বিশ্ব

এবার পাক-আফগান সংঘাত ‘খুব দ্রুত সমাধানের’ দাবি ট্রাম্পের

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে বাড়তে থাকা সীমান্ত সংঘাত তিনি “খুব দ্রুত” সমাধান করবেন। মালয়েশিয়ায় আয়োজিত আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এবং সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে প্রশংসা করে বলেন, দুই দেশের মধ্যে চলা সংঘাত শান্তিক্রমে আনা সম্ভব এবং তিনি এ বিষয়ে ভূমিকা রাখবেন।

ইতিবাচক বক্তব্যের পাশাপাশি ট্রাম্প নিজস্ব প্রশাসনের ভূমিকার পুনরাবৃত্তি করে বলেন, তার নেতৃত্বাধীন সময়ে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি লড়াই বন্ধ হয়েছে এবং পাক-আফগান সংকটও দ্রুত মীমাংসার যোগ্য। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় তৎপরতার আশ্বাস দিলেও কৌশল ও সময়সূচি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাননি।

ঘটনা ও সরকারী ঘোষণা

মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে আসিয়ান সম্মেলনে অংশ নেবার সময় ট্রাম্প এসব মন্তব্য করেন। এর আগে সীমান্ত সংঘাতে পাকিস্তানি সেনা ও আফগান ফোর্সের মধ্যে তীব্রতা বেড়েছে; পাল্টাপাল্টি হামলায় দুপক্ষের দুর্ঘটনাযুক্ত ঘটনা সামনে এসেছে। দোহায় অনুষ্ঠিত আলোচনার পর যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ গৃহীত হলেও শেষক্ষণ পর্যন্ত উত্তেজনা থেকে যায়। ট্রাম্প ওই প্রেক্ষাপটে বলেন, তিনি আলোচনার গতি বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি স্থায়ী সমাধান আনতে চান।

পাক-আফগান সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরেই অশান্ততার সম্মুখীন। সীমান্তীয় এলাকায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, সীমান্ত রক্ষীদের সংঘর্ষ এবং রাজনৈতিক অবিশ্বাস বহু ঘটনার জায়গা হয়েছে। সাম্প্রতিক সংঘাতে পাকিস্তানি পক্ষ জানিয়েছে কয়েকজন সৈন্য নিহত হয়েছেন; অন্যদিকে আফগান তালেবান ও সহযোগী গোষ্ঠীরও বড় লোকহানি হওয়ার খবর এসেছে। এই সংঘাতের ফলে সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং আঞ্চলিক শরণার্থী ও মানবিক সমস্যা মুদ্রায় উঠেছে।

আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা বলছেন, এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক পুনর্মিলন, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ও কট্টরপন্থী গোষ্ঠীগুলোর নিবিষ্ট সমাধান জরুরি। এমন পরিস্থিতিতে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা কার্যকর হলেও তা নিরপেক্ষতা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের হঠাৎ উদ্যোগ ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণে রয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব। পাকিস্তান সরকার এবং সামরিক উচ্চকমানি ইতিমধ্যে ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছে এবং কুটনৈতিকভাবে কাজ চালানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আফগান পক্ষের প্রতিক্রিয়া সময়ের সহিত পরিবর্তিত হতে পারে; তবে স্থানীয় সূত্রে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে যে চ্যালেঞ্জ আছে তা অনস্বীকার্য।

এ অঞ্চলে অনিশ্চয়তা বাড়লে মানবিক সহায়তা ও সীমান্তব্যবস্থাপনায় জটিলতা তৈরি হতে পারে। প্রতিবেশী দেশগুলোর নিরাপত্তা ও অর্থনীতিও প্রভাবিত হতে পারে, বিশেষত সীমান্ত পার্শ্ববর্তী বাণিজ্য ও ক্যাপিটাল প্রবাহে। আন্তর্জাতিক মহলের মধ্যস্থতাও সংঘাত প্রশমনে ভূমিকা রাখতে পারে, তবে কোন বৃহৎ ক্ষমতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া কেবল কূটনৈতিক টানাপোড়েন সমাধান আনতে পারবেনা।

ট্রাম্পের ভূমিকা ও সম্ভাব্য কৌশল

ট্রাম্প চাইলে দ্রুত সমাধান আনার কথা বললেও বাস্তবে তা কতটা সম্ভব তা অনিশ্চিত। অতীতে তিনি বিভিন্ন বিরোধ নিষ্পত্তিতে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় ছিলেন; কিন্তু এখানকার জটিল ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি, স্থানীয় শক্তিসমূহের স্বার্থ ও আঞ্চলিক ক্ষমতার রোলে বিষয়টি সহজ নয়। ট্রাম্পের কৌশল হতে পারে রাজনৈতিক নেতা ও সেনাবাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে সরাসরি যোগাযোগ, নিরাপত্তা-প্রতিশ্রুতি ও অর্থনৈতিক সহায়তার প্যাকেজের মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি করা। তাছাড়া আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ ও গ্যারান্টি দিয়ে শান্তি প্রক্রিয়া মজবুত করা যুক্তিযুক্ত হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, শুধু নেতৃত্বের ঘোষণা বা কূটনৈতিক চাপ যথেষ্ট নয়; জোরালো মনিটরিং মেকানিজম, বিশ্বাসভিত্তিক অর্জনের ধাপগুলো এবং দূরত্ব কাটানো রাজনৈতিক সমঝোতা দরকার। স্থানীয় অংশীদারদের নিরাপত্তা আশ্বস্ত না করলে কোনো চুক্তি টিকে থাকবে না।

পরবর্তী ধাপ ও প্রত্যাশা

আসন্ন কয়েকদিনে দোহা আলোচনা ও মালয়েশিয়ায় তৎপরতাকে সামনে রেখে এলাকায় কূটনৈতিক গতিবেগ বাড়বে। ট্রাম্প যদি সরাসরি মধ্যস্থতা উদ্যোগ নেন, তাহলে দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সাথে তাত্ক্ষণিক সংলাপের ব্যবস্থা করা হতে পারে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা অবশ্যই প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

শেষত: সংঘাত প্রতিরোধে স্থায়ী শান্তি আনতে হলে কেবল এক ব্যক্তির প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়; স্থানীয় ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সাথে সমন্বিত কৌশল, বিশ্বাস পুনর্গঠন এবং দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সমাধান অপরিহার্য।

এম আর এম – ১৯৫১,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button