সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমদ শার’আ আল জুলানী সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন যে, ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কোনো আলোচনায় সিরিয়া এখনো প্রস্তুত নয়। তিনি বলেন, সিরিয়ার পরিস্থিতি অন্যান্য আব্রাহাম চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশের তুলনায় আলাদা। তাই এই মুহূর্তে সরাসরি কোনো আলোচনায় বসার কোনো পরিকল্পনা নেই।
শার’আ আল জুলানী ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা এখনই সরাসরি আলোচনায় বসছি না। তবে মার্কিন প্রশাসন যদি চাই, তারা আমাদেরকে এই ধরনের আলোচনায় পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, গোলান মালভূমি ইসরাইলের দীর্ঘদিনের দখলের বিষয়টি সিরিয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সিরিয়ার সঙ্গে ইসরাইলের সীমান্ত রয়েছে এবং ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরাইল গোলান মালভূমি দখল করে রেখেছে। এই দীর্ঘকালীন দখল সিরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে এক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
আব্রাহাম চুক্তি এবং সিরিয়ার অবস্থান
২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের নেতৃত্বে ইসরাইল ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য ‘আব্রাহাম চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং পরবর্তীতে মরক্কো ও সুডানের মতো দেশগুলো অংশ নেয়। ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী, সিরিয়া ও সৌদি আরবও ভবিষ্যতে এই চুক্তিতে যোগ দিতে পারে।
তবে শার’আ আল জুলানী মনে করিয়ে দেন যে, সিরিয়ার রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক অবস্থান অন্য দেশগুলোর চেয়ে আলাদা। তাই সিরিয়ার পক্ষ থেকে ইসরাইলের সঙ্গে কোনো যৌথ বা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রস্তাব এখনও কার্যকর নয়।
তিনি বলেন, “আমরা অন্য দেশগুলোর মতো দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছি না। আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তা, ভূ-রাজনীতি এবং জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।”
গোলান মালভূমি: সিরিয়ার সবচেয়ে বড় দাবি
গোলান মালভূমি ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের পর থেকে ইসরাইলের দখলে। সিরিয়া এই অঞ্চলকে তাদের জাতীয় ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে আসছে।
শার’আ আল জুলানী বলেন, “গোলান মালভূমি আমাদের দেশের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। ইসরাইলের দখল আমাদের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে। তাই এই বিষয়ে কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না।”
বিশ্লেষকরা মনে করেন, সিরিয়ার এই অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করতে পারে। কারণ অন্যান্য আব্রাহাম চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলো ইতিমধ্যেই ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে।
সিরিয়ার আইএস বিরোধী নীতি
শার’আ আল জুলানী আইএস বিরোধী বৈশ্বিক জোটের সঙ্গে সিরিয়ার অংশগ্রহণ সম্পর্কেও বক্তব্য রাখেন। তিনি জানান, সিরিয়ার ভূখণ্ডে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি থাকায় এই জোটে কিছু সমন্বয় প্রয়োজন। তবে এটি করার সময় সিরিয়ার সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় করা হবে।
তিনি বলেন, “আমরা চাই আমাদের দেশের স্বার্থ এবং সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ থাকুক। মার্কিন ও অন্যান্য দেশের সামরিক উপস্থিতি যদি প্রয়োজন হয়, তা হবে আমাদের শর্তে এবং আমাদের সরকারের অনুমোদনের সঙ্গে।”
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি: সিরিয়ার চ্যালেঞ্জ
সিরিয়ার এই অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়ার সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক না হলে, গোলান মালভূমি ও অন্যান্য সীমান্ত বিষয় দীর্ঘ সময় ধরে দ্বিপাক্ষিক সমস্যা হিসেবে রয়ে যাবে।
মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সিরিয়ার কঠোর অবস্থান ইসরাইল ও তার মিত্র দেশগুলোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। তারা বুঝতে পারবে যে, শুধুমাত্র চুক্তি স্বাক্ষর বা বৈদেশিক চাপ দিয়ে সিরিয়াকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বাধ্য করা যাবে না।
ভবিষ্যৎ কৌশল
শার’আ আল জুলানী স্পষ্ট করেছেন যে, সিরিয়া পরিস্থিতি বিবেচনা করে ধাপে ধাপে কৌশল নেবে। বর্তমান সময়ে সরাসরি আলোচনায় অংশ নেওয়া না হলেও, তারা সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ আলোচনার জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সিরিয়ার এই অবস্থান মার্কিন প্রশাসনের জন্যও নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। কারণ ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সিরিয়াও আব্রাহাম চুক্তিতে যুক্ত হওয়া উচিত ছিল।
শার’আ আল জুলানী এ বিষয়ে বলেন, “আমরা শান্তি চাই, কিন্তু আমাদের শর্ত এবং দেশের স্বার্থ অগ্রাধিকার পাবে। কোন পরিস্থিতিতেই আমরা স্বার্থবিরোধী পদক্ষেপ নেব না।”
সারসংক্ষেপ
- সিরিয়া, ইসরাইল, সম্পর্ক স্বাভাবিক, প্রেসিডেন্ট, আন্তর্জাতিক খবর, মধ্যপ্রাচ্য, রাজনীতিপ্রেসিডেন্ট আহমদ শার’আ আল জুলানী ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের আলোচনায় অংশ নেবেন না।
- গোলান মালভূমির ইসরাইলি দখল সিরিয়ার প্রধান নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থের বিষয়।
- সিরিয়া আব্রাহাম চুক্তিতে অন্যান্য দেশের মতো যুক্ত হবে না, কারণ তাদের রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভিন্ন।
- সিরিয়া আইএস বিরোধী জোটের সঙ্গে কাজ করবে, তবে সবকিছু দেশের স্বার্থ অনুযায়ী।
- মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে সিরিয়ার অবস্থান একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
MAH – 13765 I Signalbd.com



