বিশ্ব

৯ হাজারেরও বেশি অভিবাসীকে ফেরত পাঠিয়েছে মালদ্বীপ

Advertisement

মালদ্বীপে অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো এবং বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশটি অভিবাসী নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করছে।

মালদ্বীপে গত দুই বছরে ৯ হাজারেরও বেশি অভিবাসীকে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ মুইজ্জু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে মোট ১ লাখ ৯১ হাজার ৭০০ জন অভিবাসীর বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যা মালদ্বীপে অভিবাসী নিয়ন্ত্রণকে আরও কার্যকর করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে।

ফেরত পাঠানো অভিবাসী ও সরকারের পদক্ষেপ

প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু জানান, ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের মধ্যে রয়েছে অনিবন্ধিত অভিবাসী, বিভিন্ন অপরাধে জড়িত প্রবাসী এবং যারা বৈধ হতে ইচ্ছুক হননি। এই সংখ্যাটি পূর্ববর্তী সরকারের তুলনায় ১৪৩ শতাংশ বেশি।

তিনি আরও বলেন, সরকারি পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো অবৈধ অভিবাসীদের সমস্যা সমাধান করা। বর্তমান প্রশাসন এই সমস্যার সমাধানকে অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে গ্রহণ করেছে।

বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ

মালদ্বীপ সরকার অভিবাসী নিয়ন্ত্রণে বায়োমেট্রিক তথ্যের উপর গুরুত্বারোপ করেছে। মোট ১ লাখ ৯১ হাজার ৭২৩ জন অভিবাসীর বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই তথ্যের মাধ্যমে জানা গেছে মালদ্বীপে কারা অভিবাসী, তারা কোথায় বসবাস করছে এবং কীভাবে কাজ করছে।

প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু বলেন, “এখন আমাদের হাতে সম্পূর্ণ প্রাসঙ্গিক তথ্য রয়েছে, যা অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত এবং নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে।”

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

মালদ্বীপে অভিবাসী নিয়ন্ত্রণের সমস্যা পূর্ববর্তী সরকারের সময় থেকেই ছিল। তবে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বর্তমান প্রশাসন ক্ষমতায় এসে অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধান শুরু করেছে। বিশেষ করে অবৈধ অভিবাসী এবং অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং তাদের ফিরিয়ে পাঠানোই মূল লক্ষ্য।

প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু বলেন, “পূর্ববর্তী সরকাররা সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হলেও আমরা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে এই পদক্ষেপ নিয়েছি।”

প্রতিক্রিয়া এবং প্রভাব

মালদ্বীপের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হলেও স্থানীয় অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে তা উদ্বেগ তৈরি করেছে। অভিবাসীরা জানাচ্ছেন, তাদের জন্য অবাধে বসবাস এবং কাজের সুযোগ সীমিত হচ্ছে।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যারা নিয়মিত বায়োমেট্রিক তথ্য দিচ্ছে এবং বৈধতার জন্য আবেদন করেছে, তাদের ওপর কোনো ধরনের ক্ষতি হবে না। এভাবে দেশের অভিবাসী নীতিমালা আরও শক্তিশালী হচ্ছে এবং বৈধ অভিবাসীদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

মালদ্বীপ সরকার আগামী শনিবার (১৫ নভেম্বর) পর্যন্ত বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের সময়সীমা শেষ করবে। রোববার (১৬ নভেম্বর) থেকে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে। এই অভিযানে যারা নিবন্ধিত না থাকবেন বা বায়োমেট্রিক তথ্য জমা না দেবেন, তাদের অবিলম্বে নির্বাসিত করা হবে।

প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু জানান, এই পদক্ষেপ মালদ্বীপে অভিবাসী নিয়ন্ত্রণকে আরও কার্যকর করবে এবং দেশের নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।

বিশ্লেষণ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মালদ্বীপের অভিবাসী নীতি শক্তিশালী করার এই পদক্ষেপ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর জন্য উদাহরণ হতে পারে। বায়োমেট্রিক তথ্যের মাধ্যমে যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তা অভিবাসী নিয়ন্ত্রণ এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করেন, যদি অভিবাসীরা নিয়ম মেনে বৈধভাবে নিবন্ধিত হন, তবে তাদের জন্য কর্মসংস্থান এবং বাসস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এই পদক্ষেপ শুধু অবৈধ অভিবাসীদের জন্য নয়, বরং বৈধ অভিবাসীদেরও নিরাপত্তা প্রদান করবে।

মালদ্বীপে ৯ হাজারেরও বেশি অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো এবং বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের পদক্ষেপ দেশটিকে অভিবাসী নিয়ন্ত্রণে আরও শক্তিশালী করেছে। প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর প্রশাসনের এই উদ্যোগ দেশের নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই নীতির কার্যকারিতা নির্ভর করবে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের বাস্তবায়ন এবং বৈধ অভিবাসীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার উপর।

এম আর এম – ২২৪৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button