যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারে চলমান শাটডাউন (অচলাবস্থা) তুলে নিতে মার্কিন সিনেট টানা ১৩তমবার ব্যর্থ হয়েছে। ফলে সরকারের অচলাবস্থা ২৯তম দিনে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ, সরকারি কর্মচারী এবং ব্যবসায়িক খাতের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স রিপাবলিকান সিনেটরদের সঙ্গে বৈঠক করে সামরিক বাহিনীর বেতন আগামী শুক্রবারের মধ্যে পরিশোধ করার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে শাটডাউন সমস্যা মোটেও সমাধান হয়নি।
শাটডাউন ব্যর্থতার কারণ
সিনেটে শাটডাউন তুলে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ৬০ ভোটের পরিবর্তে এইবার ৫৪–৪৫ ভোটে বিল ব্যর্থ হয়েছে। ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান দুই পক্ষই একে অপরের ওপর দোষ চাপাচ্ছে।
ডেমোক্র্যাটরা ব্যয় বরাদ্দ-সংক্রান্ত বিলের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা খাতের জন্য অতিরিক্ত প্রাধান্য দিতে চাইছেন। অন্যদিকে রিপাবলিকানরা একটি সীমিত ব্যয় বিল পাসে চাপ দিচ্ছেন এবং অবৈধ অভিবাসীদের জন্য সরকার ব্যয় কমানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এই বিরোধই মূলত শাটডাউন দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণ।
সরকারের কার্যক্রমে প্রভাব
শাটডাউনের কারণে সরকারি কর্মীরা বিনা বেতনে কাজ করছেন। নভেম্বরে চার কোটিরও বেশি মানুষ সরকারি খাদ্য সহায়তা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। বিমান পরিবহন খাতে কর্মীদের বেতন না পাওয়ায় চাকরিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে।
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা বিকল্প চাকরি খুঁজছেন, যার ফলে বিমান চলাচল বিপর্যস্ত হচ্ছে। সম্প্রতি প্রায় ৭ হাজার ফ্লাইট এবং রোববার ৮ হাজার ৮০০ ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। এই পরিস্থিতি নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সিনেটের ব্যর্থতার জন্য ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করছেন। তিনি হুমকি দিয়েছেন, যদি শাটডাউন চলতে থাকে, তবে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীদের গণহারে ছাঁটাই হতে পারে।
ডেমোক্র্যাটরা অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, সরকার সচল হলে আলাদা বিলের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা বিষয়টি সমাধান করা হবে। তারা আরও দাবি করছেন, নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য মেডিকএইডের ভর্তুকি বজায় রাখতে হবে।
সিনেটে এই অবস্থায় দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে কারণ আগামী অর্থবর্ষের বাজেট ও ব্যয় বরাদ্দ নিয়ে বিতর্ক তীব্র।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
শাটডাউনের কারণে সরকারি কর্মীদের বেতন আটকে থাকায় দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব পড়েছে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও বিমান খাতের কর্মীরা বিকল্প চাকরিতে নামছেন। খাদ্য সহায়তা না পেলে নিম্ন আয়ের মানুষদের জীবনে সরাসরি প্রভাব পড়বে।
সিনেটে বিল পাস ব্যর্থ হওয়ায় মার্কিন অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। বাজারে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন, এবং সামাজিক সেবা ব্যবস্থার উপর চাপ বাড়ছে।
পূর্ববর্তী উদাহরণ ও প্রেক্ষাপট
গত কয়েক বছরে মার্কিন সিনেট বিভিন্ন দফায় শাটডাউন সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে ব্যয় বরাদ্দ ও নীতি নিয়ে ধারাবাহিক সংঘাত সাধারণ ঘটনা।
মার্কিন ইতিহাসে শাটডাউন সাধারণত কয়েক সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে এইবার টানা ১৩তম ব্যর্থতা একটি রেকর্ড এবং দেশের সামগ্রিক কার্যক্রমকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করছে।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিনেটের ব্যর্থতা শুধুমাত্র রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ফল নয়, বরং সরকারের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতিতে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা নির্দেশ করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করছেন, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হলে শাটডাউন আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। মানবাধিকার এবং সামাজিক সুরক্ষা বিষয়ে সরকারের তৎপরতা প্রয়োজন, যাতে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট শাটডাউন তুলে নেওয়ার জন্য টানা ১৩তমবার ব্যর্থ হয়েছে। সামরিক বাহিনীর বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা হলেও সাধারণ কর্মী ও সাধারণ মানুষের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের কার্যক্রম সচল করা এবং দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা তৈরি করা জরুরি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মার্কিন সরকার কত দ্রুত এবং কার্যকরভাবে এই অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবে।
এম আর এম – ২০০০,Signalbd.com



