বিশ্ব

গাজ্জায় ইসরাইলি হামলা: নিহত ২৮, আহত ৭৭ জন

Advertisement

চলমান যুদ্ধবিরতির মধ্যেই ফিলিস্তিনের গাজ্জা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনী (আইডিএফ) এক ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে। এই হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ২৮ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭৭ জন। হামলায় প্রাণ হারানোদের মধ্যে রয়েছেন এক পরিবার, যেখানে বাবা-মা এবং তিন সন্তানও রয়েছেন।

গাজ্জার দক্ষিণাঞ্চলে তিনটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার গাজ্জা প্রতিনিধি হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, গতকাল গাজ্জার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় তিনটি লক্ষ্যবস্তুতে ইসরাইলি বোমা হামলা চালানো হয়েছে।

তাছাড়া, গাজ্জার প্রধান শহর গাজ্জা সিটি-এর পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা শুজাইয়া এবং জয়তুনে দুটি ভবনেও বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই হামলায় হতাহতদের সংখ্যা ক্রমেই বেড়েই চলেছে।

হানি মাহমুদ আলজাজিরাকে জানান, “একটি ভবনের উপর আঘাত হানায় একটি পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। বাবা, মা এবং তাদের তিন সন্তানসহ সকল সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন।”

ফিলিস্তিনিরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন

ফিলিস্তিনে এই ধরনের নিত্যদিনের হামলা স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। গাজ্জার মানুষরা যুদ্ধের সন্ত্রাস, বোমা বিস্ফোরণ এবং ইসরাইলি বাহিনীর হঠাৎ হামলার ভয়ে জীবনযাপন করতে বাধ্য।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর এবং হাসপাতালগুলো সম্পূর্ণভাবে ভর্তি। স্থানীয় উদ্ধারকর্মীরা আহতদের তড়িঘড়ি হাসপাতালে স্থানান্তর করছেন।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ

এই হামলার পর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা ইসরাইলকে যুদ্ধবিধি লঙ্ঘনের দায়ে সতর্ক করেছে এবং হতাহত পরিবারের জন্য মানবিক সহায়তা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে।

একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বিবৃতিতে বলেছে, “শিশু ও অসহায় নাগরিকদের জীবন ক্ষুণ্ণ করা একটি গুরুতর অপরাধ। ইসরাইলকে অবিলম্বে হামলা বন্ধ করতে হবে এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।”

ইতিহাসে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত

গাজ্জা উপত্যকা এবং ইসরাইলের মধ্যে চলমান সংঘাতের ইতিহাস বহু বছর ধরে চলছে। ১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হওয়া ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাত এখনও সমাধানহীন।

  • গাজ্জা উপত্যকা ফিলিস্তিনের একটি প্রধান অঞ্চল যেখানে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস করেন।
  • ইসরাইলি হামলা প্রায়ই সিভিলিয়ান এলাকায় লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে থাকে, ফলে শিশু, নারী ও বয়স্কদের মৃত্যু ঘটে।
  • আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা চেষ্টা করা হলেও, স্থায়ী শান্তি এখনও দূরবর্তী লক্ষ্য।

মানবিক বিপর্যয় ও দারিদ্র্য

গাজ্জা উপত্যকা এক দীর্ঘমেয়াদি মানবিক সংকটের মুখোমুখি। অব্যাহত অবরোধ, খাদ্য, পানি ও বিদ্যুতের ঘাটতি ফিলিস্তিনিদের জীবনকে ক্রমেই দুর্বিষহ করে তুলছে।

বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজ্জার মানুষের ৭০% মানুষের আয় রোজগারের উপযোগী নয়। এই ধরণের হামলা তাদের জীবনকে আরও ভীতিপ্রদ করে তোলে।

স্থানীয়দের বেদনা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

হামলার পর স্থানীয়রা শোকপ্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পরিবারগুলোর ধ্বংস দেখা যাচ্ছে।

অনেক দেশই ইসরাইলের এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তবে, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক কারণে সংঘাত সমাধানে এখনও কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি।

হামলার পরবর্তী পরিস্থিতি

হামলার পর ইসরাইলি সেনারা গাজ্জার কিছু এলাকায় আবারও অভিযান চালানোর হুমকি দিয়েছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ বাহিনী প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এই সংঘাতের কারণে গাজ্জার মানুষরা রাতের ঘুম হারাচ্ছেন। শিশুদের শিক্ষাজীবন ব্যাহত হচ্ছে এবং হাসপাতাল ও স্কুলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন

  • আলজাজিরা: গাজ্জায় সাম্প্রতিক হামলায় অন্তত ২৮ জন নিহত।
  • বিবিসি: আইডিএফের বোমা হামলায় শুজাইয়া এবং জয়তুনে ধ্বংস।
  • রয়টার্স: ফিলিস্তিনি শিশু ও পরিবারগুলো হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত।

ফিলিস্তিনিদের আহ্বান

স্থানীয়রা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহায়তার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা মানবিক সাহায্য, খাদ্য ও ওষুধের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।

“আমরা চাই শান্তি, আমরা চাই নিরাপত্তা। প্রতিদিনের ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি চাই”, এক স্থানীয় ফিলিস্তিনি শরণার্থী জানিয়েছেন।

MAH – 13897 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button