ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরের তুলকারেম শহরে বিক্ষোভের খবর সংগ্রহের সময় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার ক্যামেরাম্যান ফাদি ইয়াসিনকে ইসরাইলি সেনা লক্ষ্য করে গুলি করেছে। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সংঘটিত এই ঘটনায় তার দুই পায়ে গুলি লাগে। স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং চিকিৎসা শুরু হয়।
এই হামলার ঘটনা আল জাজিরা নিজস্ব প্রতিবেদনে নিশ্চিত করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাদি ইয়াসিন ওই সময় নুর শামস শরণার্থী শিবিরে চলমান বিক্ষোভের চিত্র ধারণ করছিলেন।
তুলকারেম ও পাশের নুর শামস শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বাহিনী নিয়মিতভাবে আগ্রাসন চালায়। শুধু সেনা নয়, স্থানীয় দখলদারদের মধ্যেও ফিলিস্তিনি নাগরিক ও সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন ও হিংসার ঘটনা ঘটে থাকে।
সাংবাদিকদের উপর হামলার প্যাটার্ন
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর ও গাজ্জা অঞ্চলে গত দুই বছরে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী ও দখলদাররা সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে। শুধু লক্ষ্যবস্তু গুলি নয়, কখনো লাঠিচার্জ, কখনো আটক, কখনো বা সংবাদ সংগ্রহে বাধা দেওয়া—এসবই ঘটেছে নিয়মিত।
ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থা এবং সাংবাদিক সংগঠনগুলো এই হামলাগুলোকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সংবাদকর্মীদের ওপর হামলা, তথ্য সঞ্চার বন্ধের চেষ্টা এবং স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ বন্ধ করা—এসব ইসরাইলের সামরিক নীতির অংশ বলে তারা মনে করছে।
ফাদি ইয়াসিনের অবস্থা ও হাসপাতালের রিপোর্ট
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ফাদি ইয়াসিনের দুই পায়ে গুলি লেগেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে স্থিতিশীল অবস্থায় রাখা হয়েছে। হাসপাতালের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তিনি এখন ভালো আছেন, তবে শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন।
ফাদি ইয়াসিনের সহকর্মীরা জানান, তিনি বিক্ষোভের চিত্র ধারণ করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু কোনো উস্কানিমূলক কাজ করেননি। এই হামলাটি সম্পূর্ণরূপে লক্ষ্যবস্তু হত্যার চেষ্টার অংশ হিসেবে মনে হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ফিলিস্তিনের মানবাধিকার সংস্থা ও সাংবাদিক সংগঠনগুলো এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
- কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (CPJ) জানিয়েছে, পশ্চিম তীর ও গাজ্জায় সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে না।
- জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরও সাংবাদিকদের ওপর এই ধরনের হামলাকে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে উল্লেখ করেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংবাদমাধ্যমও ইসরাইলের এই হামলার খবর পরিবেশন করেছে। তবে ইসরাইল সরকার এখনও এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি।
ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় ফিলিস্তিনিরা এই হামলাকে তাদের স্বাধীনতা ও জীবন অধিকার লঙ্ঘনের অংশ হিসেবে দেখছেন। নুর শামস শরণার্থী শিবিরের একজন বাসিন্দা বলেন, “প্রতিদিনই আমাদের ওপর হামলা হচ্ছে। সাংবাদিকদেরও এই সঙ্কটে ফেলছে ইসরাইল।”
শরণার্থী শিবিরে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ নিয়মিত বিক্ষোভে অংশ নেন। এসব বিক্ষোভ মূলত ইসরাইলি আগ্রাসন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে।
সাংবাদিকতার স্বাধীনতার জন্য গুরুত্ব
বিশ্বের সাংবাদিকতা সম্প্রদায়ের কাছে ফিলিস্তিনের ঘটনা উদ্বেগের কারণ। স্বাধীন সংবাদ সংগ্রহ ও প্রকাশের অধিকার, যা মূলত মানবাধিকার রক্ষার অংশ, সেখানে বাধা দেয়া হচ্ছে।
সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে সংবাদ সংগ্রহ করতে চাচ্ছেন, কিন্তু সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি তাদের কঠোরভাবে সীমিত করছে।
অতিরিক্ত প্রেক্ষাপট
ইসরাইলি বাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিম তীর ও গাজ্জায় নিরাপত্তার নামে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে।
- এই অভিযানগুলোতে ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষ, শিশু, নারী ও বৃদ্ধরাও প্রায়ই আক্রান্ত হয়।
- আন্তর্জাতিক সংস্থা রিপোর্টে বলেছে, সংবাদকর্মীরা গুলির মুখে পড়ছেন, হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন।
- আল জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্সসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা প্রায়ই লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকেন।
ফিলিস্তিনে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষা করা এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। ফাদি ইয়াসিনের উপর হামলা সেই চিত্রকে আবারও সামনে এনে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরদারি ও চাপ ছাড়া এই পরিস্থিতির পরিবর্তন কঠিন।
ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা, স্বাধীন সংবাদ প্রকাশে বাধা কমানো, এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষায় সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
MAH – 13901 I Signalbd.com



