মার্কিন চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি হ্যারিসন ফোর্ড সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক ও পরিবেশ নীতি নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন। ফোর্ড বলেছেন, “আমি ইতিহাসে ট্রাম্পের চেয়ে বড় অপরাধী চিনি না; তার আচরণ আমার হৃদয় ভেঙে দিয়েছে।”
শিকাগোর ফিল্ড মিউজিয়ামে পরিবেশ সুরক্ষা পুরস্কার গ্রহণের আগে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফোর্ড বলেন, ট্রাম্পের আচরণ শুধু অজ্ঞতা ও অহংকার দ্বারা পরিচালিত নয়, বরং এটি সমগ্র পৃথিবীর জন্য হুমকিস্বরূপ।
ট্রাম্পের জলবায়ু নীতি: ভয়ঙ্কর বাস্তবতা
হ্যারিসন ফোর্ডের মতে, ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতাকে উপেক্ষা করছেন এবং আগের সরকারের পরিবেশনীতি ধ্বংস করে দিয়েছেন। তিনি বলেন,
“ট্রাম্পের কোনো নীতি নেই; তিনি নিজের খেয়ালখুশি মতো চলেন, আর সেটাই আমাকে ভয় দেখায়। অজ্ঞতা, অহংকার, মিথ্যা, বিশ্বাসঘাতকতা—সব মিলিয়ে তিনি জানেন যে, তিনি কেবল বর্তমান ব্যবস্থার হাতিয়ার, যা শুধু অর্থ উপার্জন করছে, অথচ পৃথিবী ধীরে ধীরে বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। আমি ইতিহাসে তার চেয়ে বড় অপরাধী দেখিনি।”
ফোর্ড আরও বলেন, ট্রাম্পের আচরণ শুধুমাত্র আমেরিকাকে বিভক্ত করছে না, বরং বিশ্বের স্বৈরশাসক ও একনায়ক রাষ্ট্রগুলোর হাতে আমেরিকাকে টেনে নিচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও সম্ভাব্য সমাধান
হ্যারিসন ফোর্ড আশাবাদী যে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে কমানো সম্ভব। তবে এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা, নতুন প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণের মনোভাব। তিনি বলেন,
“আমরা যদি আচরণ বদলাই, নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করি এবং বাস্তব পদক্ষেপ নিই, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানো সম্ভব। তবে এজন্য নেতৃত্বের স্বচ্ছতা ও সমাধান খোঁজার মানসিকতা আবশ্যক।”
ফোর্ডের মতে, শুধুমাত্র ‘আমেরিকাকে আবার মহান’ করার প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। আমাদের দরকার এমন এক প্রেসিডেন্ট, যে সব নাগরিকের জন্য ন্যায্য ও সুষ্ঠু নীতি প্রণয়ন করবে, এবং বিশ্বের সাথে মিলিতভাবে পরিবেশ রক্ষা করবে।
ট্রাম্পের মন্তব্য ও নীতি
গত মাসে জাতিসংঘে ট্রাম্প বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতারণা। এই সবুজ প্রতারণা থেকে যদি বের না হন, তবে আপনার দেশ ধ্বংস হবে। আবার শক্তিশালী হতে চাইলে, শক্ত সীমান্ত ও ঐতিহ্যবাহী জ্বালানি উৎসে ফিরতে হবে।”
দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ট্রাম্প ইতোমধ্যেই স্বচ্ছ জলবায়ু সুরক্ষা নীতিমালা বাতিল করেছেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রকল্প স্থগিত করেছেন এবং তেল ও গ্যাস কোম্পানিগুলোকে আরও বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছেন। এর ফলে, বিশ্ব উষ্ণায়নের ধারা আরও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ্বের বৈজ্ঞানিক এবং পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন, এই নীতি অব্যাহত থাকলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরো বিধ্বংসী হবে। উষ্ণতা বৃদ্ধি, গ্লেসিয়ার গলন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান এবং চরম আবহাওয়ার ঘটনা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়েছে।
হ্যারিসন ফোর্ডের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব
হ্যারিসন ফোর্ড শুধুমাত্র একজন অভিনেতা নন; তিনি দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনে সক্রিয়। ফোর্ডের এমন বক্তব্য সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদদেরও প্রভাবিত করতে পারে।
ফোর্ড পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন উদ্যোগে অংশ নিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তন কমানো এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রচার। তিনি বলেন, “পরিবেশের জন্য এখনই এককথায় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আমাদের সন্তানদের জন্য দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।”
ট্রাম্পের নীতি ও পরিবেশের প্রভাব: আন্তর্জাতিক সমালোচনা
বিশ্বব্যাপী পরিবেশবিদরা বলছেন, ট্রাম্পের নীতি শুধু আমেরিকাকে নয়, সমগ্র পৃথিবীকে প্রভাবিত করছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রকল্প স্থগিত এবং জীবাশ্ম জ্বালানি বৃদ্ধির ফলে, বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ বেড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্বাধীন গবেষণা সংস্থা রিপোর্ট করেছে, ট্রাম্পের নীতির কারণে ২০২৪-২০২৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও, সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধির হার দ্রুত বাড়ছে এবং চরম আবহাওয়া, যেমন হারিকেন, বন্যা ও দাবদাহের ঘটনা আরও ঘনঘন ঘটছে।
হ্যারিসন ফোর্ডের আহ্বান
ফোর্ড জনগণকে সতর্ক করেছেন যে, শুধুমাত্র অভিযোগ বা সমালোচনা যথেষ্ট নয়। বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তিনি বলেন,
“প্রযুক্তি ব্যবহার করুন, নবায়নযোগ্য শক্তি বাড়ান, এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বাধ্য করুন সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”
ফোর্ডের মতে, পরিবেশ রক্ষা করতে সকল দেশের সরকারকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শুধুমাত্র একটি দেশের পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়।
সংবাদ সংক্ষেপ
- হ্যারিসন ফোর্ড বলেছেন, “ট্রাম্প ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অপরাধী।”
- ট্রাম্পের নীতি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ক্ষতিকর।
- নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প স্থগিত, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বাড়ানো হয়েছে।
- বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সমুদ্রপৃষ্ঠ বৃদ্ধি, চরম আবহাওয়া ঘটনার আশঙ্কা বেড়েছে।
- ফোর্ডের আহ্বান: প্রযুক্তি উন্নয়ন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও বাস্তব পদক্ষেপ এখনই প্রয়োজন।
হ্যারিসন ফোর্ডের এই বক্তব্য শুধু একটি ব্যক্তির সমালোচনা নয়। এটি একটি সতর্কবার্তা, যা পুরো পৃথিবীকে পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়। ট্রাম্পের নীতি ও কর্মকাণ্ডের প্রভাব শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্বব্যাপী অনুভূত হচ্ছে। ফোর্ডের আহ্বান অনুযায়ী, এখনই পদক্ষেপ নিলে জলবায়ু পরিবর্তনের ধ্বংসাত্মক প্রভাব কমানো সম্ভব।
MAH – 13594 I Signalbd.com



