বিশ্ব

আসিম মুনির তালেবানবিরোধীদের খুশি করতে গিয়ে পাক–আফগান সম্পর্ক নষ্ট করছেন

Advertisement

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সাম্প্রতিক সময়ে সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের আফগানিস্তান বিষয়ক নীতিকে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছেন। ইমরান খানের মতে, আফগান সরকারের বিরোধী একটি রাজনৈতিক লবিকে খুশি করতে গিয়ে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের প্রাচীন ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, “বর্তমান সময়ে আমাদের আফগান জনগণকে সাহায্য করা উচিত, বিতাড়ন নয়।”

ইমরান খানের মতে, দশকের পর দশক পাকিস্তান আফগান ভাইদের আতিথেয়তা দিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে, যখন আফগানিস্তান ভয়াবহ ভূমিকম্প ও মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে, তখন তাদের জোর করে দেশ থেকে বিতাড়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “এমন সময় আমাদের উচিত সহায়তা করা, বিতাড়ন নয়। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি অপরিহার্য।”

আফগানিস্তানে সহায়তার আহ্বান

ইমরান খান সোমবার আদিয়ালা জেল থেকে পাঠানো এক বার্তায় আরও বলেন, “পাকিস্তান আফগান জনগণের দীর্ঘমেয়াদি বন্ধু। আমাদের উচিত আফগান ভাইদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা, যাতে তারা সংকটময় পরিস্থিতিতে আমাদের সহযোগিতা অনুভব করে।”

তিনি বিশেষভাবে খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিনকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আফগানিস্তানে গিয়ে সরাসরি আলোচনায় বসে পারস্পরিক সমস্যা সমাধান, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনা করা উচিত। ইমরান বলেন, “এই পদক্ষেপই একমাত্র উপায় পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগে নিয়ন্ত্রণে আনার। যদি আমরা সময়মতো পদক্ষেপ নেই, তবে এটি ভবিষ্যতে বড় সংকট তৈরি করতে পারে।”

পাকিস্তান সরকারের দ্বিচারিতা নিয়ে প্রশ্ন

ইমরান খান পাকিস্তান সরকারের নীতি ও দ্বিচারিতার প্রসঙ্গেও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “যখন মরিয়ম নওয়াজের মতো নেতারা জাপান ও থাইল্যান্ডে ভ্রমণ করতে পারছেন, তখন কেন খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আফগানিস্তানে গিয়ে প্রদেশের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য কাজ করতে পারছেন না?” এই মন্তব্যে তিনি স্পষ্ট করে দেন যে, সরকারের নীতি প্রায়ই দ্বিচারিতাপূর্ণ এবং রাজনৈতিক প্রভাবিত।

আফগানিস্তানের মানবিক সংকট

সম্প্রতি আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্প ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে হাজার হাজার মানুষ শরণার্থী হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, বহু মানুষ আশ্রয়হীন এবং মানবিক সহায়তার জন্য হাহাকার করছে। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের আফগান বিরোধী নীতি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষতি করতে পারে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো পারস্পরিক সমঝোতা, মানবিক সহায়তা এবং সীমান্ত নিরাপত্তা। কোন প্রকার দ্বিমুখী নীতি এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে দুর্বল করতে পারে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

ইমরান খানের এই সমালোচনা মূলত পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক নীতির উপর কেন্দ্রীভূত। গত কয়েক বছর ধরে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে। তালেবান শাসন পুনর্নির্মাণ ও রাজনৈতিক পুনরায় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের সঠিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইমরান খানের বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানি জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলকে জানান দিতে চাচ্ছেন যে, আফগান জনগণকে বিতাড়ন না করে মানবিক সহায়তা ও সমঝোতার মাধ্যমে সম্পর্ক মজবুত করা উচিত। তার মতে, এই নীতি শুধু মানবিকভাবে সঠিক নয়, ভবিষ্যতের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্লেষকরা কি বলছেন

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইমরান খানের এই সমালোচনা মূলত পাকিস্তান–আফগান সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবকে কেন্দ্র করে। বিশ্লেষকরা বলেন, “যদি সেনাপ্রধান বা সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কেবল রাজনৈতিক লাভের জন্য নীতি গ্রহণ করেন, তবে তা ভবিষ্যতে সীমান্ত সুরক্ষা ও অঞ্চলের শান্তির জন্য হুমকি হতে পারে।”

একাধিক আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিশ্লেষকও ইমরান খানের বক্তব্যের সঙ্গে একমত। তাদের মতে, আফগানিস্তান একটি রাষ্ট্র যা রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ, এবং পাকিস্তানের সহায়ক ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মানবিক সহায়তা, খাদ্য বিতরণ এবং আশ্রয় প্রদানের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরও মজবুত করা সম্ভব।

পাকিস্তান–আফগান সম্পর্কের ইতিহাস

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সম্পর্ক বহু বছরের প্রাচীন। ১৯৭৯ সালের সোভিয়েত আগ্রাসনের সময় পাকিস্তান আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক সংঘাতের মধ্যেও পাকিস্তান আফগান জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কারণে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষতি হলে তা কেবল রাজনীতিক নয়, মানবিক দিক থেকেও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

সামরিক নীতি ও রাজনৈতিক সমালোচনা

ইমরান খানের সমালোচনা মূলত সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের নীতি ও পাকিস্তান সরকারের দ্বিচারিতার উপর ভিত্তি করে। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্য আফগান ভাইদের বিতাড়ন করা চরম অমানবিক এবং কূটনৈতিকভাবে ক্ষতিকর।” তিনি আরও বলেন, “যদি আমরা সময়মতো পদক্ষেপ নেই, তবে আফগানিস্তান থেকে শরণার্থীদের বিতাড়ন পরিস্থিতি আরও খারাপ করবে এবং সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য বিপদ ডেকে আনবে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

আফগানিস্তান ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও ইমরান খানের বক্তব্যকে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সংস্থা মনে করছে, পাকিস্তানের সহায়ক ভূমিকা না থাকলে আফগান শরণার্থীদের মানবিক সংকট আরও গুরুতর হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও পাকিস্তানের ভূমিকার উপর নজর রাখছে। ইমরান খানের আহ্বান অনুযায়ী, মানবিক সহায়তা প্রদান এবং শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে পাকিস্তান–আফগান সম্পর্ক মজবুত করা সম্ভব।

ইমরান খানের বক্তব্য পাকিস্তান–আফগান সম্পর্কের ভবিষ্যৎ ও মানবিক মূল্যবোধকে কেন্দ্র করে। তার বক্তব্য স্পষ্ট করে যে, আফগান জনগণের প্রতি সহানুভূতি ও সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্ক আরও মজবুত করা সম্ভব। পাকিস্তানের বর্তমান নীতি যদি দ্বিচারিতাপূর্ণ হয়, তবে তা ভবিষ্যতে সীমান্ত নিরাপত্তা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির জন্য হুমকি হতে পারে।

পাঠকরা আশা করছেন, খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন ও পাকিস্তানের অন্যান্য নেতৃত্ব ইমরান খানের আহ্বানকে গুরুত্ব দেবে এবং পারস্পরিক আলোচনা ও মানবিক সহায়তার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনবে। আফগান ভাইদের প্রতি সহানুভূতি ও মানবিক সহযোগিতা পাকিস্তানের নৈতিক দায়িত্ব হিসেবেই বিবেচিত হবে।

MAH – 12750,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button