বিশ্ব

কিম জং উনের সঙ্গে দেখা করতে চান ট্রাম্প

Advertisement

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি জানিয়েছেন, তিনি আসন্ন দক্ষিণ কোরিয়া সফরের সময় উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী। সোমবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “যদি কিম দেখা করতে চান, আমি দক্ষিণ কোরিয়ায় থাকব এবং তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে প্রস্তুত।” ট্রাম্প আরও উল্লেখ করেন, কিমের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং এ সম্পর্কের ভিত্তিতে তিনি যে কোনো সময় বৈঠকে অংশ নিতে ইচ্ছুক।

পূর্ববর্তী সাক্ষাৎ ও আলোচনার ইতিহাস

ট্রাম্প এবং কিম জং উন ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তিনবার বৈঠক করেছেন। প্রথমবারের মতো ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের sitting প্রেসিডেন্ট হিসেবে উত্তর কোরিয়ার সীমান্তবর্তী ডিমিলিটারাইজড জোনে (DMZ) কিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। বৈঠকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ, অর্থনৈতিক প্রণোদনা এবং নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যদিও কোনো চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

ট্রাম্প বলেন, “আমরা অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি, তবে এখনও একটি সমাধান হয়নি। আমি কেবল কিমের সঙ্গে দেখা করতে চাই এবং আলোচনার জন্য উন্মুক্ত।” কিমও সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন, তার ট্রাম্পের সঙ্গে এখনও ‘ভালো স্মৃতি’ আছে। তবে কিম জোর দিয়েছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগের বিষয়ে তার ‘অযৌক্তিক’ দাবি থেকে সরে আসতে হবে।

ট্রাম্পের সফরসূচি ও কিমের সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠক

ট্রাম্পের এশিয়া সফর মালয়েশিয়া থেকে শুরু হয়ে জাপান পর্যন্ত বিস্তৃত। সফরের অংশ হিসেবে তিনি বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছাবেন এবং প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং-এর সঙ্গে বৈঠক করবেন। একই দিনে এশিয়া-প্যাসিফিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা (এপেক) শীর্ষ সম্মেলনে তিনি বক্তব্য রাখবেন এবং নৈশভোজে অংশ নেবেন।

যদি কিম সাক্ষাতের জন্য রাজি হন, ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ায় সময় বাড়ানোর বিষয় বিবেচনা করতে প্রস্তুত। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “আমি এটা ভাবিনি, তবে মনে হচ্ছে কিম সাক্ষাতের জন্য উন্মুক্ত থাকবেন।”

পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ও উত্তরের প্রভাব

উত্তর কোরিয়া পূর্বেই জানিয়েছিল, তারা পারমাণবিক অবস্থান সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নেবে যদি যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান মেনে নেয়। কিম বলেন, তাদের পারমাণবিক অবস্থান অপরিবর্তনীয়। ট্রাম্প এই প্রেক্ষাপটে কোনো নির্দিষ্ট প্রস্তাবের কথা প্রকাশ করেননি, তিনি শুধু বৈঠকে অংশ নিতে উন্মুক্ততা প্রকাশ করেছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প-কিম বৈঠক কেবল দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে মসৃণ করবে না, বরং এশিয়ার সামরিক ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যেও প্রভাব ফেলতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের ঘোষণার পর বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও কূটনীতিকরা মন্তব্য করেছেন। তারা বলছেন, যদি এই বৈঠক বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি উত্তর-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং পারমাণবিক হুমকির মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ। তবে ট্রাম্পের পূর্বের পদক্ষেপ এবং কিমের শর্তাবলী বিবেচনায় বিষয়টি জটিল ও সংবেদনশীল।

চীন ও রাশিয়ার বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সংলাপকে সমর্থন জানিয়েছেন। এ ধরনের বৈঠক উত্তরের পারমাণবিক নীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়ক হবে বলে তারা উল্লেখ করেছেন।

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. কামরুল হাসান বলেন, “ট্রাম্প-কিম বৈঠক কেবল রাজনৈতিক প্রতীকী নয়, এটি বাস্তব কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ। বৈঠক সফল হলে উত্তরের পারমাণবিক সমস্যা সমাধানের দিকে একটি নতুন পথ খুলতে পারে।”

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, বৈঠকের ফলাফল নির্ভর করবে দুই দেশের অবস্থান, কিমের শর্তাবলী, এবং ট্রাম্প প্রশাসনের কূটনৈতিক সক্ষমতার ওপর। পাশাপাশি, বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে অবিশ্বাস দূর করার সম্ভাবনাও রয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহ কেবল দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে না, বরং পুরো এশিয়ার নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক ভারসাম্যকেও প্রভাবিত করবে। ট্রাম্পের সফর ও কিমের সম্ভাব্য বৈঠক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এবং সাধারণ জনগণের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশ করবে। ভবিষ্যতে এই বৈঠকের ফলাফল কী ধরনের কূটনৈতিক পরিবর্তন আনবে, তা পুরো বিশ্ব কৌতূহল ও নজর রাখছে।

এম আর এম – ১৯৭১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button