যুক্তরাজ্যের নতুন লেবার সরকার স্কটল্যান্ডের ইনভারনেস শহরের প্রায় ১৪০ বছরের পুরনো এক সামরিক ব্যারাকে অভিবাসন প্রত্যাশীদের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সরকারের এই পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন, আশ্রয়প্রার্থীদের ভিড়ে এলাকার নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। অন্যদিকে মানবাধিকার সংগঠন এবং কিছু বাসিন্দা মনে করছেন, যুদ্ধ, নিপীড়ন ও রাজনৈতিক শোষণ থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের আশ্রয় দেওয়া যুক্তরাজ্যের নৈতিক দায়িত্ব।
ব্যারাক ব্যবহারের কারণ
লেবার সরকার জানিয়েছে, হোটেলে আশ্রয়প্রার্থীদের রাখার খরচ ক্রমেই বাড়ছে। প্রতিদিন কেবল আবাসন খাতে কোটি কোটি পাউন্ড ব্যয় হচ্ছে। সেই ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে এই পুরনো ব্যারাকগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ইংল্যান্ডের ন্যাপিয়ার ও ওয়েদারসফিল্ড ব্যারাকগুলোতে অভিবাসন প্রত্যাশীদের রাখা হয়েছিল। সেই সময়ও নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও মানবাধিকারের প্রশ্ন ওঠে। স্কটল্যান্ডে একই ধরণের পদক্ষেপে সেই বিতর্ক পুনরায় ফিরে এসেছে।
স্থানীয় প্রতিক্রিয়া ও বিভাজন
ইনভারনেস শহরের কেন্দ্রস্থলে এই সিদ্ধান্তে স্থানীয়রা বিভক্ত। একাংশ মানুষ মনে করছেন, সরকারের কোনো পরামর্শ ছাড়াই নেওয়া এই সিদ্ধান্ত “অসম্মানজনক”। তারা আশঙ্কা করছেন, স্থানীয় স্কুল, হাসপাতাল ও জননিরাপত্তার ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হবে।
অন্যদিকে মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, যারা জীবন ও নিরাপত্তার জন্য নিজের দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে এসেছে, তাদের আশ্রয় দেওয়া মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব। তাদের বক্তব্য, এই মানুষগুলোকে নিরাপদ আশ্রয় না দিলে যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
পূর্ববর্তী উদাহরণ
ইংল্যান্ডের ন্যাপিয়ার ও ওয়েদারসফিল্ড ব্যারাক ব্যবহারের সময়ও একই ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। তখনও স্থানীয়রা নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালিয়েছে।
এই ব্যারাকগুলোতে আশ্রয়প্রার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। তবে লোকাল কমিউনিটির সঙ্গে সমন্বয় না থাকায় কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। স্কটল্যান্ডে একই পদক্ষেপে এই অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় দিক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
সরকারি ব্যাখ্যা
লেবার সরকার জানিয়েছে, ব্যারাকগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যয় কমানো সম্ভব এবং একই সঙ্গে অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হবে। সরকারের লক্ষ্য, স্থানীয় কমিউনিটির ওপর চাপ কমানো এবং দেশের অন্যান্য হোটেল ও আবাসনের উপর অতিরিক্ত ব্যয় এড়ানো।
সরকার স্থানীয়দের মতামত জানতে চাইছে। তবে অনেক বাসিন্দা মনে করছেন, সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের মতামত ততটা গুরুত্ব পাবে না।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরনো সামরিক স্থাপনা ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের খরচ কমানো সম্ভব। তবে এটি স্থানীয় জনসেবা ও নিরাপত্তার ওপর চাপ বাড়াতে পারে।
মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, এই পদক্ষেপকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা জরুরি। যারা বিপদ ও নিপীড়ন থেকে পালিয়েছে, তাদের সুরক্ষা ও পুনর্বাসন গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মন্তব্য করছেন, স্থানীয় প্রতিক্রিয়া ও জনমতের প্রতি সরকারের কৌশল গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় সমন্বয় না হলে সামাজিক বিরোধ এবং উত্তেজনা বাড়তে পারে।
যুক্তরাজ্যের লেবার সরকার স্কটল্যান্ডের ইনভারনেসে পুরনো সামরিক ব্যারাক ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে। এটি খরচ কমাতে কার্যকর হতে পারে, তবে স্থানীয়দের উদ্বেগ এবং মানবাধিকার বিষয়ক প্রশ্নগুলো এখনো প্রাসঙ্গিক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের কার্যক্রমের সাফল্য মূলত স্থানীয় কমিউনিটি ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের উপর নির্ভর করবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই পদক্ষেপ কতটা কার্যকর এবং সামাজিক সহমর্মিতা বজায় রাখতে পারবে।
এম আর এম – ১৯৯৯,Signalbd.com



