ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে শ্রীকাকুলম জেলার কাশিবুগ্গা এলাকায় একটি নবনির্মিত মন্দিরে ভয়াবহ পদদলিত ঘটনায় কমপক্ষে নবমুখী ৯ জন নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছেন। এই ঘটনায় আরও ১৭ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে, যখন একাদশী উপলক্ষে মন্দিরে ভক্তদের ভিড় ছিল। মন্দিরের প্রধান প্রবেশপথে হঠাৎ করে উন্মত্ত ঠেলাঠেলি শুরু হয়। স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, একাধিক ভক্ত একসাথে সামনে এগোতে গিয়ে রেলিং ভেঙে পড়ে এবং মানুষ হুড়োহুড়ি শুরু করে। এতে অনেকেই একজনের ওপর একজন পড়ে গেলে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনায় নিহত ও আহতদের তথ্য
প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে দুই শিশু এবং বেশ কয়েকজন যুবক রয়েছেন। আহতদের মধ্যে কিছুজনের অবস্থা গুরুতর। আহতদের স্থানীয় হাসপাতাল এবং অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “মন্দিরে একাদশী উপলক্ষে প্রচণ্ড ভিড় ছিল। হঠাৎ কিছু মানুষ সামনে এগোতে গিয়ে ঠেলাঠেলি শুরু করলে একটি রেলিং ভেঙে পড়ে। মানুষ হুড়োহুড়ি করতে করতে একজনের ওপর একজন পড়ে যান। এটি এক বিশাল ট্র্যাজেডি।”
প্রধানমন্ত্রী মোদীর শোক ও সমবেদনা
ঘটনার খবর পেয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। টুইটারে তিনি লিখেছেন, “শ্রীকাকুলমের ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দিরে পদদলিত ঘটনায় আমি গভীরভাবে মর্মাহত। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।”
প্রধানমন্ত্রী নিহতদের পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে আর আহতদের প্রতি ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের প্রতিক্রিয়া
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, রাজ্যপাল এস. আবদুল নাজির এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইড়ুও নিহত ও আহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তারা দ্রুত আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং এই ধরনের দুর্ঘটনা পুনরায় না ঘটার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দিরের গুরুত্ব
শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দিরটি অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলম জেলায় নবনির্মিত। এটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে স্থানীয়দের মধ্যে, বিশেষ করে একাদশী, পূর্ণিমা এবং অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবের সময়। প্রতি বছর হাজার হাজার ভক্ত মন্দির দর্শন এবং প্রার্থনার জন্য আসেন।
মন্দিরটির মূল আকর্ষণ হলো ভেঙ্কটেশ্বর স্বামীর ভাস্কর্য এবং আধ্যাত্মিক পরিবেশ। তবে এই ধরনের দুর্ঘটনা এ প্রেক্ষাপটে মন্দিরে নিরাপত্তার গুরুত্ব পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
দুর্ঘটনার কারণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব
স্থানীয় পুলিশ এবং প্রশাসন প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন যে দুর্ঘটনার মূল কারণ ভিড় নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতা এবং প্রবেশপথে রেলিংয়ের দুর্বলতা। মন্দিরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় এবং ভক্তদের একসঙ্গে প্রবেশের কারণে হঠাৎ হুড়োহুড়ি শুরু হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মন্দির বা বড় উৎসবের সময় ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য নিরাপত্তা গাইডলাইন মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। তাদের মতে, ভারতে প্রতিবছর ধর্মীয় স্থানগুলিতে পদদলিত দুর্ঘটনা কমপক্ষে ৫-৬ বার ঘটে, যার ফলে শতাধিক মানুষ হতাহত হন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ভারতে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে শোক ও সমবেদনা জানানো হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোতে এই ধরনের ঘটনা সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আগের পদদলিত দুর্ঘটনার স্মৃতি
ভারতের ইতিহাসে পদদলিত দুর্ঘটনা কোনো নতুন ঘটনা নয়। ২০১৩ সালে ভুবনেশ্বরে একটি মন্দিরে পদদলিত হয়ে ৮৫ জন নিহত হয়েছিল। ২০১৯ সালে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় আরেকটি মন্দিরে হুড়োহুড়ি থেকে ৫০ জনের বেশি মানুষ নিহত হন। এসব ঘটনা নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুত্ব এবং সামাজিক সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা প্রমাণ করেছে।
সরকারের পদক্ষেপ
ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকার ইতোমধ্যেই অন্ধ্রপ্রদেশের প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে:
- মন্দির ও অন্যান্য ধর্মীয় স্থানগুলিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণের উন্নত ব্যবস্থা গ্রহণ।
- দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।
- চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের জন্য যথাযথ আর্থিক ও মানবিক সহায়তা প্রদান।
- ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া
স্থানীয় মানুষ এবং ভক্তরা এই দুর্ঘটনার কারণে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মন্দির এবং ধর্মীয় স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এখন সময়ের দাবি।
ভক্তরা জানিয়েছেন, এমন দুর্ঘটনা ধর্মীয় অনুভূতিতে দমনের চেয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। তারা আশা করছেন, সরকার এবং মন্দির কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন যাতে ভবিষ্যতে কেউ আহত না হয়।
ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা
এই দুর্ঘটনা শুধুমাত্র একটি স্থানীয় ঘটনা নয়, বরং এটি ধর্মীয় স্থানে ভিড় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুত্বের উদাহরণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ধর্মীয় স্থানগুলিতে ভিড় নিয়ন্ত্রণ, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং জরুরি চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
এই ঘটনায় নেটিজেনরা সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য করেছেন যে, “ধর্মীয় স্থানে এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা সময়ের দাবি।”
প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও রাজ্য সরকার ইতোমধ্যেই দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকার করেছেন। তবে জনগণ আশা করছে যে, ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা আর ঘটবে না।
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে শ্রীকাকুলমের শ্রী ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দিরে ঘটে যাওয়া পদদলিত দুর্ঘটনা দেশের জন্য একটি বড় শোকের বিষয়। ৯ জনের প্রাণহানি এবং ১৭ জনের আহত হওয়ার ঘটনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমবেদনা জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইড়ু নিহত ও আহতদের পরিবারকে সহায়তা করার পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছেন।
MAH – 13590 I Signalbd.com



