের স্বস্তি নিশ্চিত করতে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ফ্যামিলি কার্ডধারীদের বাইরে সারা দেশের আটটি বিভাগীয় শহর ও পাঁচটি জেলায় অতিরিক্ত ৯ হাজার মেট্রিক টন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ১২ লাখ পরিবারের কাছে সরবরাহ করা হবে। এতে বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও সহনীয় থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।

আজ মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে খুলনার শিববাড়ী মোড়ে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রয় কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ফয়সাল আজাদ, খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, জেলা পুলিশ সুপার টি এম মেশাররফ হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।

রমজানে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিতরণ

রমজান মাসে সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে টিসিবি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ বছর সারাদেশে ৬৩ লাখ নিম্নআয়ের পরিবারকে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য সরবরাহ করা হবে। এর পাশাপাশি নতুন এই ১২ লাখ পরিবারকেও অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, যারা ট্রাক সেলের মাধ্যমে পণ্য পাবেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “সরকার সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফ্যামিলি কার্ডের বাইরে থাকা জনগণ যেন ন্যায্যমূল্যে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে, সে লক্ষ্যে এই বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।”

টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ফয়সাল আজাদ বলেন, “রমজান মাসে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। এ বছর অতিরিক্ত ৯ হাজার মেট্রিক টন পণ্য বিতরণ করা হবে, যা গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।”

টিসিবির পণ্য বিতরণ কার্যক্রম

টিসিবি নির্ধারিত ট্রাক সেলের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর কাছে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য পৌঁছে দেবে। এ কার্যক্রম রমজান মাসজুড়ে চলবে। পণ্যগুলোর মধ্যে থাকছে—

  • চিনি: ৫৫ টাকা প্রতি কেজি
  • ভোজ্যতেল: ১১০ টাকা প্রতি লিটার
  • মসুর ডাল: ৭০ টাকা প্রতি কেজি
  • ছোলা: ৬০ টাকা প্রতি কেজি
  • খেজুর: ২০০ টাকা প্রতি কেজি

প্রতি পরিবারকে নির্দিষ্ট পরিমাণে এসব পণ্য কেনার সুযোগ দেওয়া হবে। পণ্য ক্রয়ের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের উদ্যোগ

দেশের বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাজারে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। যদি কোনো ব্যবসায়ী পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রশাসন নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে। কোথাও পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া

সরকারের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন সাধারণ ভোক্তারা। টিসিবির পণ্য কিনতে আসা গৃহিণী রহিমা বেগম বলেন, “বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেশি। এখানে কম দামে পণ্য কিনতে পারছি, যা আমাদের জন্য অনেক উপকারী।”

একইভাবে শ্রমিক মো. সেলিম বলেন, “রমজানে ন্যায্যমূল্যে পণ্য পাওয়া অনেক সুবিধার বিষয়। টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে পেরে আমরা খুশি।”

বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান

বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হাসান বলেন, “রমজান মাসে নিত্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই ব্যবসায়ীদেরও দায়িত্ব নিতে হবে, যেন বাজারে পণ্যের সংকট না হয় এবং মূল্য স্থিতিশীল থাকে।”

সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে রমজানে বাজার স্থিতিশীল থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষ যেন সহজে ও হয়রানি ছাড়া ন্যায্যমূল্যে পণ্য পায়, সে বিষয়ে প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button