বিশ্ব

তালেবান সরকারকে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর হুঁশিয়ারি

Advertisement

আফগানিস্তানে শান্তি আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ আফগান তালেবান সরকারের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, যদি আফগান মাটি পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার জন্য ব্যবহার করা হয়, পাকিস্তান সীমান্ত লঙ্ঘনকারীদের শাস্তি দিতে ‘আফগানিস্তানের গভীরে’ও অভিযান চালাবে।

পাকিস্তানের ইসলামাবাদে সংসদ ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে খাজা আসিফ জানান, চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থতা হলে পরিস্থিতি ‘উন্মুক্ত যুদ্ধে’ পরিণত হতে পারে। তিনি আরও সতর্ক করেছেন যে আফগান ভূমি ব্যবহার করে পাকিস্তানের ওপর হামলা করা হলে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কঠোর হবে।

শান্তি আলোচনার ব্যর্থতা

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সীমান্ত সংঘাত নিরসনে তুরস্কের ইস্তানবুলে তিনদিনের শান্তি আলোচনার পর সমাধান ছাড়াই আলোচনা শেষ হয়েছে। পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেন, আলোচনায় আফগান মাটি থেকে উদ্ভূত আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার কোনো কার্যকর সমাধান আসেনি।

২০২১ সালে তালেবানরা কাবুল দখলের পর থেকে সীমান্তে চলমান উত্তেজনা এবং সন্ত্রাসী হামলার পুনরাবৃত্তি রোধে দুটি দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়েছিল। তবে ইস্তানবুল আলোচনার দ্বিতীয় ধাপে কোনো অভিন্ন সমাধান বের করা সম্ভব হয়নি।

পাকিস্তানের হুঁশিয়ারি ও সেনার প্রস্তুতি

খাজা আসিফ স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে যে কোনো সন্ত্রাসী হামলা বা আত্মঘাতী বোমা হামলা ঘটালে, পাকিস্তান শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া জানাবে। তিনি বলেন, “যদি তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করা হয় এবং তারা আমাদের সীমান্ত লঙ্ঘন করে, তাহলে আমাদের আফগানিস্তানের গভীরে অভিযান চালাতে হবে।”

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান তালেবানকে পুরোপুরি দমন করার ক্ষমতা রাখে এবং তাদের গুহায় লুকিয়ে থাকতে বাধ্য করতে পারবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও সতর্ক করেছেন যে, তালেবান শাসনের প্রতি তাদের অসহিষ্ণুতা অব্যাহত থাকবে।

সীমান্ত সংঘাত ও সাম্প্রতিক ইতিহাস

২০২১ সালে কাবুলে তালেবানদের ক্ষমতা দখলের পর থেকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তে সহিংসতা বেড়েছে। বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তান প্রদেশে সন্ত্রাসী হামলার পরিমাণ অত্যন্ত বেশি।

পাকিস্তান পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম আট মাসে খাইবার পাখতুনখোয়ায় ৬০০টিরও বেশি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এই হামলায় কমপক্ষে ১৩৮ বেসামরিক নাগরিক এবং ৭৯ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। সীমান্তবর্তী এলাকায় সহিংসতা সর্বাধিক।

আফগান তালেবানের অবস্থান

আফগান সূত্র জানিয়েছে, তারা পাকিস্তানি তালেবানদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। আলোচনার সময় আফগান তালেবানদের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর সমাধানের আশ্বাস পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানের পক্ষ মনে করছে, আফগান নেতৃত্ব পাকিস্তানে হামলা চালানোর পেছনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দায়ী।

এ ঘটনায় উভয় দেশের মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়েছে এবং শান্তি আলোচনার ফলাফল শূন্য হয়েছে। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান উভয় পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করেছে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তানের হুঁশিয়ারি আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকায় উত্তেজনা বাড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের হুঁশিয়ারি সীমান্ত নিরাপত্তা ও শান্তি প্রক্রিয়াকে কঠিন করে তুলতে পারে।

আফগানিস্তানের সাধারণ জনগণ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা উদ্বিগ্ন যে, সীমান্তে আবারো তীব্র সংঘর্ষ দেখা দিতে পারে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে ভবিষ্যতে সহিংসতা পুনরায় বৃদ্ধি পেতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে চলমান সমস্যা মূলত আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতা গ্রহণ এবং পাকিস্তানি তালেবানদের কার্যক্রমের কারণে। পাকিস্তান এ অঞ্চলকে নিজেদের নিরাপত্তা জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল মনে করছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইস্তানবুল আলোচনার ব্যর্থতা এই অঞ্চলে সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে। পাকিস্তানের হুঁশিয়ারি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আফগানিস্তানের নেতৃত্বের প্রতি সতর্কবার্তা হিসেবে ধরা হচ্ছে।

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে পাকিস্তানের কঠোর হুঁশিয়ারি সীমান্ত নিরাপত্তা ও শান্তি প্রক্রিয়ার উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। পাকিস্তান যদি আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করে হামলার শিকার হয়, তাহলে তারা ‘আফগানিস্তানের গভীরে’ও প্রতিশোধ নিতে পারে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি সামরিক উত্তেজনা ও সীমান্ত সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়িয়েছে। প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, আফগান তালেবানরা কতটা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিভাবে এই উত্তেজনা কমাতে ভূমিকা রাখবে।

এম আর এম – ১৯৯৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button