আঞ্চলিক

ব্যবসায়ীকে বালুতে পুঁতে ৪ কোটি টাকা আদায়, হোটেল থেকে জনি গ্রেপ্তার

Advertisement

যশোরের অভয়নগর উপজেলায় এক ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ও বালুতে পুঁতে চার কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগে প্রধান আসামি আসাদুজ্জামান জনিকে খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথবাহিনী।

ঘটনা ও গ্রেপ্তার বিস্তারিত

যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুকে (টিপু) অপহরণ ও অর্থ লুণ্ঠনের মামলার মূল আসামি আসাদুজ্জামান জনিকে বুধবার রাতে খুলনার একটি হোটেল থেকে যৌথবাহিনী গ্রেপ্তার করেছে। অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আলিম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জনিকে আটক করা হয়।

মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, জনি ও তার সহযোগীরা ২ সেপ্টেম্বর সকালে টিপুকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে। এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে তাকে পুনরায় অপহরণ করে ‘কনা ইকো পার্ক’-এ নিয়ে গিয়ে বুক পর্যন্ত গর্ত খুঁড়ে বালুতে চাপা দিয়ে আরও দুই কোটি টাকা দাবি করা হয়। ভুক্তভোগী বাধ্য হয়ে ম্যানেজারের মাধ্যমে দুই কোটি টাকার চেক এবং কিছু স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দেন। কাউকে কিছু বললে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার পর টিপুকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

গ্রেপ্তারের পেছনের প্রসঙ্গ

মামলার এজাহার অনুযায়ী, ঘটনার ১৩ দিন পর যৌথবাহিনী জনিকে গ্রেপ্তার করে। এছাড়া, জনি এবং তার কয়েকজন সহযোগী দীর্ঘ সময় ধরে আত্মগোপনে ছিলেন। অভিযানের পর পুলিশ তার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে। জনির বিরুদ্ধে মাদক ও চাঁদাবাজিসহ আরও কিছু অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে।

জনি দীর্ঘদিন নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও, রাজনীতির পটপরিবর্তনের পর দলীয় বিশৃঙ্খলা এবং চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগের কারণে তার পদ স্থগিত করা হয়।

ভুক্তভোগীর বক্তব্য

টিপুর স্ত্রী আসমা খাতুন অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে প্রথমবার অস্ত্রের মুখে জিম্মি করার পরও কাউকে কিছু বললে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। তিনি উল্লেখ করেন, ঘটনার পর তার পরিবার আতঙ্কে ভুগছে। তিনি পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে মামলা দায়ের করেন এবং স্থানীয় সেনা ক্যাম্পেও অভিযোগ দাখিল করেন।

আইন প্রক্রিয়া ও তদন্ত

অভয়নগর থানায় ৩ আগস্ট জনিসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারের পর ঘটনার তদন্ত ত্বরান্বিত করা হবে। আসামিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও অপহরণের মতো অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।

প্রসঙ্গত, পুলিশ ইতিমধ্যেই কিছু সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া, তিনজন এখনও পলাতক রয়েছে। পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং যৌথবাহিনী এ বিষয়ে আরও তথ্য সরবরাহ করবে।

প্রভাব ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

এই ধরনের ঘটনার কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা লক্ষ্য করা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের চাঁদাবাজি ও অপহরণ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি না হলে স্থানীয় ব্যবসায় ও অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট

গ্রেপ্তারের পর আগামী দিনে অন্যান্য পলাতক আসামিদেরও ধরতে যৌথবাহিনী অভিযান চালাতে পারে। পাশাপাশি, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও তার পরিবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের সহযোগিতা আশা করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনাগুলি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার কার্যকারিতা প্রমাণের একটি সুযোগ।

সংক্ষিপ্তসার

যশোরে এক ব্যবসায়ীর জীবনের নিরাপত্তা এবং অর্থ লুণ্ঠনের ঘটনায় জনি গ্রেপ্তার হওয়া আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে মামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ, যাতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা কার্যকর হয় এবং স্থানীয় জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

এম আর এম – ০৮৬৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button