গাজা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় আশ্রয়, ত্রাণ ও পুনর্নির্মাণ প্রাধান্য পাবে: হামাস
![গাজা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় আশ্রয়, ত্রাণ ও পুনর্নির্মাণ প্রাধান্য পাবে: হামাস](https://signalbd.com/wp-content/uploads/2025/02/signal-bd-8-780x470.webp)
গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা ও দরকষাকষি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের বরাতে এএফপি এই তথ্য জানিয়েছে। হামাসের মুখপাত্র আবদেল লতিফ আল-কানোউ এক বিবৃতিতে বলেন, “(যুদ্ধবিরতির) দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে যোগাযোগ ও আলোচনা শুরু হয়েছে। আমরা গাজাবাসীদের জন্য আশ্রয়, ত্রাণ ও গাজার পুনর্নির্মাণকে প্রাধান্য দিচ্ছি।”
ইসরায়েল নিশ্চিত করেছে, তারা এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ কাতারে মধ্যস্থতাকারীদের পাঠাবে। তবে আলোচনায় হামাস বা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কারা যোগ দেবেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
যুদ্ধবিরতির পটভূমি
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এই হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫১ জন মানুষ। সেদিনই গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক, নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। শুরুতে বিমান হামলার পর স্থলবাহিনীও এতে যোগ দেয়। এই ১৫ মাসব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞে গাজার বেশিরভাগ স্থাপনা ধ্বংস হয়ে যায়। নিহত হন অন্তত ৪৭ হাজার ৫১৮ ফিলিস্তিনি, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এই দীর্ঘ সময়ে ২০২৩ সালের নভেম্বরে মাত্র ৭ দিনের যুদ্ধবিরতি কার্যকর ছিল। দীর্ঘ আলোচনার পর ১৯ জানুয়ারি থেকে হামাসের হাতে থাকা জিম্মি ও ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগারে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির শর্তে দুই পক্ষ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। প্রথম পর্যায়ে ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতির বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়েছে।
মার্কিন ভূমিকা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধবিরতিকে ভঙ্গুর বলে অভিহিত করেছেন এবং এর স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আজ ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করবেন ট্রাম্প। ওই বৈঠকে বিশেষ গুরুত্ব পাবে গাজার যুদ্ধবিরতি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হামাসের বিবৃতি এবং ইসরায়েলের প্রতিনিধিদল পাঠানোর ঘোষণা যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক অগ্রগতি নির্দেশ করে।
ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ ও ট্রাম্পের অন্যান্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকের পর নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, “ইসরায়েল একটি কার্যনির্বাহী প্রতিনিধি দলকে এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ দোহায় পাঠাবে। তারা (যুদ্ধবিরতি) চুক্তির বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখার কারিগরি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন।”
গাজায় মানবিক সংকট
গাজা যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট মানবিক সংকট এখন মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। আশ্রয়হীন লাখো মানুষ ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল। যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় জটিলতা রয়ে গেছে। হামাসের মুখপাত্রের মতে, “গাজাবাসীদের জন্য দ্রুত পুনর্গঠন ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।”
জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যুদ্ধবিরতির টেকসই বাস্তবায়ন এবং মানবিক সহায়তার নিশ্চয়তার ওপর জোর দিচ্ছে। বিশেষ করে উত্তর গাজায় ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে বড় ধরনের সহায়তা প্রয়োজন।
যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ের সম্ভাবনা
বিশ্লেষকদের মতে, দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা ফলপ্রসূ হলে গাজার জন্য দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তবে উভয় পক্ষের আস্থা অর্জন এবং সমঝোতা নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ। ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে দীর্ঘদিনের শত্রুতা, পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং রাজনৈতিক চাপ যুদ্ধবিরতির অস্থায়িত্ব বাড়াতে পারে।
উপসংহার
গাজা যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় আশ্রয়, ত্রাণ, ও পুনর্গঠনের বিষয়টি অগ্রাধিকার পেয়েছে। এই আলোচনা শুধুমাত্র যুদ্ধবিরতির সময়সীমা নয়, গাজার মানুষের জীবনমান উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা গাজার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।