বিশ্ব

সিরিয়ার সুরক্ষায় সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ ও ৫০টি এফ-১৬ মোতায়েনের পরিকল্পনা তুরস্কের

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে তুরস্কের সামরিক নীতিতে সাম্প্রতিক পরিবর্তন। সিরিয়ার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তুরস্ক অন্তত দুইটি সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে এবং ৫০টি আধুনিক এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইরানের সংবাদমাধ্যম মেহের নিউজের বরাতে এই তথ্য জানা গেছে।

তুরস্কের সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনা

তুরস্কের সংবাদমাধ্যম তুর্কিয়ে জানায়, আঙ্কারা সিরিয়ায় অন্তত দুইটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ করতে চায়। ঘাঁটি নির্মাণের লক্ষ্য হচ্ছে সিরিয়ার ভূখণ্ডকে সুরক্ষিত রাখা এবং যেকোনো বহিরাগত হুমকি প্রতিরোধ করা। এই ঘাঁটিগুলো থেকে সিরিয়ার ভেতরে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করা হবে।

এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েনের সিদ্ধান্ত

তুরস্কের পরিকল্পনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ৫০টি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান মোতায়েন করা। এই যুদ্ধবিমানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন কোম্পানির তৈরি, যা তুরস্ক স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করে থাকে। বর্তমানে তুরস্কের কাছে ২৩০ থেকে ২৭০টির মতো এফ-১৬ যুদ্ধবিমান রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের পর সর্বোচ্চ।

এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর মাধ্যমে তুরস্ক আকাশসীমার উপর নিয়ন্ত্রণ আরও দৃঢ় করতে চায়। এর মাধ্যমে আঙ্কারা যেকোনো সামরিক হুমকির তাৎক্ষণিক জবাব দিতে পারবে।

তুরস্ক-সিরিয়া যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তি

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, তুরস্ক ও সিরিয়া একটি যৌথ প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। এই চুক্তির অধীনে আঙ্কারা সিরিয়াকে সামরিক সহায়তা দেবে এবং যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় দামেস্কের পাশে থাকবে। পাশাপাশি, তুরস্কের সেনা বাহিনী সিরিয়ার সেনাসদস্যদের আধুনিক প্রশিক্ষণ দেবে।

ইসরায়েলের নতুন সেনাঘাঁটি নির্মাণ

অন্যদিকে, সিরিয়ার বাফার জোনের কাছে ইসরায়েল একটি নতুন সেনাঘাঁটি নির্মাণ করছে। এর আগে, সিরিয়ার ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রও কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেছে। এ ধরনের ঘাঁটি নির্মাণ মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্টের ভূমিকা

সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএসের নেতা আহমেদ আল-শারা। সম্প্রতি তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের আমন্ত্রণে আঙ্কারা সফরে যাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটি হবে তার প্রথম বিদেশ সফর। শারা জানিয়েছেন, তার প্রধান লক্ষ্য হলো শক্তিশালী সরকার গঠন এবং সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।

তিনি আরও বলেন, “শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা এখন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। সবাইকে একত্রিত করে আলোচনার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।”

উপসংহার

তুরস্কের এই সামরিক পদক্ষেপ সিরিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে নতুন মোড় দিতে পারে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। তুরস্কের এই সিদ্ধান্তের ফলে অঞ্চলটির স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button