বিশ্ব

গাজ্জা গণহত্যায় ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা ছুঁই ছুঁই ৭০ হাজার

Advertisement

গাজ্জা অঞ্চলে চলমান ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে এখন ৬৯,৪৮৩ জনে পৌঁছেছে। গাজ্জা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রবিবার (১৬ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানা যায়, শুধু গত ৭২ ঘন্টায় গাজ্জার বিভিন্ন হাসপাতাল ১৭টি লাশ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে ২টি সদ্য নিহত ব্যক্তি এবং বাকি ১৫টি ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। একই সময়ে, ইসরাইলি বিমান হামলায় আরও ৩ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত মাসে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পরও ইহুদিবাদী সন্ত্রাসী সেনাদের হামলায় ২৬৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬৩৫ জন আহত হয়েছেন।

গণহত্যার শুরু এবং বিস্তার

অক্টোবর ২০২৩ থেকে শুরু হওয়া এই ইসরাইলি সামরিক অভিযান এবং গণহত্যায় এখন পর্যন্ত ৬৯,৪৮৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ১,৭০,৭০৬ জন আহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শিশুসহ সাধারণ নাগরিকদের ওপর হামলা আরও ভয়াবহ মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজ্জায় চলমান এই সংঘাত শুধু ফিলিস্তিনিদের জীবননাশের কারণ নয়, বরং মানবিক ও সামাজিক সংকটও বৃদ্ধি করছে। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।

শিশু ও নারী আক্রান্তের সংখ্যা

গাজ্জার শিশু ও নারীও এই হিংসার সবচেয়ে বড় শিকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নিহতের মধ্যে প্রায় ৪০% শিশু এবং নারী। বিশেষভাবে, গত মাসে ৫০০ শিশু নিহত হয়েছেন। এই সংখ্যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষেও গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

গাজ্জা গণহত্যা নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ চলছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ইসরাইলের প্রতি অবিলম্বে হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।

জাতিসংঘের হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (UNHCR) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “গাজ্জার নিরীহ মানুষের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা উচিত।”

এছাড়া, তুরস্ক, কাতার, সৌদি আরব ও মিসরসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও গণহত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

মানবিক সংকট ও স্বাস্থ্য সমস্যা

গাজ্জার হাসপাতালগুলো ইতিমধ্যেই অসহনীয় চাপের মুখে পড়েছে। বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে চিকিৎসা কার্যক্রম সীমিত হয়ে গেছে। শিশুদের জন্য ভ্যাকসিন, জরুরি ওষুধ এবং খাদ্য সরবরাহও যথেষ্ট নয়।

এছাড়া, আহতদের চিকিৎসা ব্যয়ভার ও হাসপাতালে বেডের অভাব বেড়ে যাওয়ায় হতাহতদের পরিবারের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া গাজ্জার মানবিক সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব

এই সংঘাতের ফলে গাজ্জার অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত। চাকরি হারানো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা এবং সাধারণ নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে স্থানীয় মানুষদের জীবনে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধ্বংসযজ্ঞের কারণে গাজ্জার পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনর্বাসন কয়েক বছর সময় নিতে পারে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট

বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম গাজ্জা গণহত্যার খবর সরাসরি সম্প্রচার করছে। আল জাজিরা, বিবিসি, সিএনএন এবং রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “গাজ্জায় হত্যাযজ্ঞ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।”

এই গণহত্যা শুধু ফিলিস্তিনে নয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলেছে। বিভিন্ন দেশকে নীতিগত অবস্থান নিতে বাধ্য করছে এবং মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়াকে নতুনভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে।

সামাজিক মাধ্যম ও জনমত

গাজ্জা গণহত্যা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা চলছে। বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষ, মানবাধিকার কর্মী ও ছাত্রছাত্রীরা হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে প্রতিবাদ করছেন। এই আন্দোলন আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে সাহায্য করছে।

গাজ্জার ভবিষ্যৎ

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইসরাইলি হামলা অব্যাহত থাকলে মানবাধিকার লঙ্ঘন আরও বাড়বে এবং গাজ্জার পুনর্গঠন কঠিন হয়ে যাবে। শিশু ও নারীদের নিরাপত্তা সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে।

গাজ্জার এই পরিস্থিতি শুধু ফিলিস্তিনি জনগণের নয়, পুরো মানবতার জন্য একটি সতর্কবার্তা। বিশ্ব নেতাদের দায়িত্ব, অবিলম্বে হামলা বন্ধ করা এবং গাজ্জায় মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা।

MAH – 13840 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button