বিশ্ব

গাজ্জায় আবারও গণহত্যা শুরুর অজুহাত খুঁজছে নেতানিয়াহু!

Advertisement

ফিলিস্তিনের গাজ্জায় দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে নতুনভাবে গণহত্যা চালানোর অজুহাত খুঁজছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সতর্কবার্তা দিয়েছেন এবং বলছেন, এই অন্যায় বন্ধ করতে বিশ্বের সকল দেশের উচিত ইসরাইলের ওপর কঠোরভাবে চাপ প্রয়োগ করা।

গতকাল আঙ্কারায় এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারগুস সাখনার সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ফিদান বলেন, “গাজ্জায় চলমান পরিস্থিতি সারা বিশ্বের সামনে অমানবিকতার পরিচয় বহন করছে। ইসরাইলের উচিত যুদ্ধবিরতি বজায় রাখা এবং মানুষের জীবন রক্ষা করা।”

বার্তাসংস্থা আনাদোলু শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) এই সংবাদটি প্রকাশ করেছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের করণীয়

ফিদান আরও বলেন, “টেকসই শান্তি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে ইসরাইলকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আইন ও যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে হবে। গাজ্জায় মানুষের ওপর হামলা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।”

এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাখনা বলেন, “গাজ্জার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ। এখানে শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের জীবন বিপন্ন। ইসরাইলের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শক্তিশালী চাপ প্রয়োগ করা এখন সময়ের দাবি।” তিনি উল্লেখ করেন যে, এস্তোনিয়া সবসময় দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান ও ফিলিস্তিন-ইসরাইল শান্তি প্রক্রিয়ার পক্ষে সমর্থন জানিয়ে এসেছে।

সাখনা জানান, এস্তোনিয়া জাতিসংঘের ফিলিস্তিন-সংক্রান্ত প্রস্তাবের সমর্থক এবং টেকসই শান্তি প্রক্রিয়া বজায় রাখতে গাজ্জায় মানবিক সহায়তা পাঠাচ্ছে। তিনি বলেন, “জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনের মাধ্যমে আমরা জরুরি ত্রাণ পাঠাচ্ছি। শান্তি ও পুনর্গঠন কার্যক্রমে তুরস্কসহ অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় অব্যাহত থাকবে।”

তুরস্কের ভূমিকা

ফিদান আরও জানান, তুরস্ক শারম আল-শেখে স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিয়েছে। তিনি বলেন, “যুদ্ধবিরতিকে স্থায়ীভাবে কার্যকর করতে আঙ্কারা সংশ্লিষ্ট সব দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করছে। শারম আল-শেখে স্বাক্ষরিত ঘোষণা সর্বোচ্চ রাজনৈতিক ঐকমত্যের প্রতীক। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান, প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও অন্যান্য গ্যারান্টর রাষ্ট্রের স্বাক্ষর এই ঘোষণাকে ঐতিহাসিক করে তুলেছে।”

তুরস্ক মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রেও ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ফিদান জানান, “আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, এএফএডি এবং তুর্কি রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তারা রাফাহ সীমান্তে কাজ করছেন। ৯০০ টন ত্রাণ সামগ্রী বহনকারী জাহাজ ১৭ অক্টোবর মিসরের আল-আরিশ বন্দরে পৌঁছেছে। শিগগিরই পরবর্তী সহায়তা মিশন শুরু হবে।”

তিনি আরও বলেন, “ফিলিস্তিনি আহতদের চিকিৎসার জন্য তুরস্কে আনার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। গাজ্জার পুনর্গঠন ও মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে আমরা সর্বশক্তি নিয়োজিত রাখব। ধৈর্য ও ঐক্যের মাধ্যমে গাজ্জা আবারও স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে।”

গাজ্জার মানবিক সংকট

গাজ্জায় ২০২৫ সালের এই সংঘাত পূর্ববর্তী চরম মানবিক সংকটকে আরও গভীর করেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন ইউনিসেফ, আইসিআরসি এবং জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থা বারবার সতর্ক করেছে যে, খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ ও চিকিৎসা সরবরাহ অত্যন্ত সীমিত।

  • গাজ্জার ২০ লাখের বেশি বাসিন্দার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই শিশু।
  • বিদ্যুৎ ও পানির অভাবের কারণে হাসপাতালগুলো কার্যক্রম চালাতে ব্যর্থ হচ্ছে।
  • অসংখ্য পরিবার নিরাপদ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে।

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন, যদি ইসরাইল যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ অব্যাহত রাখে, তবে এটি গণহত্যার পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

গাজ্জার পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন দেশের সরকার ও মানবাধিকার সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

  • জাতিসংঘ: ফিলিস্তিনের প্রতি মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।
  • ইউরোপীয় ইউনিয়ন: ইসরাইলের ওপর চাপ বাড়িয়ে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার জন্য সুস্পষ্ট বার্তা প্রদান করছে।
  • আমেরিকা: দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান ও শান্তি প্রক্রিয়া পুনরায় কার্যকর করার জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ শুরু করেছে।

বিশ্বের বৃহৎ সংবাদমাধ্যমও গাজ্জার মানবিক সংকটকে গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের নিন্দা জানাচ্ছে এবং ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছে।

গাজ্জার পুনর্গঠন ও ভবিষ্যৎ

ফিলিস্তিনি নেতারা বারবার বলেছেন যে, শুধুমাত্র যুদ্ধবিরতি যথেষ্ট নয়; স্থায়ী শান্তি ও পুনর্গঠন কার্যক্রম জরুরি।

  • হাসপাতাল ও স্কুল পুনর্নির্মাণ
  • বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ পুনঃস্থাপন
  • আহত ও অসহায়দের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন
  • শিশু ও নারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

ফিলিস্তিন ও তুরস্কের সমন্বয়ে এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন ছাড়া এই প্রক্রিয়া পূর্ণাঙ্গভাবে সফল হওয়া কঠিন।

ফিলিস্তিনিদের জন্য শান্তি শুধুমাত্র অস্ত্রবিরতি নয়, এটি একটি নিরাপদ, স্থায়ী ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন প্রতিষ্ঠা করা। তুরস্ক, এস্তোনিয়া, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এই লক্ষ্যে সমন্বিতভাবে কাজ করছে।

গাজ্জার বর্তমান সংকট শুধু একটি আঞ্চলিক সমস্যা নয়, এটি মানবতার বিপর্যয়। ইসরাইলের যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ ও নেতানিয়াহুর সম্ভাব্য গণহত্যার পরিকল্পনা বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য বড় সতর্কবার্তা। তুরস্ক ও অন্যান্য দেশ আন্তর্জাতিক চাপ বাড়িয়ে গাজ্জার মানুষের জীবন রক্ষা ও পুনর্গঠন কার্যক্রম চালাচ্ছে।

ফিলিস্তিনিরা তাদের শান্তি, নিরাপত্তা এবং মানবিক অধিকার ফিরে পেতে আশা করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যৌথ প্রচেষ্টা এবং শক্তিশালী কূটনৈতিক উদ্যোগ ছাড়া এই সংকট দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী শান্তিতে রূপ নেবে না।

MAH – 13575 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button