মেক্সিকোতে দুর্নীতি, বিচারহীনতা এবং সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে তরুণদের নেতৃত্বে একটি বিশাল জনআন্দোলন সংগঠিত হয়েছে। শনিবার (১৫ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ, যা একটি সাধারণ প্রতিবাদ থেকে শুরু হয়ে দাঙ্গার আকার ধারণ করেছে।
জেন-জি নামক সামাজিক আন্দোলনের ডাকের পরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় নেমে এসেছে তরুণদের ভিড়। মূলত, মিচোয়াকান প্রদেশের নিহত মেয়র কার্লোস মানজোর সমর্থকরা এই আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসেবে খড়ের টুপি পরে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন।
সংঘর্ষ এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ
মেক্সিকো সিটির প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেইনবাউমের বাসভবনের আশেপাশে হুড পরা একটি দলে অংশ নেওয়া বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে। এসময় দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে।
মেক্সিকো সিটির জননিরাপত্তা সচিব পাবলো ভাজকুয়েজ সংবাদ সম্মেলনে জানান, এই সংঘর্ষে ১০০ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৪০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। এদিকে ২০ জন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হন। এছাড়া সংঘর্ষে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সামাজিক অস্থিরতার বড় প্রেক্ষাপট
জেন-জি আন্দোলন কেবল মেক্সিকোতেই সীমাবদ্ধ নয়। এ বছরের প্রথমার্ধে এশিয়া ও আফ্রিকা জুড়ে এই আন্দোলন সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য, গণতান্ত্রিক নিয়মের অবক্ষয়, দুর্নীতি ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিক্ষোভের আয়োজন করেছে।
- বাংলাদেশে, জেন-জি আন্দোলনের চাপ ও সামাজিক আন্দোলনের কারণে স্বৈরশাসক সরকারের বিরুদ্ধে জনআন্দোলন দেখা গেছে।
- নেপালে, সামাজিক মাধ্যমের ওপর সরকারী নিষেধাজ্ঞার পর সেপ্টেম্বরে জেন-জি বিক্ষোভে সরকার পতনের পরিস্থিতি তৈরি হয়।
- মাদাগাস্কার-এ বিদ্যুৎ ও পানির সংকট নিয়ে তরুণদের বিক্ষোভে দেশটির প্রেসিডেন্ট আন্দ্রি রাজোয়েলিনা সরকার ভেঙে দেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান বিশ্বে তরুণ প্রজন্ম সামাজিক ন্যায় ও স্বচ্ছতার জন্য দৃঢ় মনোভাব দেখাচ্ছে। বিশেষ করে জেন-জি আন্দোলন দুর্নীতি ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সরাসরি প্রতিবাদের মাধ্যমে জনমতকে একত্রিত করছে।
মেক্সিকোর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
মেক্সিকোতে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, সরকারি কর্মকর্তাদের অপদায় এবং বিচার ব্যবস্থার ধীরগতি জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের প্রধান কারণ।
নিহত মেয়র কার্লোস মানজোর সমর্থকরা মনে করেন, তার মৃত্যু মেক্সিকোর রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি প্রতীক। তার সমর্থকরা মনে করেন, তার মৃত্যুর পরও রাজনৈতিক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া উচিত যাতে স্থানীয় জনগণের অধিকার ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
মেক্সিকোর এই আন্দোলন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজরে এসেছে। আল জাজিরা, বিবিসি ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বিশদ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই আন্দোলন কেবল মেক্সিকোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; এটি লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশেও প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, “জেন-জি আন্দোলন মূলত তরুণ প্রজন্মের একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক, যারা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়ের জন্য একত্রিত হচ্ছে। তারা প্রমাণ করছে যে ক্ষমতা মানুষের কাছ থেকে দূরে নয়, জনগণের কাছে প্রতিনিয়ত জবাবদিহি থাকা দরকার।”
সামাজিক মাধ্যম ও জনমত
বিক্ষোভের খবর সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। হ্যাশট্যাগ #GenG, #JusticeForCarlos এবং #NoMoreCorruption বিশ্বজুড়ে ট্রেন্ডিং হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামাজিক মাধ্যম এখন শুধুমাত্র খবরের মাধ্যম নয়, এটি একটি শক্তিশালী প্রতিবাদ ও আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম।
মেক্সিকোর ভবিষ্যৎ ও তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই আন্দোলন মেক্সিকোর তরুণদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াবে এবং তাদেরকে দুর্নীতি, বিচারহীনতা ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে উৎসাহিত করবে।
মেক্সিকোর যুব সমাজ দেখাচ্ছে, তারা শুধুমাত্র প্রতিবাদ করছে না, বরং একটি দূরদর্শী পরিকল্পনা ও সামাজিক আন্দোলনের অংশ হিসেবেও নিজেদের স্থাপন করছে। এটি ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পথ খুলে দিতে পারে।
মেক্সিকোর জেন-জি আন্দোলন প্রমাণ করছে যে, দুর্নীতি, বিচারহীনতা এবং সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনগণ যে কোনো সীমা অতিক্রম করতে প্রস্তুত। এই আন্দোলন কেবল স্থানীয় সমস্যার সমাধান নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক তরুণ আন্দোলনের অংশ।
মেক্সিকো এবং অন্যান্য দেশগুলোর উদাহরণ থেকে স্পষ্ট যে, সামাজিক ন্যায়, গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতা অর্জনের জন্য তরুণ প্রজন্মের শক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জেন-জি আন্দোলন ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা প্রদান করছে: “ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার জন্য আন্দোলন থামবে না।”
MAH – 13820 I Signalbd.com



