বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গাজা উপত্যকায় আহত ও গুরুতর অসুস্থ রোগীদের অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়ার জন্য আরও দেশকে সহায়তা করতে আহ্বান জানিয়েছে। দীর্ঘ যুদ্ধ ও সীমিত চিকিৎসা সুবিধার কারণে হাজার হাজার মানুষ জীবন-জীবিকার সঙ্কটে পড়েছে। ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, গাজার মানুষ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি, তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।
ডব্লিউএইচও’র আহ্বান ও গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা
গাজার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় অচল। অস্ত্রোপচার, জরুরি ওষুধ ও যন্ত্রপাতির অভাব, সীমিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর কারণে হাসপাতালগুলো এখন জীবন রক্ষার পরিবর্তে মৃত্যুর করিডরে পরিণত হয়েছে।
তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, “গাজার মানুষ আজ ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। যারা উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন বোধ করছে, তাদের জীবন রক্ষার জন্য আরও দেশকে এগিয়ে আসতে হবে।”
এছাড়া, আয়ারল্যান্ড ইতিমধ্যেই ৭ জন গুরুতর অসুস্থ রোগী ও তাদের ২৯ জন সঙ্গীকে চিকিৎসার জন্য গ্রহণ করেছে। এই ধরনের পদক্ষেপ অন্যান্য দেশগুলোর জন্য উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
গাজার বর্তমান চিকিৎসা সংকট
গাজায় ইসরায়েলের সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও অনুমতির অভাবে রোগীদের বিদেশে পাঠানো কঠিন হয়ে পড়েছে। যুদ্ধবিরতির পরও অসংখ্য মানুষ জরুরি চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনই চিকিৎসা সরঞ্জাম ও স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতি তীব্র।
নাসের হাসপাতালে দুটি ১০ বছর বয়সী ছেলে শয্যাশায়ী—একজন গুলিবিদ্ধ, অপরজন মস্তিষ্কে টিউমার আক্রান্ত। তাদের জীবন রক্ষার জন্য বিদেশে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিটি ঘন্টাই গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও পদক্ষেপ
ডব্লিউএইচও সম্প্রতি গাজার ৪১ জন রোগী এবং তাদের সঙ্গে থাকা ১৪৫ জন সহযাত্রীকে জর্ডানে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া, অন্যান্য দেশগুলোও চিকিৎসা সরঞ্জাম, অর্থায়ন এবং চিকিৎসক পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পূর্ব জেরুজালেম ও পশ্চিম তীরের হাসপাতালগুলোতে রোগীদের পাঠানো সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। এখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা বিদ্যমান, যা দ্রুত রোগীদের জীবন রক্ষার সুযোগ দেবে।
পূর্ববর্তী মানবিক উদ্যোগ ও পরিসংখ্যান
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত এক বছরে অন্তত ৭৪০ জন রোগী, যার মধ্যে ১৪০ শিশু, চিকিৎসার অপেক্ষায় মারা গেছে। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, সীমিত সক্ষমতার কারণে প্রতিদিনই রোগীদের প্রাণহানি ঘটছে।
ডা. আহমেদ আল-ফাররা বলেন, “একজন চিকিৎসকের জন্য সবচেয়ে কষ্টের মুহূর্ত হলো রোগ নির্ণয় করতে পারা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে না পারা।”
এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য সতর্কবার্তা, যাতে দ্রুত এবং বৃহৎ পরিসরে চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছে দেওয়া যায়।
মতামত
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শুধু রোগীদের অন্য দেশে পাঠানোই যথেষ্ট নয়। গাজার স্বাস্থ্য অবকাঠামো ও চিকিৎসা সরঞ্জামও অবিলম্বে শক্তিশালী করতে হবে। তদুপরি, সীমান্ত খোলার বিষয়টি রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক সমাধানের ওপর নির্ভর করছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ২০টিরও বেশি দেশ ইতিমধ্যেই এই আহ্বানকে সমর্থন জানিয়েছে। তাদের লক্ষ্য রোগীদের নিরাপদে চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর চাপ কমানো।
ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও আশা
ডব্লিউএইচও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি আরও দেশকে সহযোগিতার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। বড় পরিসরে চিকিৎসা সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা না হলে আরও প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একত্রিত প্রচেষ্টা ও রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া গাজার পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে পরিবর্তন হবে না। মানবিক সহানুভূতি এবং কার্যকর পদক্ষেপই এই সংকট নিরসনে মূল চাবিকাঠি।
গাজায় অসহায় মানুষ এবং আহত রোগীদের জীবন রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য। ডব্লিউএইচও’র আহ্বান প্রতিটি দেশের জন্য মানবিক দায়িত্বের পরীক্ষা। তবে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বাধা দূর না করলে, চিকিৎসা সরবরাহের সমস্যা অদূর ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
এম আর এম – ২০০৪,Signalbd.com



