বিশ্ব

লেবাননে নতুন ইসরায়েলি বিমান হামলা, উত্তেজনা বৃদ্ধি

Advertisement

লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে আবারো বিমান হামলার ঘটনা ঘটেছে। ইসরায়েল, যা আন্তর্জাতিকভাবে অবৈধ দখলদার রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত, বুধবার (১৯ নভেম্বর) লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলীয় দেঈর কিফা এবং চেহোর গ্রামে বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করেছে। দেশটির স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

এই হামলা নতুন করে একবারে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে নতুন সহিংসতা

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনাপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়েছে। বিশেষত ইসরায়েলি বাহিনীর নানাবিধ হামলার কারণে সাধারণ মানুষ নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারছে না।
গত রোববারও লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী গুলি চালিয়েছিল। এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে নিন্দা পেয়েছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন জানিয়েছে, “এ ধরনের আক্রমণ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইসরায়েল লেবাননের সীমান্ত এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি এবং সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বাহিনীকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

  • জাতিসংঘ: শান্তিরক্ষা মিশনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, “মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক আইন মানা প্রয়োজন। ইসরায়েলের এই ধরনের হামলা লেবাননের নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।”
  • আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা: এই হামলাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে ঘোষণা করেছে। তারা জানিয়েছে, নিরীহ নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী।
  • আরব দেশগুলো: লেবাননের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং ইসরায়েলের এই কর্মকাণ্ডকে কঠোরভাবে নিন্দা জানিয়েছে।

লেবাননের মানুষ ও স্থানীয় পরিস্থিতি

দেঈর কিফা ও চেহোর অঞ্চলের মানুষ বর্তমানে আতঙ্কিত। স্থানীয়রা জানাচ্ছে, বিমান হামলার ফলে কয়েকটি বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে এবং অনেকেই অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য শহর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের হামলা লেবাননের সাধারণ মানুষের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে। শিশুরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে, স্কুল কার্যক্রম স্থগিত হচ্ছে এবং মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য শহর ছাড়ছে।

ইসরায়েল-লেবানন দ্বন্দ্বের ইতিহাস

ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে সম্পর্ক বহু বছর ধরে উত্তেজনাপূর্ণ। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর থেকে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল প্রায়শই সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

  • ১৯৭৮ এবং ১৯৮২ সালে ইসরায়েল লেবাননের সীমান্তে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালিয়েছিল।
  • হিজবুল্লাহ, লেবাননের একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ও সামরিক সংগঠন, দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
  • এই সংঘাতের ফলে দুই দেশের সাধারণ মানুষ ভয়াবহ ক্ষতি ভোগ করেছে।

মানবিক সাহায্য ও প্রতিরক্ষা উদ্যোগ

এই হামলার পর লেবাননের সরকার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা তৎপর হয়ে পড়েছে।

  • লেবানন সরকার: ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জরুরি উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম চালু করেছে।
  • জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক এনজিও: খাদ্য, পানি, ও চিকিৎসা সরবরাহ করছে।
  • স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা: বোমা হামলায় আহতদের উদ্ধার এবং নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরি করছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয়ভাবে লেবাননের সাধারণ মানুষকে সাহায্য করতে হবে।

সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ

  • রোববারের হামলা: জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি।
  • বুধবারের হামলা: দেঈর কিফা ও চেহোরে বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ।
  • এই ঘটনার ফলে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বৃদ্ধি এবং দেশজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন

ইসরায়েলের এই হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও যুদ্ধবিধি লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

  • জাতিসংঘের শান্তি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতিমালা স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করেছে, যে কোনো রাষ্ট্রকে নিরীহ নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালানোর অধিকার নেই।
  • মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, এই ধরনের কার্যকলাপকে আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লেবাননের সীমান্তে ইসরায়েলের হামলা শুধু সামরিক লক্ষ্য নয়, বরং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা।

লেবাননের ভবিষ্যৎ

এই অবস্থায় লেবাননের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সংকটাপন্ন।

  • সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনমান হুমকির মুখে।
  • আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং আরব দেশগুলো লেবাননের পাশে দাঁড়িয়ে মানবিক সহায়তা এবং কূটনৈতিক সমাধান খুঁজতে কাজ করছে।

বিশেষজ্ঞরা আশা প্রকাশ করেছেন, দ্রুত কূটনৈতিক উদ্যোগ এবং শান্তি আলোচনার মাধ্যমে লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা কমানো সম্ভব।

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলের নতুন হামলা শুধু সামরিক আক্রমণ নয়, এটি আন্তর্জাতিক শান্তি, মানবাধিকার এবং লেবাননের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উপর গভীর প্রভাব ফেলছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সংকট দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।

MAH – 13905 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button