আজারবাইজান থেকে তুরস্কের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে জর্জিয়া-আজারবাইজান সীমান্তের কাছে তুরস্কের একটি সি-১৩০ সামরিক কার্গো বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদুলু এজেন্সি এই খবর নিশ্চিত করেছে।
ঘটনা সংক্ষিপ্ত বিবরণ
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উক্ত বিমানটি আজারবাইজানের বাকু শহর থেকে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা যাওয়ার পথে বিধ্বস্ত হয়েছে। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ এখনও স্পষ্টভাবে জানা যায়নি, তবে প্রাথমিকভাবে আবহাওয়া বা প্রযুক্তিগত ত্রুটিকে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান আজকের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের জানান, “আজারবাইজান থেকে তুরস্কে আসার পথে একটি সি-১৩০ সামরিক বিমান জর্জিয়া-আজারবাইজান সীমান্তের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছে। আমরা গভীরভাবে দুঃখিত এবং এটি আমাদের জন্য একটি বড় বিপর্যয়।”
তিনি আরও বলেন, “সমন্বিত অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। আমরা প্রার্থনা করি ঈশ্বর আমাদের শহীদদের প্রতি করুণা করুন।”
তুরস্কের কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়েরলিকাও এই দুর্ঘটনার বিষয়ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এনসোসিয়ালে একটি পোস্টে লিখেছেন, “আমরা উদ্ধার ও অনুসন্ধান কার্যক্রমে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করেছি এবং আহত বা নিখোঁজদের দ্রুত উদ্ধার করতে কাজ চালাচ্ছি।”
এছাড়াও, তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ জানিয়েছে, “জর্জিয়ার কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়েছে। আমরা সব ধরনের সাহায্য ও সমর্থন প্রদানের জন্য প্রস্তুত।”
বিমান এবং আরোহী সম্পর্কিত তথ্য
প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বিমানটিতে কতজন আরোহী ছিলেন তা এখনও নিশ্চিত নয়, এবং সম্ভাব্য হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিমানটি একটি কার্গো ও সামরিক সরঞ্জাম পরিবহনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছিল।
অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান
বিধ্বস্ত বিমানের অবস্থান নির্ধারণে জর্জিয়ান ও তুর্কি কর্মকর্তারা যৌথভাবে অভিযান চালাচ্ছেন। উদ্ধারকারীরা বিশেষ ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে দুর্ঘটনাস্থল চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন।
সীমান্ত এলাকাটি পাহাড়ী এবং দুর্গম হওয়ায় উদ্ধার অভিযান কিছুটা জটিল হয়েছে। তবে তুর্কি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা সব ধরনের প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ ব্যবহার করে উদ্ধার অভিযান সফল করতে সচেষ্ট।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ঘটনার খবর প্রকাশ হতেই আন্তর্জাতিক মহল থেকে শোক প্রকাশ করা হয়েছে। তুরস্কের প্রতিবেশী দেশগুলো এবং ন্যাটো মিত্ররা উদ্ধার কাজে সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে, আজারবাইজান সরকার ইতিমধ্যেই উদ্ধার ও সহায়তা প্রদানে তুরস্কের সঙ্গে সমন্বয় শুরু করেছে।
সামরিক বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাস
সি-১৩০ বিমান একটি মাল্টি-পারপাস সামরিক কার্গো বিমান, যা সাধারণত সেনা সরঞ্জাম, মানবিক সাহায্য এবং সৈন্য পরিবহনে ব্যবহৃত হয়। অতীতেও এই ধরনের বিমান প্রযুক্তিগত ত্রুটি, আবহাওয়া এবং অন্যান্য অপ্রত্যাশিত কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সামরিক বিমান দুর্ঘটনা প্রায়ই আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও দ্রুত অনুসন্ধান কার্যক্রম ছাড়া কঠিন হয়। এজন্য তুরস্ক এবং জর্জিয়ার যৌথ প্রচেষ্টা এই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
তুরস্কের সাধারণ জনগণ এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা এই দুর্ঘটনার খবর শোনার পর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। অনেকেই আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছেন এবং নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছেন।
শেষ পর্যবেক্ষণ
বিমান বিধ্বস্ত হওয়া একটি বড় দুর্ঘটনা, যা সেনা, স্থানীয় প্রশাসন এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ছাড়া সমাধান করা কঠিন। এই মুহূর্তে মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিখোঁজদের উদ্ধারে দ্রুততা এবং নিরাপদে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা।
তুরস্ক ও জর্জিয়ার যৌথ প্রচেষ্টায় আশার আলো দেখা দিচ্ছে। তবে এই ধরনের দুর্ঘটনা সামরিক বিমানের নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত ত্রুটির গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছে।
MAH – 13762 I Signalbd.com



