বিশ্ব

কঙ্গোয় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়লো মন্ত্রীর বিমান

Advertisement

ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর কোলওয়েজি বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে আগুন ধরে যায় একটি যাত্রীবাহী বিমানে। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বিমানটিতে ছিলেন দেশটির খনিজ সম্পদ মন্ত্রী লুই ওয়াতুম কাবাম্বা। বিস্ফোরণের কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়লেও সবাই জীবিত উদ্ধার হন।

আফ্রিকার দেশ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে বড় ধরনের বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকালে কোলওয়েজি বিমানবন্দরে অবতরণের সময় একটি সরকারি ব্যবহৃত ছোট যাত্রীবাহী বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে এবং মুহূর্তেই আগুন ধরে যায়। বিমানে ছিলেন কঙ্গোর খনিজ সম্পদ মন্ত্রী লুই ওয়াতুম কাবাম্বা এবং তার সফরসঙ্গীরা। চাঞ্চল্যকর এই দুর্ঘটনায় বিমানটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেলেও যাত্রীরা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান।

বিস্তারিত: অবতরণে সমস্যা, এরপর আগুন

স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ১১টার দিকে বিমাটি কোলওয়েজি বিমানবন্দরে পৌঁছায়। অবতরণের সময় হঠাৎ বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রানওয়ে থেকে বাইরে চলে যায়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিমানের পেছনের অংশে আগুন ধরে যায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, যাত্রীরা দ্রুত বের হয়ে নিরাপদ দূরত্বে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ধোঁয়ায় আশপাশ ঢেকে যায় এবং কিছুক্ষণের মধ্যে বিমানটি পুরোপুরি আগুনে পুড়ে যায়।

কঙ্গোর সরকারি মুখপাত্র জানিয়েছেন, আগুন লাগার আগে বিমান থেকে মন্ত্রীসহ মোট ২০ জন যাত্রীকে বের করে আনা সম্ভব হয়। তাদের কেউ গুরুতর আহত হননি।

খনিমন্ত্রী কেন যাচ্ছিলেন কোলওয়েজি

কোলওয়েজি অঞ্চলটি কঙ্গোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খনি অঞ্চল। গত শনিবার এলাকায় একটি তামার খনিতে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় একটি সেতু ভেঙে পড়লে অন্তত ৩২ জন শ্রমিক নিহত হন।
এ ঘটনার পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও তদন্তে সহায়তা করতে মন্ত্রী লুই ওয়াতুম কাবাম্বা সফরসঙ্গীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যাচ্ছিলেন। রাজধানী কিনশাসা থেকে যাত্রা শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর তারা দুর্ঘটনায় পড়েন।

এর আগেও কঙ্গোর অভ্যন্তরে পুরোনো বিমান, অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামোর কারণে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে খনি অঞ্চলে নিয়মিত ভ্রমণ করা সরকারি কর্মকর্তারা প্রায়শই ছোট বিমানে যাতায়াত করেন।

দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা

দুর্ঘটনার কারণ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি, তবে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি বিষয় সামনে এসেছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অবতরণের সময় আবহাওয়া স্বাভাবিক ছিল। তবে রানওয়ে ভেজা ছিল কি না, অথবা বিমানের ব্রেক সিস্টেমে সমস্যা ছিল কি না, সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ছোট আকারের পুরনো বিমানে অতিরিক্ত যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দেওয়ার প্রবণতা বেশি। আবার কিছু বিমানবন্দরের অবকাঠামোও আধুনিক মানের নয়। ফলে সামান্য ভুল পরিচালনাতেও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
তবে তদন্ত কমিটি বিমানটির ব্ল্যাক বক্স পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো সম্ভাব্য কারণ নিশ্চিত করবে না।

দুর্ঘটনায় মন্ত্রী ও যাত্রীদের প্রতিক্রিয়া

এ ঘটনায় প্রাণে বেঁচে ফেরা যাত্রীরা জানিয়েছেন, অবতরণের মুহূর্তেই তারা বিমানের ঝাঁকুনি টের পান। এর অল্প পরেই ধোঁয়ার গন্ধ পাওয়া যায়। ক্রু সদস্যরা দ্রুত সকলকে বের হয়ে যেতে বলেন।
দুর্ঘটনার পর মন্ত্রীর উপদেষ্টা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, বিমানে থাকা যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু পাইলট ও ক্রুর দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে তারা রক্ষা পান।

কোলওয়েজিতে পৌঁছানোর পর মন্ত্রী আবারও ক্ষতিগ্রস্ত খনি এলাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, কারণ তার সফরটি মানবিক এবং প্রশাসনিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

পরিসংখ্যান: কঙ্গোয় বিমান দুর্ঘটনার সাম্প্রতিক চিত্র

ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো আফ্রিকার সবচেয়ে দুর্ঘটনাপ্রবণ বিমান পরিবহন ব্যবস্থার একটি।
গত এক দশকে সেখানে ৫০টির বেশি ছোট বা মাঝারি আকারের বিমান দুর্ঘটনার খবর মিলেছে।
অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণ, প্রশিক্ষণের ঘাটতি এবং অবকাঠামো দুর্বলতার কারণে এই দুর্ঘটনার হার কমছে না। কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা দেশটির বেশ কিছু এয়ারলাইন্সকে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ তালিকাভুক্ত করে রেখেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার বিমানবন্দর আধুনিকীকরণ ও নিরাপত্তা মান উন্নত করার উদ্যোগ নিলেও দেশের বিশাল ভৌগোলিক বিস্তৃতি এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে ফলাফল এখনও পুরোপুরি দৃশ্যমান নয়।

ভবিষ্যতে কী ধরনের ব্যবস্থা প্রয়োজন

বিশ্লেষকদের মতে, কঙ্গোর বিমান নিরাপত্তা উন্নয়নের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
প্রথমত, পুরনো এবং ঝুঁকিপূর্ণ ছোট বিমানগুলো অপসারণ বা আধুনিকীকরণ করা জরুরি।
দ্বিতীয়ত, যান্ত্রিক ত্রুটি কমাতে রক্ষণাবেক্ষণে বড় ধরনের বিনিয়োগ প্রয়োজন।
তৃতীয়ত, রানওয়ে ও কন্ট্রোল সিস্টেমসহ বিভিন্ন অবকাঠামো আপডেট না হলে এরকম দুর্ঘটনা চলতেই থাকবে।

এছাড়া খনি অঞ্চলগুলোতে নিয়মিত ভ্রমণ করা সরকারি কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ ব্যবস্থাপনা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

কঙ্গোর কোলওয়েজি বিমানবন্দরে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনা আবারও দেখাল, দেশটির বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখনও বড় ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে আশার বিষয়, মন্ত্রী ও সব যাত্রী জীবন নিয়ে ফিরে আসতে পেরেছেন।
সরকার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করলে প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এর মাধ্যমে বিমান নিরাপত্তা উন্নয়নে নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই দুর্ঘটনা দেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতে কতটা পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়।

এম আর এম – ২২৯৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button