ইসরায়েলি সেনাদের হাতে ফিলিস্তিনি নারী বন্দিদের ওপর ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের ঘটনা বিশ্বজুড়ে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। মুসলিম বিশ্বের নীরবতা নিয়ে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন ইসলামি চিন্তাবিদ মাহমুদ আল হাসানাত।
ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি নারী বন্দিদের ওপর নির্যাতনের ভয়াবহ বর্ণনা
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া একাধিক ফিলিস্তিনি নারী বন্দি ইসরায়েলি সেনাদের হাতে যৌন নির্যাতনের ভয়ঙ্কর চিত্র প্রকাশ করেছেন। মানবাধিকার সংস্থা ‘প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস’ (পিসিএইচআর) জানিয়েছে, এই নারী বন্দিরা কারাগারে অমানবিক নির্যাতন, জোরপূর্বক নগ্ন করা, ভিডিও ধারণ ও শারীরিক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
একজন সাবেক নারী বন্দি জানিয়েছেন, তাকে ধর্ষণ করেছে ৪ ইসরায়েলি সেনারা। বন্দিদশায় চোখ বেঁধে মারধর, বৈদ্যুতিক শক, এবং কাপড় খুলে নির্যাতনের মতো বর্বর আচরণ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।
এই বর্ণনাগুলো প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও, এখনো পর্যন্ত কোনো শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
মাহমুদ আল হাসানাতের ক্ষোভ: “ঘুমাও ভালো করে, হে মুহাম্মাদের জাতি!”
এই নির্মম ঘটনার পর ইসলামি বক্তা মাহমুদ আল হাসানাত তার ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে লিখেছেন, “বন্দিকে ধর্ষণ করেছে ৪ ইসরায়েল সেনা! ঘুমাও ভালো করে, হে মুসলমানদের জাতি!!”
তার এই পোস্টটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। লাখো মুসলমান শেয়ার, মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নিজেদের ক্ষোভ ও লজ্জা প্রকাশ করেন।

ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ: সাবেক কর্মকর্তার গ্রেফতার
সম্প্রতি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সাবেক আইন কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ইফাত তোমের-ইয়েরুশালমিকে একটি ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, দক্ষিণ ইসরায়েলের তেইমান ঘাঁটিতে এক ফিলিস্তিনি বন্দিকে ভয়াবহ নির্যাতন করা হচ্ছে। ভিডিওটি ফাঁস হতেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
এই ঘটনায় ইসরায়েলি সমাজেও গভীর বিভাজন তৈরি হয়েছে। একদল বলছে, সেনাদের এই আচরণ মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন, অন্যদিকে ডানপন্থিরা বলছে—এই অভিযোগ ইসরায়েলের মানহানি ঘটাতে সাজানো নাটক।
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগ
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজার নারী, শিশু ও পুরুষ বন্দিদের ওপর পরিকল্পিত নির্যাতন, যৌন সহিংসতা ও মানসিক নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে।
এগুলো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও যুদ্ধবিরোধী আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।
পিসিএইচআর ও অন্যান্য সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা অবিলম্বে ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর চলমান নির্যাতনের অবসান ঘটাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।
তাদের দাবি, বন্দিদের অবস্থান প্রকাশ, আন্তর্জাতিক রেড ক্রসকে পূর্ণ প্রবেশাধিকার দেওয়া এবং বন্দি বিনিময় কর্মসূচি ত্বরান্বিত করতে হবে।
মুসলিম বিশ্বের নীরবতা: কেন প্রতিবাদ নেই?
এই ঘটনার পর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠছে—মুসলিম বিশ্বের নীরবতার কারণ কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক বিভাজন, ক্ষমতার ভারসাম্য, এবং আন্তর্জাতিক চাপে অনেক মুসলিম রাষ্ট্র ফিলিস্তিন ইস্যুতে মুখ খুলতে ভয় পায়।
একজন মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক বলেন, “মুসলমানদের এক সময়ের ঐক্য আজ ভেঙে গেছে। ফিলিস্তিনের রক্তক্ষয়ী ইতিহাস আজ আর কারও বিবেক নাড়ায় না।”
এই নীরবতা বিশ্বজুড়ে সাধারণ মুসলমানদের হৃদয়ে গভীর ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
মানবতার পরীক্ষা: ন্যায়বিচার কি আসবে?
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এই সব অপরাধ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিচারযোগ্য। কিন্তু বাস্তবে এসব মামলার অগ্রগতি নেই।
বিশ্বশক্তিগুলোর রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে ফিলিস্তিনিদের ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবুও মানবাধিকার কর্মীরা আশা করছেন, একদিন না একদিন এই নৃশংসতার জবাব ইতিহাসই দেবে।
এম আর এম – ২২০৪,Signalbd.com



