গাজায় উদ্ধার অভিযান শুরুর পর নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬২ হাজার

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজারেরও বেশি। গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ৬১ হাজার ৭০৯ জন নিহত হয়েছেন এবং কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, নিখোঁজ ব্যক্তিরা আর বেঁচে নেই। গাজার সরকার এই নিখোঁজদের মৃতদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। হামলায় ১ লাখ ১১ হাজার ৫৮৮ জন আহত হয়েছেন।
নিহতদের সংখ্যা ও পরিস্থিতি
গাজার তথ্য বিভাগের প্রধান সালামা মারুফ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, “ইসরায়েলের হামলায় নিহত ৭৬ শতাংশ ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে আনা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, প্রায় ১৪ হাজার ২২২ ফিলিস্তিনি এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন অথবা উদ্ধারকর্মীরা তাঁদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।
গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সালামা মারুফ সাংবাদিকদের বলেন, “নিহতদের মধ্যে ১৭ হাজার ৮৮১টি শিশু রয়েছে, যার মধ্যে ২১৪টি নবজাতক।” ইসরায়েলের আগ্রাসনে ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এঁদের একটি বড় অংশ মৌলিক সুবিধাবঞ্চিত হয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। অনেক বাড়িঘর এখন গোরস্তানে পরিণত হয়েছে।
হামাসের হামলা ও ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া
২০২৩ সালের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়, যার ফলে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়। হামাসের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় নির্বিচার হামলা চালায়। দেড় বছর ধরে চলা স্থল ও বিমান হামলায় গাজা এখন প্রায় বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে।
গত মাসে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়, যা আগামী মাসের শুরু পর্যন্ত চলবে। এই যুদ্ধবিরতির সুযোগে গাজার বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধার অভিযানে নেমেছেন ফিলিস্তিনি উদ্ধারকর্মীরা।
উদ্ধার অভিযান ও মানবিক পরিস্থিতি
গাজার আল-রশিদ স্ট্রিট থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক তারেক আবু আজম জানিয়েছেন, “মানবিক ও চিকিৎসার দায়িত্বে নিয়োজিত দলগুলো এখন উদ্ধার অভিযান রেখে পুনরুদ্ধারের কাজে নেমেছে।” তিনি বলেন, “শত শত বাড়ি কবরস্থানে পরিণত হয়েছে।”
সালামা মারুফ আরও জানান, “ইসরায়েল আগ্রাসন চালিয়ে ১ হাজার ১৫৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী, ২০৫ সাংবাদিক ও ১৯৪ বেসামরিক প্রতিরক্ষাকর্মীকে হত্যা করেছে।” এই পরিস্থিতি গাজার মানুষের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
গাজায় চলমান এই সংকট মানবিক বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। নিহতের সংখ্যা এবং আহতদের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই পরিস্থিতির দিকে নজর দেওয়া এবং মানবিক সহায়তা প্রদান করা। গাজার মানুষের জীবন রক্ষায় এবং তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।