বিশ্ব

আমরা যুদ্ধ থেকে বেঁচে গেছি কিন্তু এই ‘যুদ্ধবিরতি’ থেকে হয়তো বাঁচবো না

Advertisement

গাজা উপত্যকা দীর্ঘদিন ধরেই যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের মুখে। সম্প্রতি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হলেও বাস্তবে পরিস্থিতি এখনও বিপজ্জনক। ইসরায়েলি বাহিনী নিয়মিতভাবে হামলা চালাচ্ছে এবং মানুষরা এখনো নিরাপদ বোধ করতে পারছে না। স্থানীয়রা বলছেন, যুদ্ধবিরতির নামমাত্র অস্তিত্ব থাকলেও এটি মানুষের জীবনকে সত্যিকারের নিরাপত্তা দিতে সক্ষম নয়।

গাজার মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা এখনও ধ্বংসস্তূপে ঢেকে, আহত ও অনাহারগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ত্রাণ সরবরাহ অসম্পূর্ণ এবং রাস্তাঘাট নিরাপদ নয়, ফলে সাধারণ মানুষ আজও জীবন ও মৃত্যুর অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছে।

‘যুদ্ধবিরতি’র ভঙ্গুর বাস্তবতা

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও গত কয়েক দিনে গাজায় বহু বেসামরিক নিহত হয়েছে। স্থানীয় প্রতিবেদকরা জানাচ্ছেন, কিছু এলাকা যেমন আজ-জাওয়ায়দা এবং জেইতুন, সেখানে সাধারণ মানুষ সহ সশস্ত্র ছাড়া কেউ নিরাপদ নয়।

ইসরায়েলি ড্রোন হামলা, বিমানবোমা এবং গোলাবর্ষণ চলছেই। সম্প্রতি এক বিস্ফোরণে তিনজন নিহত এবং বহু আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা মনে করছেন, যুদ্ধবিরতি আসলে একটি ক্ষণিক বিরতি মাত্র, যা যে কোনো মুহূর্তে ভেঙে যেতে পারে।

স্থানীয়রা জানান, এই ক্ষণিকের ‘নিরাপত্তা’ মানুষকে বাড়ি ছাড়তে প্রলুব্ধ করে, কিন্তু বাস্তবে এটি মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। অনেকে বলেছেন, “আমরা যুদ্ধ থেকে বেঁচে গিয়েছি, কিন্তু এই যুদ্ধবিরতি থেকে হয়তো বাঁচবো না।”

মানবিক সংকট ও ত্রাণ ঘাটতি

যুদ্ধবিরতির মধ্যে ত্রাণ সরবরাহের সীমাবদ্ধতা এখনো বহাল। প্রতিদিনের খাদ্য, পানি ও ওষুধের চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ডব্লিউএফপি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা জানান, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও নির্ধারিত ট্রাকের মাত্র অর্ধেকই গাজায় পৌঁছেছে।

সীমান্ত বন্ধ এবং ইসরায়েলি সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের কারণে গাজার উত্তরাঞ্চল বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। মানুষের খাদ্যাভ্যাস, চিকিৎসা এবং শিক্ষার ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত। ত্রাণ সরবরাহ না হওয়ার কারণে মানুষকে নিজেদের খাবার সংগ্রহ করতে হয়। শিশু ও বয়স্কদের ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে।

ভয় ও আতঙ্কের জীবন

গাজার মানুষ এখন আতঙ্কে বসবাস করছে। প্রতিটি বিস্ফোরণ নতুন মৃত্যু এবং ধ্বংস নিয়ে আসে। মানুষরা রাস্তায় দৌড়ে নিরাপদ স্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। বাজারগুলোতে ভিড়, খাবারের জন্য হাহাকার এবং নিরাপত্তাহীনতা মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে।

স্থানীয়দের বক্তব্য, “আমাদের বাড়ি ধ্বংস হয়েছে, অথচ যুদ্ধবিরতি চলছে। আমরা জানি না আগামীকাল কী ঘটবে।” এ আতঙ্ক শুধু ফিজিক্যাল নয়, মানসিকভাবে মানুষের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলছে।

যুদ্ধবিরতির রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপট

যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বাস্তবে শর্তাবলী কার্যকর হচ্ছে না। ইসরায়েল নিয়মিতভাবে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে এবং হামাসের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। রাফা সীমান্ত বন্ধ থাকায় ত্রাণ সরবরাহ কার্যকরভাবে পৌঁছায়নি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলি ইসরায়েলের এই কর্মকাণ্ডকে সমালোচনা করেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, যুদ্ধবিরতি কেবল একটি ক্ষণস্থায়ী স্থিতি, যা যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। তাই সাধারণ মানুষ নিরাপদ বোধ করতে পারছে না।

আহত ও নিহতদের গল্প

সাম্প্রতিক এক হামলায় আবু শাবান পরিবারের ১১ সদস্য নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সাতটি শিশু এবং তিনজন নারী ছিলেন। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, পরিবারের সদস্যরা ধ্বংসস্তূপ থেকে নিজেদের বাড়ি খুঁজে বের করতে পারছেন না।

এছাড়া একাধিক ফিলিস্তিনি পরিবার ত্রাণ ও খাদ্য সংকটের মুখে পড়েছে। অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য এক এলাকার থেকে অন্য এলাকায় হাহাকার করছে।

গাজার মানুষ আজও মৃত্যুর এবং অমানবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি। যুদ্ধবিরতি এসেছে বলে মানবিক সহায়তা ও শান্তি ফিরে আসেনি। মানুষের জীবন এখনো ঝুঁকিপূর্ণ।

বিশ্ব সম্প্রদায়ের উচিত বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করে গাজার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। না হলে, এই যুদ্ধবিরতি কেবল ক্ষণিকের শান্তি এবং এক ধরণের নীরব হত্যাযজ্ঞের মধ্যবর্তী সময় হিসেবে থেকে যাবে।

মানুষ বেঁচে থাকলেও এই ‘যুদ্ধবিরতি’ থেকে বেঁচে থাকা এখনো অনিশ্চিত।

এম আর এম – ১৯৭৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button