বিশ্ব

দুই জিম্মির মরদেহর বদলে ৩০ ফিলিস্তিনি শহীদের দেহ ফেরত দিল ইসরাইল

Advertisement

ফিলিস্তিনের ৩০ জন শহীদের মরদেহ ইসরাইল ফেরত দিয়েছে, যা গত ১৩ অক্টোবর দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে সংঘটিত হলো। গাজ্জা উপত্যকার খানের ইউনিসের আল নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে শুক্রবার দুপুরে মরদেহগুলো পৌঁছে দিয়েছে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস।

এটি এমন এক পরিস্থিতিতে ঘটলো, যখন গত বৃহস্পতিবার রাতে হামাস দুই ইসরাইলি জিম্মির মরদেহ ফেরত পাঠায়। যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, একজন ইসরাইলি জিম্মির মরদেহের বিনিময়ে ১৫টি ফিলিস্তিনি শহীদের মরদেহ ফেরত দেওয়া হবে। এর ফলে এই লেনদেনের মাধ্যমে মোট ৩০ শহীদের মরদেহ ফিলিস্তিনে ফিরে এসেছে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রেক্ষাপট

সেপ্টেম্বর মাসে গাজ্জা এবং ইসরাইলের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করেছিল। একদিকে ইসরাইলি সেনারা হামাসের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে, অন্যদিকে হামাস ইসরাইলি এলাকায় রকেট নিক্ষেপ করেছিল। এই সংঘর্ষে দুইপক্ষেরই হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং অনেকেই আহত হয়েছেন।

তীব্র আন্তর্জাতিক চাপের মুখে, দুই পক্ষ যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়। চুক্তির মূল শর্ত ছিল:

  • একজন ইসরাইলি জিম্মির মরদেহের বিনিময়ে ১৫ জন ফিলিস্তিনি শহীদের মরদেহ ফেরত দেওয়া।
  • মানবিক কারণে আহতদের চিকিৎসা ও সরবরাহ নিশ্চিত করা।
  • আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা লেনদেনের প্রক্রিয়া তদারকি করবেন।

এটি প্রথমবার নয় যে, ফিলিস্তিনি শহীদদের মরদেহ ফেরত দেওয়া হয়েছে। ইতিহাসে দেখা গেছে, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে এ ধরনের লেনদেন নিয়মিতভাবে সংঘটিত হয়।

ফেরতপ্রাপ্ত শহীদদের মরদেহের গুরুত্ব

ফিলিস্তিনি সমাজে শহীদদের মরদেহ ফেরত পাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাজার পরিবারগুলো এ মরদেহ গ্রহণ করে তাদের শেষকৃত্য সম্পন্ন করে, যা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কারণে অত্যন্ত সম্মানের বিষয়। বিশেষত ইসলামী সমাজে মৃত ব্যক্তির মরদেহ দ্রুত দাফন করা হয় এবং এটি আত্মীয়-স্বজনদের জন্য মানসিক শান্তি প্রদান করে।

এবার ফেরত আসা শহীদদের মধ্যে অধিকাংশই গাজার বিভিন্ন এলাকায় হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে। তারা সবাই স্থানীয় নায়ক হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়রা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মহলকে এই লেনদেন মানবিক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে। ফিলিস্তিনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, “মরদেহ ফেরত পাওয়া মানে শুধু পরিবারগুলোকে মানসিক স্বস্তি দেওয়া নয়, এটি আমাদের জাতীয় মর্যাদা ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতীক।”

ইউনাইটেড নেশনস (UN) ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রস এই লেনদেন তদারকিতে সহযোগিতা করেছে। তারা জোর দিয়ে বলেছে যে, এই ধরনের লেনদেন চলমান সংঘর্ষ এবং শান্তি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।

ইতিহাসে মরদেহ বিনিময়ের প্রথা

ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘর্ষের ইতিহাসে মরদেহ বিনিময় নতুন ঘটনা নয়। অতীতের কয়েকটি বড় লেনদেনে অনেক ফিলিস্তিনি শহীদের মরদেহ ফেরত এসেছে।

  • ২০১১ সালে: হামাস ও ইসরাইল ২০ জন শহীদের মরদেহ বিনিময় করে।
  • ২০১৪ সালে: গাজ্জা যুদ্ধের পরে প্রায় ১০০ শহীদের মরদেহ ফিলিস্তিনে ফেরত আসে।
  • ২০২১ সালে: এক দফায় ৫০ শহীদ ও কয়েকজন ইসরাইলি জিম্মির মরদেহ বিনিময় হয়।

এই সব লেনদেন মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে বিশ্লেষণ করা হয়। বিশেষত, শিশু ও সাধারণ নাগরিকের মরদেহ ফেরত পাওয়ার বিষয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

মানবিক ও রাজনৈতিক প্রভাব

মরদেহ ফেরত দেওয়ার এই প্রক্রিয়া কেবল মানবিক নয়, এটি রাজনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি দুই পক্ষের মধ্যে সাময়িক শান্তি রক্ষা করে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, শুধুমাত্র মরদেহ বিনিময়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদি শান্তি নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক আলোচনা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক সমন্বয় অপরিহার্য।

ফিলিস্তিনি নাগরিকরা এই লেনদেনকে স্বাগত জানিয়েছে। অনেকেই বলেছেন, “আমরা চাই শান্তি থাকুক, আমাদের সন্তানরা যুদ্ধের মধ্যে না বেড়ে উঠুক। তবে শহীদদের মরদেহ ফেরত পেয়ে অন্তত কিছু মানসিক স্বস্তি মিলেছে।”

ইসরাইলের পক্ষ থেকে এই লেনদেনকে নিরাপত্তার পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন যে, এই ধরনের লেনদেন যুদ্ধবিরতির শর্ত বাস্তবায়ন এবং আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবেলার অংশ।

সংক্ষেপে পরিস্থিতি

  • তারিখ: ৩১ অক্টোবর, ২০২৫
  • স্থান: গাজ্জা, খানের ইউনিস, আল নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স
  • মরদেহ ফেরত দেওয়া: ৩০ ফিলিস্তিনি শহীদ
  • বিনিময় শর্ত: দুই ইসরাইলি জিম্মির মরদেহের বিনিময়ে
  • প্রধান অংশগ্রহণকারী: হামাস, ইসরাইল, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস

ফিলিস্তিনি নাগরিক, বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা এই ঘটনাকে একটি মানবিক জয় হিসেবে দেখছেন। তবে তারা সতর্ক করেছেন যে, এটি কেবল ক্ষণস্থায়ী শান্তি বহন করতে পারে, স্থায়ী শান্তির জন্য আরও গভীর রাজনৈতিক আলোচনা এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রয়োজন।

MAH – 13582 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button